somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিনু মামা দি গ্রেট (রম্য গল্প)।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টেনিস বল ছেড়ে কাঠের বল দিয়ে যেদিন ক্রিকেট খেলতে নামলাম সেদিনই মনে হল দুর্ঘটনা ঘটবে। আমার ধারনাটা সত্য প্রমান করার জন্যই যেন দূর্ঘটনা ঘটল। দুর্ঘটনা ঘটবি তো ঘট। মানা করেছে কে? তাই বলে প্রথম দিনই ঘটতে হবে? আর তা আবার চিনু মামার সাথে?
আমরা এলাকার চেয়ারম্যানের কানের কাছে প্যান প্যান ঘ্যান ঘ্যান ক্যান ক্যান করে নাকের পানিতে চোখের পানির শুন্যতা পুরণ করে অনুদানের একসেট ক্রিকেট খেলার সামগ্রী বাগিয়ে নিলাম। চিনু মামা সেটা জানেন না। তিনি হলেন আমাদের “হযবরল ক্লাব” এর ইউনিভার্সাল মামা কাম অলিখিত সভাপতি। তিনি জানবেনই বা কি করে? ক্লাবের সভাপতি হলে কি হবে, চাদা আদায়ে তার মহা অরুচি। চাদাবাজি? ছো ছো- ওটাতো গুন্ডা বদমায়েশের কাজ। আর কোন ফাংশনে আমরা যদি তার কাছে চাদা দাবি করি তবে তিনি বেমালুম গায়েব হয়ে যান। কিন্তু ফাংশনের দিন ঠিকই হাজির হন। যাই হোক – নতুন ক্রিকেটের সামগ্রী পেয়ে আমাদের খুশি দেখে কে? দেরী না করে মাঠে নেমে পড়লাম। কে কার আগে প্যাড পড়ে ব্যাট হাতে নিবে তার প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেল। আমি হালকা পাতলা মানুষ। শরীরে শক্তি কম। তাই প্রতিযোগীতায় না নেমে বলের দখল নিলাম।
ব্যাট হাতে প্রস্তুত আমাদের ড্যাসিং ব্যাটসম্যান মানিক। বল হাতে প্রস্তুত আমি। প্রথম বলে বোল্ড করার আশায় বল করলাম সর্ব শক্তি দিয়ে। ওমা! ছক্কা!!!! না না- ব্যাটস ম্যান ছক্কা মারে নাই। সে তো বল নাগালই পায় নাই। বল আমার হাত থেকেই শুণ্যে ভাসতে ভাসতে সীমানার বাইরে চলে গেল। চারিদিকে হাসির ধুম পড়ে গেল। মান সম্মান বাচাতে দেখে শুনে পরের বল করলাম। মানিক করল দর্শনীয় কাভার ড্রাইভ। বল মাটি কামরে সীমানার দিকে যাচ্ছে। এমন সময় মাঠে প্রবেশ করল আমাদের গ্রেট চিনু মামা। দেরী না করে বল ফিরিয়ে দেবার আশায় করল পেল্লায় এক কিক। পরমুহুর্তে বাবাগো মাগো বলে তিরিং বিরিং করে নাচতে শুরু করলেন তিনি। তার এক পায়ে নাচ দেখে দিনার গান ধরল, “এক পায়ে নাচ তুমি..............”।
পায়ের ব্যাথাটা কমে যেতেই চিনু মামা হুংকার ছাড়ল, “দেখি বলটা। বল এত শক্ত হল কি করে?” চিনু মামার হুংকার তো নয় যে না ১০০ বাশ ফট ফট করে ফাটার শব্দ। বলটা তখন ক্লাবের সবচেয়ে নিরিহ আর ভীতু সুমনের হাতে ছিল। মামার হুংকার শুনে বলটা সুমনের এক মন ভারি মনে হল। তাড়াহুড়া করে বল ছুড়ল মামার দিকে। সুমনের হাতের টিপ অসাধারণ! বলটা মামার দিকে না গিয়ে মামার পাশে দাড়ানো টাকলু রবিউলের দিকে গেল। আমরা টাক মাথায় সংঘর্ষের ঠাক করে একটা শব্দ শুনলাম। আর রবিউলকে মাঠের মাঝে চিৎপটাং অবস্থায় আবিস্কার করলাম। চিনু মামা আবার হুংকার দিল, “কে কোথায় আছিস? জলদি পানি আন।“ আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম, “মামা, আমরা সবাই আছি। খালি আশে পাশে পানি নাই।“ ফাজিলের ফাজিল দিনার সাথে সাথে প্রতিবাদ করে বলে, “ কে কয় পানি নাই? আমার কাছে আছে।“ চিনু মামা আবার হুংকার দিয়ে বলে, “ব্যাটা ফাজিল। তাইলে দেরী করতাছস কেন? জলদি পানি দে।“ এই বার দিনার মুচকি হেসে বলে, “না- মানে মামা, আমার সুসু ধরছে। যদি বলেন তো রবিউল ভাইয়ের মাথায় সুসু করে দেই। পানিও পাওয়া যাবে আমার............।” আমার কোথায় মামার হুংকার শুনব তা না, শুনলাম রবিউলের হুংকার। “তবে রে.....” বলে তেড়ে উঠল রবিউল। তাড়া করল দিনার কে। আর হাবলু মিয়া নাচতে শুরু করল, “ইউরেকা!! ইউরেকা!!” বলে। আমরা অবাক। হাবলুরে জিগাইলাম, “আবে হাবলু, তুই আবার কি আবিস্কার করলি?” হাবলু হেসে বলল, “জটিল ঔষধ আবিস্কার করছি। কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলেই মাথায় সুসু করে দিব!!!!”
বল হাতে পেয়ে চিনু মামা বেজায় খুশি। বলটাতো দারুন। এই বল দিয়ে আমি বল করব। এতক্ষন প্যাড পড়ার প্রতিযোগীতা ছিল। এইবার শুরু হল প্যাড খোলার প্রতিযোগীতা। চিনু মামা এমন কোন ফাস্ট বোলার না যে ব্যাটসম্যানেরা তার বলের গতিকে ভয় পাবে। ভয় পায় তার বেগতিক মেজাজ কে। কেউ যদি ভুল করেও মামার বলে বাউন্ডারী হাকায় তবে মামা বলটা সেই ব্যাটসম্যানের পিঠে ছুড়ে শোধ নেয়। টেনিস বলের মার সহ্য করে সবাই চার ছয় মারতে চাইলেও কাঠের বলের সামন্য রিস্কও কেউ নিতে চাইল না। অবশেষে ব্যাটসম্যান পাওয়া গেল। ব্যাট প্যাড হাতে দাড়িয়ে গেল জাভেদ ওমর খ্যাত আমিন। তার বিশ্বাস ছিল, সে যখন ব্যাটিং করে তখন বল মাঠের বাইরে যেতে ভয় পায়। কিন্তু চিনু মামার প্রথম বলেই অঘটন ঘটে গেল। আমিন আলতো করে বলটা ছুয়েছে মাত্র। বলটা সবাইকে ফাকি দিয়ে মাঠের বাইরে চলে গেল। আর আমিন? বল নাকি আমিন, কে কার আগে বাউন্ডারী লাইন পার হল বুঝতে পারলাম না। খালি চিনু মামার ফাটা বাশের গলায় চিৎকার শুনলাম, “ফিরা আয় কইতাছি। ফিরা আয়। কোন সাহসে আমার বলে চার মারলি?” পলয়ন রত আমিন কোন মতে বলল, “মামা, দুঃসাহসে।“
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:২৭
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

উন্মাদযাত্রা

লিখেছেন মিশু মিলন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:২১

একটা উন্মুল ও উন্মাদ সম্প্রদায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আর দ্বিতীয়টি নেই। নিজের শিকড় থেকে বিচ্যুত হলে যা হয় আর কী, সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো ঘুরপাক খায় আর নিন্মগামী হয়! এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×