গতকাল একটা সাময়িক পোস্ট দিছিলাম। আজ মনে হইতাছে সাময়িক লেখা ভুল হইছিল। তাই সাময়িক লেখাটা মুইছা দিলাম। অহন আসল কতায় আসি। মামার সাথে তার তথাকথিত অফিসে গেছিলাম।
ঈমানে কইতাছি, টানা ৫ ঘন্টা সিটিং দেবার পর এহন আমারও গলায় টাই বানতে মন চাইতাছে।
শুরুটা বে-রশিক বিদ্যুতরে নিয়া। মামার লগে বাইর হওনের কতা ২:৩০ মিনিটে। বিদ্যুতের আসার নাম নাই। আমি গোসল করমু কেমনে? ট্যাংকিতে পানি নাই। আমি শুয়ে আছি। আর মামায় বিদ্যুতরে গালী দিতাছে। ঠিক সোয়া দুইটায় আমারে শোয়া থেকে তুলতে বিদ্যুতের আগমন, আমার তৈরি হওয়া এবং মামার সাথে পল্টন গমন।
শুরু হইল সিটিং পিএসডি জনাব x (নাম না হয় নাই জানলেন) সাহেবের সাথে। তিনি কামেল মানুষ। আগে হোমিও ডাক্তার ছিলেন। বিঢ়াট নাম যশ ছিল। কামেল মানুষ এহন চেম্বার ফালয়া ডেস্টিনির পিএসডি। কোন কাম না কইরা ঘরে বইসা কামাই করে মাসে ৫০০০০ কাচা ট্যাহা। আমি বেকার আর দইন্যার আইলস্যা মানুষ। লোভ সামলাইতে পারলাম না। কইলাম, আমারে কি করতে হপে কন? আমিও ট্যাহা কামাইতে চাই। তিনি কহিলেন, ভাগিনা, তুমি আমগরে একটা ৫০০ পয়েন্টের প্যাকেজ কেন। তোমারে সদস্য করে নেয়া হবে। আমি কই, আপনেরা নাকি মানুষ লই ব্যবসা করেন? পিরামিড স্কিম না নাম। পন্য কিন্যা কি হইবে? তিনি চেইতা কইলেন, কেডায় কয়? আমরা করি MLM। এর লগে মাইনষের কুনু সম্পর্ক নাই। আমি কই, কন কি? আমারে মানুষরে ধোকা দিয়া বোকা বানাইতে হইব না? ডাইন হাত বাম হাত তত্ব কি ভুল? হেয় কয়, অবশ্যই ভুল। তোমার সার্কেল পুরন হইব পন্য বিক্রয়ের মাধ্যমে। তোমার লেফট হ্যান্ড সার্কেল আর রাইট হ্যান্ড ............... (কম বেশি মনে হয় সবাই জানেন। তাই বিস্তারিত বললাম না)। আমি এইবার হিসাবে নাইমা পডলাম। আমি ৪০ সাইকেল পন্য কিইন্যা/বেইচ্যা আমার পিএসডি হইতে হইলে ডেস্টিনির লাভ দেয়া লাগবেক, ৪০(সাইকেল)*২১০০০(প্রতি সাইকেল পুরনের পয়েন্ট)*৫.৫(প্রতি পয়েন্টে ডেস্টিনির লাভ) ৪৬ লাখ ২০ হাজার ট্যাহা। খেয়াল কইরেন, এই ট্যাহা কইল খালি ডেস্টিনির লাভের পরিমান। পন্য ক্রয়ের পরিমান না। মানে ধরেন আমি ৫০০০ টাকার পন্য কিনলাম। সেই পণ্যে ডেস্টিনির লাভ যদি ২৭৫০ ট্যাহা হয় (তাদের হিসাবে। আসল লাভ কত কে জানে?) তয় আমার পয়েন্ট হইবেক ৫০০। আমার ৫০০০ টাকায় কোন পয়েন্ট নাই। মানে ১ পয়েন্ট পাওয়ার জন্য আমাকে কোম্পানীকে অবশ্যই ৫.