(ছবি Google হতে সংগ্রহীত)
আজ Cesar Kuriyama নামের এক মজার মানুষের সাথে পরিচিত হলাম। Cesar Kuriyama আমেরিকান বিজ্ঞাপন নির্মাতা। লোকটাকে আমাকে এই কারণে ভালো লেগেছে যে সে তার প্রফেশনের ফাকেঁ নিজের জন্য এবং নিজের ফ্যামিলির জন্য কিছু করে।সামথিং ডিফারেন্ট! Cesar Kuriyama'র একটা প্রজেক্ট আছে তা হলো প্রতিদিন ১সেকেন্ড করে তার সেরা মুহুর্ত ক্যামেরা বন্দি করা আর তা ক্রমানুযায়ী সাজানো। ব্যাপারটা কষ্টসাধ্য কারণ দিনে শুধু একটাই সেরা মুহুর্ত থাকে না আবার সেটা কয়েক সেকেন্ডেরও হতে পারে। তিনি বলেন তার বয়স যখন ৮০বছর হবে তখন তার ভিডিও হবে প্রায় ৪/৫ ঘন্টার মতো। আইডিয়াটা আমার বিসম্ভব রকমের ভালো লাগছে। সপ্তাহ খানেক আগেরই সেরা মুহূর্ত রোমন্থন করে যে সুখ পাওয়া যায় আর তা যদি মৃত্যুমুখে গিয়ে মুভির মতো ৪/৫ঘন্টা পপকর্ণ খাইতে খাইতে দেখি আর ভাবি যে আয় দুনিয়া টা কতই না সুন্দর, মরার আগে কত আনন্দই না উপভোগ করছি তখন না মৃত্যুভয় থাকবে না মৃত্যুযন্ত্রণা। "হাসতে হাসতে কমু আয় আজরাইল নিয়া যা মোর মুভি দেখা শ্যাষ।"
এটি আমার গত ৫সেপ্টেম্ববরের ফেসবুক স্ট্যাটাস। Cesar Kuriyama প্রজেক্ট সম্পর্কে জেনে আমি দারুণভাবে অনুপ্রেরিত হয়েছি। সবার অনুপ্রেরণার মূলে একটাই প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় অনুপ্রেরণা পাব কোথা থেকে। কেউ দেখে অনুপ্রেরিত হয় আবার কেউ শুনে। যার বোধ শক্তি একটু ভালো তাকে অন্যে কোনো ঘটনা নাড়া দেয় সেই থেকে তার প্রেরণা কিন্তু যে একটু দুর্বল সে কোথা থেকে পাবে। তার হয়তবা একটু সময় লাগবে অথবা জ্ঞানীগুণীদের জীবনী থেকে অনুপ্রেরিত হবে।
জ্ঞানীগুণীরা তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে ভাগাভাগি করেন এই ভেবে যে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা উপলব্ধি করে যেন আমাদের কিছুটা হলেও উপকার হয়। তাদের অটোবায়োগ্রাফিতে অনেকে তাদের উদ্দেশ্য লিখেও দেন। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে আমাদের কতটুকু উপকারে আসে তাদের তথ্যবহুল অভিজ্ঞতা(?) কেউ তাদের লেখার ভঙ্গি দেখে মুগ্ধ হন আবার কেউ তাদের গল্পের প্লট পড়ে। কেউ কেউ আবার সত্যিই তাদের থেকে অনুপ্রেরিত হন।
(ছবি Google হতে সংগ্রহীত)
ছোটবেলায় আমরা সবাই সুনির্মল বসু'র একটা কবিতা পড়েছি "বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র।" আমরা সবাই আমাদের পরিবেশ, সমাজ, জড়-জীব সবকিছু থেকেই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ সবভাবেই শিখছি জানছি। এমনকি যাদের নিয়ে বলছিলাম জ্ঞানীগুণীরা তারাও সব সময় বলেন, তারা কোনো একজন থেকে বা কয়েকজন থেকে অনুপ্রেরিত হন নি। বরং সমাজের প্রতিটি স্তরের সকল পেশাজীবী মানুষ, পশুপাখি, জড়পদার্থ থেকে অনুপ্রেরিত হয়েছেন।
বিখ্যাত ভারতীয় অভিনয়শিল্পী অমিতাভ বচ্চন অনুপ্রেরণা নিয়ে বলতে গিয়ে একবার বলেছিলেন যে তিনি নাকি পিপড়া থেকেও নাকি অনুপ্রেরিত হয়েছেন। তার একটি কবিতা সংযোজন করা হলো।
"নানহি চিটি যাব দানা লেকার চালতি হে
চাড়তি দিবারো পার শাও বার ফিসালতি হে,
মান কি বিশ্বাস রাগো মে শ্বাস ভারতা হে
চাড় কার গিরনা গির কার চারনা না আখারতা হে,
আখির উস্কা মেহনত বেকার নাহি হোতি
