নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে শুরু হওয়া মিয়ানমারের রাখাইন (পুর্বনাম আরাকান) প্রদেশের রোহিঙ্গা-রাখাইন দাঙ্গার প্রেক্ষিতে ১৯৯২ সালের দিকে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে ৫ লাখের মত রোহিঙ্গা জনগোস্ঠির অাগমন ঘটে, যাদের মধ্যে ২ লাখের মত জিটুজি চুক্তির ভিত্তিতে ফেরতও যায়। বাকী ৩ লক্ষের মত বাংলাদেশেরই কক্সবাজারে থেকে যায়। ২য় বারের মত ২০১২ সালের দাঙ্গার প্রেক্ষিতে আর ৩য় বারের মত ২০১৬ সালের অক্টোবরের দাঙ্গায়ও হাজারো রোহিঙ্গা জনগোস্ঠি বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। আর সর্বশেষ গত কয়েকদিনের রাখাইন রাজ্যের ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সীমান্ত অতিক্রম করেছে। আরও হাজার হাজার সীমান্ত অতিক্রমের অপেক্ষায়। পূর্বঘটনার অভিজ্ঞতার অালোকে নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর মনোভাবের কারনে ২০১২ সালের পরিকল্পিত দাঙ্গা সৃস্টি করেও খুব বেশী লাভবান সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি হতে পারেনি। তবে আবারও নতুন করে বিষয়টিকে প্রকটাকার ধারন করানোর চেষ্টা চলছে। লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাবো বারবারই একই পরিস্থিতির সৃস্টি করে এই হতভাগ্য জনগোষ্ঠিকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
অান্তর্জাতিক মিডিয়া মারফত সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সীমান্তচৌকিতে জঙ্গিদের হামলার জের ধরে সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ কমপক্ষে ৮৯ জন নিহত হয়েছে, এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যাই ১২ । জঙ্গীদের হামলা ও নিরাপত্তাবাহিনীর পাল্টা ব্যাবস্থা গ্রহনের ফলে জীবন বাঁচাতে এরই মধ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। এরই মধ্যে ১৪৬ জনকে ফেরতও পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।
ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মুখে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন একটি কমিশন রাখাইন রাজ্যের ভবিষ্যত উন্নয়ন বিষয়ক চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এধরনের সংঘর্ষের ঘটনা কোনমতেই এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। দ্য আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি নামের একটি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং আরও হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের আইএস এর অস্র ও অর্থের উৎস যদি আমরা বুঝতে পারি, তাহলে রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির অস্র ও অর্থের উৎসও অামরা বুঝবো। রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সেনা মোতায়েনের পর থেকে সম্ভাব্য অভিযান থেকে নিরীহ জনসাধারণকে সুরক্ষার স্বার্থে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চলতি সপ্তাহে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই উদ্যোগে সাড়া না দিয়ে বরং নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করাতেই বেশী আগ্রহী।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুটির সৃষ্টিই হয়েছেলো পশ্চিমা স্বার্থেরই অংশ হিসেবে, যা আমাদের দেশকেও এক কঠিন পরিস্থিতির সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে । সেই স্বার্থেরই একটা ছকের অংশ হলো পরিকল্পিত রোহিঙ্গা-রাখাইন দাঙ্গা, সেটা দিন যতই গেছে ততই সবার কাছে পরিষ্কার হয়েছে। আর এই স্বার্থেরই বলি হলো হতভাগ্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি, যাদেরকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যাবহার করে দুটি দেশ বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে জটিল এক অবস্থার মাঝে এনে দাঁড় করানো গেছে। এই অঞ্চলে চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান আর্থিক ও সামরিক সক্ষমতা পশ্চিমা স্বার্থের জন্য হুমকি সরুপ সেটা অনেক আগেই তাদের থিংক ট্যাংকরা অনুধাবন করেছিলো। তবে চীনকে নিয়ে তাদের যতটা মাথাব্যাথা, ততটা ভারতকে নিয়ে নয়। অার স্বার্থ থেকে উদ্ভুত মার্কিন-ভারত স্বল্পস্থায়ী বন্ধুত্ব কতদিন স্থায়ী হয় তা সময়ই বলে দিবে।
