somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শোভা (ছোট গল্প)

২০ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেষ পর্যন্ত চাকরিটা ছেড়েই দিলাম। এছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। আমি মরে গেলেও ঘুষ খাব না। আমি আমার নৈতিকতা, আবার বাবার দেয়া শিক্ষা শুধুমাত্র সংসারের শান্তি ফিরিয়ে আনতে বিসর্জন দিতে পারি না। যেখানে আমার বাবার অফিসের পিয়নের ও ৫ তলা বাড়ি আছে সেখানে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়েও বাবা তার স্বপ্নের বাড়ির ২য় তলাও কমপ্লিট করতে পারেনি। নিজে আজীবন সৎ থেকে গেছেন। ছেলে মেয়েকেও সৎ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আমি কি করে সেই বাবার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হব? আমাকে দিয়ে তা হবে না। সরকারী চাকুরী ছেড়ে আমি বেকারের খাতায় নাম উঠালাম।
আমি একা হলে সমস্যা ছিল না। আমার স্ত্রী শোভা এবং দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে পরিবার। সাত বছরের ছেলে আর সারে তিন বছরের মেয়ে নিয়ে সুখেই ছিলাম। ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম, পরিবারের সবার অনুমতি ছাড়াই। বাবা রাগ করলেও বাসা থেকে বের করে দেন নি। চাকুরী পেতেও কোন সমস্যা হয় নাই। খুবই সুখে দিন কাটছিল আমাদের। সব কিছু শেষ হয়ে গেল এক দমকা বাতাসে। কাল বৈশাখীর ঝড়ের মতই আমার সংসারে নেমে এল অশুভ ঝড়।
আমার জুনিয়র সহকর্মীর মেয়ের জন্ম দিনের পার্টি থেকেই বিপত্তি শুরু। তার বিত্ত বৈভব শোভার মাথা ঘুরিয়ে দেয়। আমার জুনিয়র হয়েও সে শুধুমাত্র ঘুষের টাকায় প্রাসাদ গড়েছে। নিজের বাড়ি, গাড়ীর স্বপ্নে বিভোর শোভা সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। বিভিন্ন উপায়ে আমাকে ঘুষের টাকার প্রতি প্রলুব্ধ করতে শুরু করে। আমি মেনে নিতে পারি না। এই নিয়ে প্রায় প্রতি রাতেই আমাদের ঝগড়া হত। আমি কি করব? সংসারের শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাকরিটাই ছেড়ে দিলাম।
ঘুম পাড়ানী গান গেয়ে মেয়েটাকে ঘুমপাড়ানোর চেষ্টা করছি। এমন সময় অগ্নি মূর্তি নিয়ে হাজির হল শোভা।
- ঘুমিয়েছে? কড়া গলায় জিজ্ঞেস করল আমাকে।
- মনে হয়। আমি ছোট করে উত্তর দিলাম।
- তুমি চাকরি ছেড়েছে কেন?
- আমার পক্ষে ঘুষ খাওয়া সম্ভব নয়।
- সবাই তো খায়। তুমি খেলে সমস্যা কি ছিল? কি আছে আমাদের? তোমার বাবার এই ভাঙ্গা বাড়ি? তাও তো ৫ ভাগ হবে? আমাদের ভবিষ্যৎ ভেবে দেখেছ?
- শোভা, মেয়েটাকে ঘুমাতে দাও। এই বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।
শোভার চেঁচামেচি বন্ধ হয় না। কেউ বোঝে না আমার মনের মাঝে কি ঝড় বইছে। প্রতি দিনের এই অশান্তি আমার আর ভাল লাগে না।

শোবার সাথে আমার তিক্ততা বেড়েই চলেছে। শোভা এখন একটা বাচ্চাদের স্কুলে চাকুরী করে, টিউশনি করে। তার টাকার দরকার। অনেক টাকা, যে টাকা দিয়ে সে রানীর হলে চলতে পারবে। আমার সীমিত বেতনের টাকায় তার শপিং খরচও হয় না। তার প্রতিদিনের অভিযোগ শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত হয়ে বাবা মার সাথে আলাদা হয়ে গেছি। সারা দিন অফিস করে বাড়ি ফিরে শুনি, আমার ছেলে মেয়ে দুজনই না খেয়ে আছে। মা টিউশনি থেকে ফেরেনি। এভাবে আর কত দিন? আমি আর সহ্য করতে পারতেছিনা।

৬ মাস পর-
ডিভোর্সের সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললাম। শোভার বাড়ি গাড়ির স্বপ্ন পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কি আশ্চর্য! এত বড় সিদ্ধান্ত নেবার সময় ও শোভাকে কেমন শান্ত দেখাচ্ছে। আমি আমার মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলাম। ওদের আঁকরে ধরেই আমি এখন বাঁচতে চাই। শোভা ড্রইং রুমে চলে গেল। মনে হচ্ছে ও ওর বান্ধবীকে ফোন করছে। আমি আমার মেয়েটাকে ঘুম পারানো গান শোনাতে শুরু করলাম। পাশের রুম থেকে হালকা কথা বার্তা শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে শোভা ডিভোর্সের ব্যাপারে কারো সাথে কথা বলছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম, শোভা নিজের সংসার নয় "কুসুম" এর সংসার ভাঙ্গা নিয়ে কথা বলছে। ভাঙ্গতে বসা নিজের সংসারের চাইতে সিরিয়ালের কুসুমের সংসার নিয়ে শোভাকে বেশি চিন্তিত মনে হল। মেয়েটার গালে আমার চোখের দু ফোটা অশ্রু পড়তেই চমকে উঠল। "কিছু না মা, ঘুমাও" বলে আমি আবারও ঘুমপাড়ানি গান শুরু করলাম। পাশের রুমে শোভা কুসুমের সংসার জোড়া লাগানোয় ব্যস্ত।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

উন্মাদযাত্রা

লিখেছেন মিশু মিলন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

একটা উন্মুল ও উন্মাদ সম্প্রদায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আর দ্বিতীয়টি নেই। নিজের শিকড় থেকে বিচ্যুত হলে যা হয় আর কী, সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো ঘুরপাক খায় আর নিন্মগামী হয়! এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×