তুমি কি দেখেছো তাকে?
সে আসে ধুলোর পথ বেয়ে,
লুঙ্গির ভাঁজে পুঁতে রাখে সরলতার ছদ্মবেশ,
তার কণ্ঠে দরিদ্রের কান্না, কলমে অভাবের ছায়া,
শহরের আলো ঝলমলে পত্রিকার পাতায় তার নাম— জনসেবক!
সে কথা বলে প্রতিশ্রুতির, স্বপ্নের,
সে বলে— “আমি আছি তোমাদের জন্য।”
তার প্রতিটি শব্দে মিশে থাকে করুণার সুর,
তার প্রতিটি বাক্যে উচ্চারিত হয় সহানুভূতি।
তাকে দেখে মনে হয়, সে-ই ভাসানির কণ্ঠস্বর, সে-ই গরিবের আলোর দিশা।
কিন্তু রোদ মরে গেলে, সন্ধ্যা নামে যখন,
তার পা ছুঁয়ে যায় অন্ধকারের স্রোত,
সে হিসাব রাখে না কারা পেল, কারা হারাল,
তাকে শুধু জানতে হয়— সে পেল কি না!
সে আহ্বান জানায়,
সে তহবিল সংগ্রহ করে,
সে বলে, “তোমাদের দুঃখ আমার দুঃখ, তোমাদের ক্ষত আমার ক্ষত।”
অথচ তার হাতেই থাকে শিকল,
তার আঙুলেই বাঁধা থাকে মানুষের দুর্দশা,
তার চোখে দুঃখ নেই, তার মনে যন্ত্রণা নেই,
শুধু প্রয়োজন আছে— অর্থের, সম্পদের, ক্ষমতার।
সে শহরের রঙিন ঘরে দাঁড়িয়ে বলে—
"আমার দেশ, আমার অঞ্চল, আমার মানুষ, আমার দায়!"
তার কথায় মুগ্ধ হয় সভাগুলো,
তার নামে করতালির ঝড় ওঠে,
সে হয়ে ওঠে সমাজের বিবেক, দয়ার প্রতিমূর্তি।
কিন্তু গাঁয়ের পথ জানে, গাছের ছায়া জানে,
তার ছায়া যত লম্বা হয়, তত দীর্ঘ হয় প্রতারণার ইতিহাস।
ধূলোমাখা পথের শেষে, নদীর কূলে,
একদিন হয়তো বাতাস ফুঁসে উঠবে,
মানুষ বলবে— “চলো, মুখোশ খুলে দেখি!"
কিন্তু ততদিনে, সে উধাও হয়ে যাবে
আরেকটি মুখোশের পেছনে,
আরেকটি পরিচয়ের ছদ্মবেশে!