৫ ট্যাহা লাভ করায়া দিতে হবি। আমি কই, অত ট্যাহা কই পামু? কয় বিকল্প পথও আছে। আমি খুশিতে নাইচ্যা উডি। কই জলদী কন। উনি কন, তুমি যদি দুইট্যা লোকের কাছে পন্য বিক্রয় করে আমাদের সদস্য বানায়া দেও, তবে তারা যে পন্য কিনব বা বেচব, তার রয়ালিটি পাইবা। তাদের পয়েন্ট তোমার পয়েন্টের সাথে যোগ হইব। তুমি জলদী জলদী কোন কাম না কইরা পিএসডি হবা। মনে মনে কইলাম, যাউগ্যা- অবশেষে শিং দেখাইন্যা শুরু করছে। আর বাইরে বাইরে কইলাম আফনে না কইলেন মানুষ নিয়া কোন কারবার নাই। তিনি কন, ঠিকইতো কইছি। আমগরে ব্যবসা পন্য। তয় মানুষ না থাকলে কিনব কেডা? এই জন্যই মানুষ। আমি তার পল্টি প্রতিভায় মুগ্ধ হয়া আর কথা বাডাইলাম না। কইলাম, আফনের পন্যের বিবরণ দেন। একটা কিইন্যা নিজেরে ধন্য করি। উনি প্রথমেই বাহির করিলেন ফুট মেসেজার। কইলাম, ইহা দিয়া কি হয়? উনি কহিলেন, ঘরে বসিয়াও শরীর চর্চা করা যায়। আমি বিরক্ত হইয়া কহিলাম, বাসার সম্মুখে বিশাল মাঠ। শরীর চর্চার প্রয়োজন হইলে মাঠে দৌড় দিমু। তিনি কহিলেন, ভাগিনা, বৃষ্টির দিনে কি করবা? আমি কইলাম, জিমে ভর্তী হমু। উনি কয়, ঠিকাছে। আস গাছ লাগাই। আমি খুশি হইলাম। গাছ লাগান তো ভালা কাম। আমি রাজি। তিনি খুশি হইয়া কহিলেন, ৩০টা গাছ ১০,০০০ ট্যাহা। ১২ বছর পর রিটার্ণ পাইবা ২৭০০০ (৩০০০০ এর কতিপয় চার্য কর্তন করা হবে)। অংকে কাচা আমি আবারও হিসাবে বসিলাম। ৩০টা চারা গাছ। দাম ১০০০০। প্রতিটার দাম পড়ব ৩৩৪ ট্যাহা(প্রায়)। আমি আৎকায়া উডি কইলাম, আমি মানি না। আমি প্রতিডা চাড়া ৫ ট্যহা করি কিনি ৫০ টা চারা লাগামু। বাকি ৯৭৫০ ট্যাহার মাসে ১০০ ট্যাহা করি গ্রামের কোন লোকরে দিয়া ৮ বছর যত্ন নিতে কমু। যদি ৫ টা গাছও বাচে, দেহমু রিটার্ণ আপনার বেশি না আমার বেশি। উনি কয়, গাছ লাগাইবা, জায়গা পাবা কই? আমি কইলাম আপনারা যেমন পাইছেন। উনি কয়, বুঝলাম না। আমি কইলাম, আপনারা যেমন সরকারী জায়গায় লাগাইছেন, আমি লাগামু সরকারী রাস্তার ধারে (আমার চাচাত ভাই এই কাজ করেছে। আমাদের থানার টি.এন.ও নিজে এসে উৎসাহ দিয়ে গেছে।) উনি কয়, ঠিক আছে। এটাও বাদ। তুমি কও, তুমি কি পন্য চাও? আমি কইলাম, বাজারে চাউলের দাম বেশি। আপনারা যদি ডাইরেক্ট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আমরে স্বল্প মূল্যে চাউল দিতেন!!!!!! উনি কইলেন, আমরা কুমিল্লা সহ বেশ কিছু অঞ্চলে এই কাজ শুরু করছি। আমি কইলাম, শুইন্যা শান্তি পাইলাম। আমিতো কুমিল্লায় থাকি না। থাহি, ঢাকায়। সামনে রমজান। সব জিনিষের দাম বাড়ব। যদি