১) এই ব্লগে আমি একটু লেখালেখি করি, যদিও আজ কয়েক বছর আর নিয়মিত না। একজন সুপরিচিত পুরনো ব্লগার উইকিপিডিয়া থেকে হুবহু কপি করে উৎস উল্লেখ না করে পোস্ট দেয়ায় অন্য একজন ব্লগার প্রতিবাদ জানান। দোষী ব্লগার সহ বড় একটা অংশের ব্লগার এখানে এই অপরাধ কে অপরাধ হিসেবে দেখতে চান নি। তারা বরং ওই দোষী ব্লগারকে পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন। আর এতে উনিও উৎসাহ পেয়ে মজা নিয়েছেন।
২) ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আম্পায়ার এর ভুল/অন্যায় ডিসিশন এর বিরুদ্ধে একবার স্ট্যাম্প উপড়ে আরেকবার স্ট্যাম্প এ লাথি মেরে চুড়ান্ত অসভ্যতা করে তারপর ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু তার আবেগসর্বস্ব ভার্চুয়াল দুনিয়ার সমর্থকরা এটা কোনভাবেই মানতে পারছেন না যে, ট্যালেন্ট কেউ বা তাদের প্রিয় কেউ ভুল করতে পারে। এখন আমার তো মনে হয় সাকিব যদি নিজে তার এরকম অন্ধ সমর্থক এর সামনে এসে পড়ে, তাহলে এশ্রেণীর সমর্থক তাকেই উল্টো দু-ঘা লাগিয়ে দেবে, সে কেন ক্ষমা চাইছে তার জন্য।
৩) চলচ্চিত্রের একজন নারী শিল্পী শামসুন্নাহার স্মৃতি, যিনি পরিমনি নামে পরিচিত যৌননির্যাতন ও হত্যার হুমকির শিকার হয়ে ফেসবুকের শরনাপন্ন হয়ে দেয়া পোস্ট এ প্রায় তিন লক্ষাধিক রিএকশনের মধ্যে ৬৬ হাজার হাহা রিএকশন। মানে উনাকে ফলো করা প্রায় ২০ ভাগ মানুষ একজন মানুষের উপর হওয়া অন্যায় কে অন্যায় হিসেবে না দেখে তাকে হাস্যকর হিসেবে দেখছে।
এখন এই তিনটি ঘটনারই পরবর্তী প্রতিক্রিয়া কে আমরা একটু আতশি কাঁচের নিচে ফেলি?
প্রথম ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, উৎস উল্লেখ না করে লেখা চুরি/কপি করা/অন্যের লেখাকে নিজের নামে চালিয়ে দেয়াকে আমাদের অঞ্চলের মানুষ অপরাধ হিসেবে দেখেন না। কিন্তু বিশ্বের পরিমন্ডলে এধরণের অপরাধ কে খুবই নিকৃষ্ট মানের অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। এবং কেউ এধরণের অপরাধ করে ফেললে সে মাথাটা নিচু করেই রাখে।
দ্বিতীয় ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, যে ব্যাক্তি আইপিএল নামক জুয়ার আড্ডায় খেলার জন্য দেশের খেলা বাদ দেয়, আবার জুয়াড়িদের সাথে সম্পর্ক রাখা ও তথ্য পাচার করার অপরাধ স্বীকার করে খেলায় নিষিদ্ধ থাকে, প্রতিপক্ষ দলে বছরের পর বছর আম্পায়ারিং এর সুবিধা নিয়ে খেলে এবার বিপক্ষে ডিসিশন যাওয়ায় লাথিতে প্রতিবাদ জানান, তার নৈতিকতার মান কি? আর যারা অন্য বড় অপরাধ এর প্রতিবাদে একটা অসভ্যতা কে জায়েজ করছেন তাদেরইবা নৈতিকতার মান কি? তাদের কাছে প্রশ্ন, দেশের মান কেউ উজ্জ্বল করলে তার বাকী সব অপরাধ কি পার পেয়ে যায়?
আর তৃতীয় ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, কোন ব্যাক্তির উপর হওয়া শারীরিক নির্যাতন বা ধর্ষন বা হত্যার মতো ঘটনা সমাজের একটা বড় অংশের কাছে গুরুত্ব রাখে না, যদি ঘটনার শিকার ব্যাক্তি নারী হয় বা মিডিয়ার অভিনয় করা কেউ হয় বা তার চরিত্রের উপর কোন 'কিন্তু' আরোপ করা যায়। এখানে একটা তথ্য দিচ্ছি, ঘটনার শিকার ব্যাক্তির এফবি আইডিকে ফলো করে ১ কোটি ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ, যারা তার মিডিয়া এক্টিভিটিতে ব্যাক্তিগতভাবে আমোদিত হন, বিনোদিত হন, পুলকিত হন অথচ সব শেষ করে আবার তাকে গালাগালিও করেন। তাই তার উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের চেয়েও তার ব্যাক্তিগত চরিত্রই তাদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে থাকে। আর তার কাজের সহযাত্রী হলেও তারা এক একজন আপাদমস্তক ধার্মিক!
আর যতই আমরা যে বলি সবাই ধর্ম,বর্ণ,গোত্র,নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষ সমান, তা মানতে আমাদের বড় একটা অংশই রাজি না।
উপরোক্ত তিনটি ঘটনা পরবর্তী প্রায় সম প্রতিক্রিয়ায় আমরা কি এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে সততা, নৈতিকতা, মানবতা,ধার্মিকতা আমাদের এই ভুখন্ডে কন্ডিশনাল? আমরা আমাদের নিজের স্বার্থানুযায়ী/মতানুযায়ী/গোষ্ঠিঅনুযায়ী খারাপ ভালো নির্ধারন করি, কিন্তু ইউনিভার্সেলি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সততা-অসততা, ভালো-মন্দ, সাদা-কালোর একটাই রূপ হবার কথা ছিলো। অথচ তা এই ভুখন্ডে এসে পথ হারিয়ে ফেলেছে, যদিও আমরা আমাদের ঘোষনা অনুযায়ী ৯০% ই ধার্মিক।