কোসিস কার ওয়ালো কি হার নাহি হোতি।"
(অনেক চেষ্টা করলাম সঠিকভাবে অনুবাদ করতে পারলাম না, নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়েন)
উপরে বলছিলাম একটা নিজে থেকে আরেকটা অন্যের দেয়া অনুপ্রেরণার কথা। দেখুন আজ থেকে যদি এক-দেড়শ বছর পিছনে তাকাই আর চিন্তা করি টমাস আলভা এডিশন যদি বাতি আবিষ্কার না করতেন বা নিকোলা টেসলা যদি এসি কারেন্টের অস্তিত্ব না খুঁজে পেতেন কিংবা তারাঁ এসবেরই অস্তিত্ব পাওয়ার পরেও যদি নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখতেন তবে কি আজকের দিনে এনার্জি বালব কিংবা পারমানবিক বিদ্যুৎ সহজে পেতাম ? তাদের প্যাটেন ধরেই আজ আমরা এ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছি।
(ছবি Google হতে সংগ্রহীত)
আমরা যদি নিজের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর মৌলিক ভাবনা অন্যের সাথে ভাগাভাগি করি তবে প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে আমাদের নিজেদেরই লাভ। হয়ত আজকে না কয়েক দশক পর আপনার ভাবনা নিয়ে কেউ গবেষণা করবে যা দাড়া সমগ্র মানবজাতির উপকার হবে। আপনার মস্তিষ্কে আজকে যে ভাবনাগুলো নিয়ে খেলা করছে হতেও পারে তা আজ অব্দি কারো চিন্তায় আসে নাই। এটাও হতে পারে আগামী ৫, ১০, ২০ কিংবা ৫০ বছরেও আসবে না। হতেও তো পারে।
এখন আসি আমি যদি আমার ভাবনা গুলো সবার সাথে ভাগাভাগি করি তবে যদি কেউ তা চুরি করে নিজে লাভবান হয়(?) এক কথাগুলো স্বভাবতই সবার মাথা অটোমেটিক চলে আসে বিশেষ করে যারা ভিতু। হ্যাঁ আমি তাদের ভিতুই বলব। কারন প্রথমত আপনি নিজের মাথায় ফালতু ফালতু ভাবনা দিয়ে ভর্তি করে রাখছেন যা প্রতিদিন ঘষামাঞ্জা করেন কিন্তু যেখানে কোনো ভালো আইডিয়া কুন চিপায় পড়ে আছে তা শেয়ার করতেও ভয় পাচ্ছেন কেউ যদি চুরি করে নেয় বলে। হুম শুনুন আজ পর্যন্ত চুরি করার ফল শুভ হয় নি। আর ভাবনা যদি একান্তই আপনার হয় তবে এর সম্পর্কে আপনার থেকে ভালো কে জানবে, আর এ নিয়ে কাজ করলে আপনার থেকে ভালো কে করতে পারবে বলেন?? কোনো এক মহান ব্যক্তিকে বলা হইছিলো, "স্যার আপনি যে এতো খোলামেলা ভাবে আপনার সব কথা সবার সামনে বলেন আপনার কি ভয় লাগে না যে কেউ আপনার কোনো আইডিয়া চুরি করে নেবে। প্রতিউত্তরে তিনি বলেন আমি নিজের কাজ নিয়ে এতো দ্রুত এগিয়ে গেছি যে তাদের দিকে ফিরে তাকানোর সময়ই ছিলো না।"
তো কিসের এতো ভয়? ছোটবেলায় সবাই বুক ফুলিয়ে বলতাম "উই শ্যাল ওভারকাম সামডে" আজ না হয় "ফিয়ার ওভারকাম" বললাম। আর তখন ছোট ছিলাম আজ তো বড় হইছি সামডে পরিবর্তন করে দিসডে কি করা যায় না?
কার জন্য আজ থেমে আছি, ছড়ায় দেই নিজের মধ্যে লুকিয়া থাকা সব অজানা ভাবনাগুলো। জাগ্রত করি নিজেদের সুপ্ত প্রতিভাকে। মঙ্গল হোক দেশ-দশের, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর সত্বার। যেন মৃত্যু মুখে অন্তত বলতে পারি, আজ আমার কোনো আক্ষেপ নেই, পৃথিবীতে এসে আমি সার্থক।
ব্লগার ক্লে ডল ভাইয়ের "বাণী অমৃত" ব্লগ পড়ে অনুপ্রেরিত হয়ে আমার আজকের দিনের ভাবনা "আমার ভাবনা" সামুর সকল সম্মানিত ব্লগারদের সাথে ভাগাভাগি করলাম।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন
আপনার জীবন সুন্দর হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩০