আমার ইসলামী জীবন গঠন
১৯৪২ সালে যখন হাই মাদরাসা পাশ করি তখন আমার বয়স ১৯ বছর। প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে কুরআন শিক্ষার জন্য ২ বছর, বীরগাঁও প্রাইমারী স্কুলে ৩ বছর, বড়াইল জুনিয়ার মাদরাসায় ৪ বছর, কুমিল্লা হাই মাদরাসায় ২ বছর ও ঢাকায় ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ২ বছর এভাবে মোট ১৩ বছরে নিজে নিজে কুরআন পড়তে সক্ষম হয়েছি। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষা যতটুকু সম্ভব শিখেছি এবং ইসলামের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাসলা-মাসায়েল ও পাঠ্যপুস্তকে কুরআন ও হাদীসের কোর্সের অনুবাদ শেখার সুযোগ পেয়েছি। এছাড়া বাংলা ও ইংরেজী পাঠ্যপুস্তকে পরিবশিত বেশ কিছু জাগতিক জ্ঞান ও মূল্যবান উপদেশাবলী অবগত হয়েছি। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে চিন্তামূলক কোন বই পাঠ্যপুস্তকে ছিলো না। তাই ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত ইসলামকে জানা এবং বাস্তব জীবনে মেনে চলার পিছনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বাইরের অবদানই বেশি।
বাড়িতে দাদার সঙ্গ থেকে নিয়মিত জামাতে নামায আদায় ও কুরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে উঠেছে। খাওয়ার ইসলামী আদব-কায়দা - বিসমিল্লাহ বলে শুরু ও শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা, বাসন পরিস্কার করে খাওয়া, আঙ্গুল চেটে খাওয়া, খাবর জিনিস ঝুটা না করা, খাবার পড়ে গেলে দস্তরখান থেকে তুলে খাওয়া, খাবার নষ্ট না করা ইত্্যাদি দাদার কাছ থেকে শেখা যা সারাজীবন কাজে লেগেছে।
হোস্টেলে ও হলের ডাইনিং টেবিলে কর্মচারীরা আমাকে বলতো, "স্যার খাওয়ার পরে আপনার বাসন যেরকম পরিষ্কার থাকে, কুত্তায় চেটেও সেরকম পরিষ্কার করতে পারে না। অনেকের বাসন তুলবার সময় ঘৃণা বোধ হয়।"
আমি ডাইনিং টেবিলে ছাট্রদের খাবার ধরন দেখে হিসাব করতাম কে কি রকম পরিবার থেকে এসেছে। কাউকে দেখতাম ভাতের নলা মুখে দেওয়ার আগেই জিহবা অনেকটা বের করে নেয়। হাতের তালুতে পর্যাপ্ত খাবার লেগে যায়, লম্বা জিহবা বের করে আঙ্গুল চুষে, এমনভাবে চিবায় যে চপ চপ আওয়াজ হয়, বাসনে খাবারের কিছু অংশ রেখেই হাত ধোয়, এসব দেখেল রীতিমত বিরক্তিবোধ হতো। এর দ্বারা বুঝা যায়, যদি ছোট সময় পরিবারে এসব শিখানো না হয়, তাহলে বড় হয়েও এগুলো শেখার সুযোগ হয় না।