১) আড়ংএর একটা শাখায় গিয়েছি বড় আম্মুটাকে সাথে নিয়ে তার জন্য কিছু কেনাকাটার জন্য। পছন্দ করে নিয়ে কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছি বিল পেমেন্ট ইস্যুতে। লাইন একটু বড় হওয়ায় সময় লাগছে। সে অস্থিরভাবে একবার এটা আবার ওটা ধরছে। হালকা করে বললাম, মামনি আমার পাশে এসে দাঁড়াও। আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে একবার আমাকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরছে, আবার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরছে। বকা দিলে নাক ধরে টানছে, আবার হালকা চিমটি দিচ্ছে। আমি না পেরে বললাম -
- মামণি, সবাইতো তোমাকে দেখছে, তুমিযে এমন করছো, সবাইেতো তোমাকে স্পেশাল চাইল্ড ভাববে।
- সবাই যা খুশি ভাবুক, তাতে আমার কি ? আমার যা খুশি আমি করছি, তাতে তাদেরকি ? তাদের নিয়েতো আমি ভাবছি না।
আমরা বড় হয়েছি, পাছে লোকে কিছু বলে ভেবে, আর আমাদের বাচ্চারা বড় হচ্ছে, পারিপার্শিকতাকে উপেক্ষা করে নিজের মত করে।
২) আড়ংএর কাজ সেরে বাসায় ফিরছি, কাকরাইল চার্চের সামনে আসার পরই ও পাশ থেকে বলে উঠলো-
- বাবা এটা কেন লিখেছে?
- কি লিখেছে ?
- এই যে লিখেছে নীতি ও আদর্শ কখনো মরে না
- হ্যাঁ মরে নাতো। ভুলটা কোথায় ?
- না কে বলে মরে না ? এই যে আমরা মরে গেলেই এখানকার সবকিছু অন্যরকম হয়ে যাবে। যারা নতুন করে আসবে তারা সবকিছু তাদের মত করে সাজাবে।এখানকার বিল্ডিং, রাস্তা সব অন্যরকমভা্বে সাজানো হবে....
- সুন্দর বলছো, আরো বলোতো মা.....
- যেমন এখন শেখ হাসিনা আছেন, তিনি তারমত দেশ চালাচ্ছেন, তাঁর পর যে আসবে, সে আবার সব পাল্টে ফেলে তার মত চালাবেনা বল ?
আমি ২য় শ্রেণীতে পড়ুয়া ৮ বছরের বুড়ির চিন্তার গভীরতা দেখে হতবাক। আমাদের বাচ্চাদের চিন্তার গভীরতা আমাদের চাইতে অনেক অনেক বেশী।
৩) এবার ছোট বুড়ির কথায় আসি। সকালে অফিস যাবার সময় আমাকে প্রতিদিন চশমা, মানিব্যাগ, মোবাইল তার ঠিক করে দিতেই হবে। তাড়াহুড়া করে যদি কখনও নিজে এগুলি পকেটে ঢুকিয়ে ফেলি, তার চিৎকারে পুরো বাসা মাথায় উঠবে। তাই আমি পারতপক্ষে রেডি হয়ে এগুলি তার জন্য বাকি রাখি। আজ সব পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েই বলল -
- বাবা তুমি অফিসে যেও না। আমি তোমার সাথে থাকবো
- না বাবা, অফিস না গেলে বস বকা দিবে।
- না বাবা, তুমি আজ যেও না প্লিজ। তোমার জন্য আমার টেনশন হয়।
- কেন বাবা টেনশন হয় ?
- তুমি কোথায় থাক, কি কর সেগুলো মনে হয় ...........
- আসার সময় চিপস নিয়ে আসবো, ঠিকাছে আম্মু, উম্-মা।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কথা ঘুরিয়ে, তন্বী তোমার ছোট মেয়ে কি বলে শোন, দরজা আটকাও।
(কৈফিয়ত: এই আত্মজা সিরিজ আকারে লিখার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু ১ম পর্ব দেবার পর পারিপার্শিকতার কারনে আর কোন পর্ব দেয়া হয়নি। আজই হঠাৎ মনে হলো ছোট ছোট ঘটনাগুলি যদি অক্ষরাকারে সেভ না করে রাখি তাহলে সবই হারিয়ে যাবে, অন্ততঃ আমার স্মৃতির মনিকোঠা থেকে। তাই লিখতে বসা। তাছাড়া অনেকদিন হয়ে গেলো ব্লগে আসাই হয়ে উঠেনা। আসলেও অফলাইনে এসে ঘুরে যাই।)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৬