চীনের আর্থিক ও সামরিক অগ্রগতিকে ঠেকাতে না পারলে বিশ্বে বড় একটি দেশেল প্রভাব অনেকটাই হ্রাস পাবে সেটা তাদের নীতিনির্ধারকরা ভালকরেই জানে। আর তাই মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তারা দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলে হস্তক্ষেপ শুরু করে দিয়েছে। তাদের উন্নত কুটনৈতিক নীতি এবং চতুরতার মাধ্যমে তারা এই অঞ্চলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্ম দেয়ার চেষ্টা অনেকদিন থেকেই চালিয়ে যাচ্ছিলো, যার মাধ্যমে চীন এবং ভারতের বর্তমান সময়ের ক্রম-উন্নতির ধারা কিছুটা হলেও স্লথ করে দেয়া যাবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের গুরুত্ব বেড়েছে তাদের কাছে। তাই এ অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশসমুহে বিশেষ করে বাংলাদেশ ও মায়ানমারে কোন অভ্যন্তরীন সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অথবা কুটনৈতিকভাবে পশ্চিমা একটি দেশ ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে তাদের সামরিক অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একথা সর্বজনবিদীত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেই থাকুন না কেনো, তা দিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক পলিসি কখনো ঠিক হয়না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের নির্বাচন মার্কিন বিদেশনীতিতে তাৎক্ষনীকভাব মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে কিছুটা ধাক্কা দিলেও তা আগের রাস্তায়ই নতুন করেই চলমান। যেকোন ফ্রন্টে খেলার জন্য তাদের অনেকগুলো পথই সর্বদা খোলা থাকে।
কোন দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিই হলো জ্বালানী। আর তাই চীনের জ্বালানী সরবরাহের রুটকে নিরাপদ রাখার জন্য এবং সুবিধা জনক করার জন্য "স্ট্রিং অব পার্ল" নামক একটি ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে মিয়ানমার এবং পাকিস্তান তার ভুখন্ড চীনকে ব্যবহার করতে দেয় তার জ্বালানী সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য। বাংলাদেশও ভবিষ্যতে এ প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে, সেজন্য চীন যথেস্টরকম আগ্রহী যাতে চীন এবং বাংলাদেশ উভয়েই লাভবান হবে। কিন্তু চীনের এই কর্মপন্থা একটি পরাশক্তির স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। তাই তাদের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে চীনের জ্বালানী সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করা। মায়ানমার যেহেতু ঐতিহাসিকভাবেই চীনের মিত্র, তাই সেখানে তারা সহজে হাত বাড়াতে পারেনি। তবে ইদানিং বহুজাতিক তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলির ব্যাপক বিনিয়োগ তাদেরকে মায়ানমারের আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের যথেস্ট সুযোগ করে দিচ্ছে। আর বাংলাদেশতো বিদেশীদের সহজ টার্গেট সবসময়ের জন্য । এদেশের রাজনীতিকরাই আগবাড়িয়ে তাদেরকে সে সুযোগ করে দেয় সর্বদাই।
আর মায়ানমারের অং সান সুচিকে তো গনতন্ত্রের জামা পরিয়ে এরাই তৈরী করেছিলো বহুদিন থেকেই। মায়ানমারের গনতান্ত্রিক অং সান সুচি'র চাইতে সামরিকজান্তাই যে আমাদের দেশের জন্য বেশী ভাল ছিলো তা অল্পদিনেই আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি। গনতান্ত্রিক সুচিযে একটা যান্ত্রিক পুতুল তা নতুন করে বলাটাও অর্থহীন। মাঝে দিয়ে অসহায় ও শিক্ষাদিক্ষাহীন বর্বর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি ধ্বংশের মুখে প্রায়।
এপরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে কুটনৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে চাপে রাখাই বিশ্বের বড় একটি পরাশক্তির নীতি। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ইস্যু, গার্মেন্টস শিল্পের চরম অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস প্রবেশে বিষয়ে তৎকালীন রাস্ট্রদুত ড্যান মজিনার হুমকি, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলা, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদুতের খুন হওয়া এই সবগুলিই ছিলো একই সুত্রে বাঁধা । ভারতের পরোক্ষ সহযোগীতায় তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিলো। আর তাই নির্বাচনের পরপরই চীনের ও রাশিয়ার পজিটিভ প্রতিক্রিয়া কঠিন পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য ব্যাপক আশির্বাদ হয়ে এসেছিলো। আসলে বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের আগ্রহ বহুদিনের। এই কারনেই চট্টগ্রাম অঞ্চলটাও তাদের জন্য খুবই আকর্ষনীয়। এরই অংশ হিসেবে তাদের নজর চট্টগ্রাম পোর্টের দিকে। কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপনের প্রস্তাবও ছিলো তাদের বহুদিনের অাগ্রহে। এখানে যদি কোনভাবে সে ঢুকতে পারে তাহলে চীনকে সে ঘাঁড়ের উপর বসে চোখ রাঙ্গাতে পারবে।
আর পার্বত্য সমস্যাটি স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ যথেষ্ট মাথাব্যাথার কারন, যা ১৯৯৮ সালের শান্তিচুক্তির পর কিছুটা স্তিমিতই ছিলো। তবে বাংলাদেশের স্থানীয় মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারাতো নিজেদের সবকিছু সাম্রাজ্যবাদীদের চরণে সঁপে অনেক আগেই বসে আছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার প্রয়োজন হলে পশ্চিমাদের হাতের ইশারাতেই ক্ষণে ক্ষণে এঁরা সক্রিয় হয়ে উঠেন এটা বিভিন্নসময়ই প্রমান হয়েছে। প্রচার মাধ্যম জমিয়ে রাখতেও এদের তুলনা নেই, কেননা মানবাধিকারের বুলিটা সবসময়ই চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষনীয়।
আর পার্বত্যসমস্যার সাথে নতুন করে রোহিংগা সমস্যা যোগ করে পুরো চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক সুতোয় বাঁধা কোন কঠিন কাজ নয় মোটেও। ভারত এক্ষেত্রে নিজের এবং তাদের বন্ধুদেশের স্বার্থের কারনে সবসময়ই একপায়ে খাড়া। তাছাড়া চীনের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনাটাকে ভারত ভালভাবে নেয়নি, সেটাকে চেক দিতেই মায়ানমারের সাথে সে সামরিক সহযোগীতা বাড়ানোর দিকে মনযোগ দিয়ে শেখ হাসিনাকে চাপে ফেলাটাও তারা ভালভাবেই করেছে। রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলেছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের সামাজিক অস্থিরতার মূল কারনই হয়ে গেছে এই রোহিঙ্গারা। ইতোপূর্বে বাংলাদেশে এসে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কয়েক লক্ষ, এর সাথে আরও কয়েকলক্ষকে যদি কোনভাবে এনে এদেশে ঢোকানো যায় তাহলে তাদের প্ল্যান কার্যকর করতে খুব বেশী বেগ পেতে হবে না। এক্ষেত্রে ২০১২ সালের দাঙ্গার প্রেক্ষিতে সেই সময়ই এই ব্লগে সহব্লগার অনিক আহসান তাৎপর্যপূর্ন একটি কথা বলেছিলেন - "পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অনেক বড় কু-পরিকল্পনা আছে। আমার মনে হয় রোহিঙ্গাদের থাকতে দিলে ঝামেলা বেশি হবে। ক্ষুধার্ত পেট ধর্ম বুঝে না বুঝে ভাত। রোহিঙ্গাদের খৃস্টান মিশনারীদের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করে ১০ বছরের মধ্যই কক্সবাজার এর আশেপাশে একটা সাইজেবল খৃস্টান জনগোস্টি তৈরি করা সম্ভব। তারপর পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি খৃস্টান ও কক্সবাজার এর রোহিঙ্গাদের মিলে একটা পুর্ব তিমুর না হয় দক্ষিন সুদান। কারন যে পরিমান মার্কিন ও পশ্চিমা বিনিয়োগ মায়ানমারের তেল গ্যাস ক্ষেত্রে হয়েছে, তা পাহারা দেয়ার জন্য একটা ব্যানানা স্টেট পশ্চিমাদের খুবই দরকার।" চট্টগ্রাম অঞ্চলকে কেটে এই ধরনের ব্যানানা স্টেট তৈরী করা খুব বেশীকি কঠিন হবে পশ্চিমাদের জন্য, যেখানে আমাদের দেশের ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয় এদেশে যেমন তিতুমীর, ঈসাখাঁ, সুর্য্যসেন, ভাষানী, মুজিব জন্ম নিয়েছে ঠিক তেমনই এদেশেই মীরজাফর, নাজিমুদ্দিন, গোলাম আজম, খন্দকার মোস্তাকদেরও জন্ম হয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলির স্বার্থ সংরক্ষন করাই হল বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত নিউজ মিডিয়া এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের মূল কাজ। বিবিসি, সিএনএন অথবা ভয়েস অব আমেরিকা'ই হল আমাদের মত গরিব দেশগুলির খবরের মূল উৎস। তাই বিবিসি, সিএনএন যাই বলুক না কেন বাকিরা তার সাথেই ঠোঁট মিলায়। দুঃখজনক ব্যপার হল আমাদের মত তৃতীয়বিশ্বের দেশগুলির মিডিয়াও তাদেরই স্বার্থেরই বর্ধিত প্রান্ত। বিশ্বের দুর্বল দেশগুলিতে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পশ্চিমারা এসব সংবাদ মাধ্যম এবং তথাকথিত মানাবাধিকার সংগঠনগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
"ইউএনএইচসিআর" এবং "হিউম্যান রাইটস ওয়াচ" এধরনেরই সংস্থা। এক্ষেত্রে "ইউএনএইচসিআর" এর গায়ে জাতিসংঘের লেবাসটা আছে শুধু। এই দুটি সংস্থার কার্যক্রম ও আচরন অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বব্যাপি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে ও দিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলি যে বিশ্বের বড় দেশগুলির হাতের পুতুল তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বরাজনীতি ও ভূরাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে এদের যে সুদুরপ্রসারি কার্যক্রম আছে তা অনেকেই অবগত। এদের পূর্বের অনেক কার্যক্রমই প্রশ্নবিদ্ধ।
কয়েকদিনের মাঝেই অামরা দেখতে পাবো, প্রথমেই "হিউম্যান রাইটস ওয়াচ" রোহিঙ্গাদের বিনাবাধায় বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রমের সুযোগ দানের আবেদন জানাতে। এর কিছুদিনের মধ্যেই "ইউএনএইচসিআর" ও মিনমিনে গলায় তাদের সাথে সুর মিলাবে। আর আমাদের দেশের মানবাধিকারের সওদাগররাও তাদের সাথে কোরাস ধরবে। তাদের দেখাদেখি আমজনতার একাংশও হায় হায় করে উঠবে। কিন্তু যতই অসহায় রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের ভালোবাসা থাকুক না কেনো, নিজেকে ধ্বংশ করে দিয়ে সেই ভালোবাসা দেখাতে যাওয়া আত্বহত্যার সামিল। ১৬ কোটি মানুষের এই আবাসভূমি কতটুকু বিপদের দিকে এগিয়ে যাবে এই মানুষগুলিকে এই দেশে আসতে দিলে তা স্বল্পদৃষ্টিতে দেখার স্বক্ষমতা এদেশের বেশীরভাগেরই নেই। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সামাজিক অসঙ্গতির কেন্দ্রেওযে এই রোহিঙ্গা ইস্যু তা নীতিনির্ধারকরা ভালমতই অবগত।
"ইউএনএইচসিআর" এর কারনেই রোহিঙ্গা সমস্যার আজ এতবছর পরেও সমাধান বাংলাদেশ করতে পারেনি। তারা এই সমস্যাকে তাদের প্রয়োজনেই জিইয়ে রেখেছে। বাংলাদেশকে এখন নিজের স্বার্থেই কঠোর হতে হবে "ইউএনএইচসিআর" এর ব্যাপারে। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করে আক্রমনের মুখে থাকা বর্তমান সরকারের সেই সক্ষমতা কতটা আছে তা সামনের দিনগুলিতে দেখা যাবে। তবে গত কয়েক বছরে বর্তমান রাজনৈতিক সরকার এই বিষয়ে যথেষ্টই সজাগ তা তাদের কাজকর্মেই ফুটে উঠছে। আজ তাই দলগত বা গোষ্ঠিগত স্বার্থচিন্তা ত্যাগ করে দেশটাকে অখন্ড ও শান্তিপূর্ন রাখার স্বার্থে সকলপক্ষের একমত হতে হবে। কারন সবাইকে বুঝতে হবে দেশটার অস্তিত্বই যদি না থাকে তাহলে সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়বে। এজন্য সবার আগে সাধারন মানুষকে সচেতন হতে হবে, তারপরই রাজনৈতিক সকল পক্ষকে সাথে পাওয়া যাবে। আর পার্বত্যসমস্যার শুরু থেকেই আমাদের সেনাবাহিনী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদেরকে আরও বেশী করে পার্বত্যইস্যুর সাথে জড়িত করতে হবে সুদুরপ্রসারি চিন্তা থেকে। আর নৌবাহিনীকে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করা এখন সময়েরই দাবী। কেননা শান্তি বজায় রাখার জন্য বিচক্ষন রাজনৈতিক শক্তির সাথে সামরিক শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বর্তমান কঠিন বাস্তবতায় বাংলাদেশকে কুটনৈতিক ফ্রন্টে বেশী সক্রিয় হতে হবে এই ইস্যুতে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে যথেস্ট ম্যাচুরিটি প্রদর্শন করতে হবে।
পূর্বের ঘটনাবলীর মতই নিকট ভবিষ্যতে আরও অনেক ঘটনার সম্মুখিন আমরা হবো। অনেক ক্যালকুলেশন অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে সেটা ভুলে থাকার সুযোগ নেই। এমনকি একই ঘটনা বারবারই ঘটানোরও চেষ্টা করা হবে সময় সুযোগ বুঝে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৮