রমজানের..........। কথা শেষ করবার পারি নাই। আরেক কামেল (পিএসডি ২) এতক্ষণ পাশে দাড়ায়া শুনতেছিল, তিনি আইস্যা আসন গ্রহন করিয়া আমাকে ধন্য করিলেন। অত:পর কহিলেন, আপনি কি সদস্য হইতে আসিয়াছেন, নাকি জানতে? আমি সরাসরি কহিলাম, জানতে। তিনি উত্তেজিত হইয়া কহিলেন, তাহরে আপনাকে জানায়া দেই। আমরা কি পন্য নিয়া ব্যবসা করিব, সেটা আমাদের ব্যাপার। আপনার কোন পরামর্শ লাগবে না। আমরা ভাবিয়া দেখিব কোন পণ্যে লাভ বেশি। তা আপনি কি করেন? আমি মাথা নিচু কইরা কহিলাম, বেকার। তিনি আমার পড়াশোনার দৌড় জানতে চাইলেন। মিনমিন কইরা কইলাম, প্রইভেট ভার্সিটি থেকে এমবিএ। তিনি তারপর আমারে জিগাইলেন, আমি স্বপ্ন দেহি কি না। আমি কই না, দেহি না। তিনি কইলেন, কেন? আমি কইলাম দিন রাত মিলায়া ঘুমাই ৩/৪ ঘন্টা। এমন মরার মত ঘুমাই, স্বপ্ন দেহার সময়ই পাই না। তিনি মুচকি হেসে কহিলেন, আপনি তো স্বপ্নের সজ্ঞাই জানেন না। আমি কইলাম, “হ, আসলেই জানি না। শুধু জানি স্বপ্ন সেটা না, যেটা আপনি ঘুমের মাঝে দেখেন। স্বপ্ন সেটাই, যেটা আপনাকে ঘুমাতে দেয় না (আমি ঠিক মনে করতে পারছি না এটা কার উক্তি। কেউ জানলে দয়াকরে নামটা বলে দিয়েন)।“ চারদিকে ব্যাপক হাততালিয়ার শব্দ পাইলাম। ভাবলাম সবাইরে তাক লাগায়া দিছি। আসল ঘটানা কিন্তু ভিন্ন। একটা শিকার টোপ গিলেছে। সেই খুশিতে শিকার এবং শিকারী কোলাকুলি করতেছে। বাকিরা হাত তালি দিতাছে। এবার কামেল পিএসডি ২ কয় আমার স্বপ্ন না থাকলেও হেগরে নাকি স্বপ্ন আছে। সেইটা হইল ২০১২ সালে বাংলাদেশে কেউ গরীব থাকব না। আমি দেখলাম, তিনি যে চেয়ারে বইস্যা আছে সেই চেয়ারের গদি ছেড়া। খালি ছেড়া না, বেশ ছেড়া। তাই সুযোগ নিয়া কইলাম, কেউ গরীব না থালে ঐ চেয়ারডা সেলাই করব কেডা? চেয়ারের গদী সেলাই করা লোকটাতো তখন চেয়ার সেলাই বাদ দিয়া ডেস্টিনির মাল বেচব। তিনি কহিলেন, কেন? উন্নত বিশ্বের লোকেরা কি করে? নিজের চেয়ার নিজে সেলাই করমু। আমি কই, আমরা খামু কি? কৃষক ধান চাষ না কইরা ডেস্টিনি করব। আমগরে কি হইব? তিনি অত্যাদিক ক্ষেপিয়া কহিলেন, দুনিয়ায় আপনিই একমাত্র বুদ্ধিমান লোক নহে। প্রাইভেট ভার্সিটি থেকে পাশ কইরা মহা জ্ঞানী হয়া যান নাই।
আহা! তারা আমারে এমুন সম্মান দিল! আমারে বুদ্ধিমান কইল? আমি খুশি হইয়া বাকবাকুম কইরা কইলাম, "জ্ঞানী গুনি কারা ডেস্টিনি করে। অধমরে একটু জানাইবেন কি?" তিনি কহিলেন, ঢাকা ভার্সিটির অনেক ছাত্র/ছাত্রী চাকুরি না কইরা ডেস্টিনি করে। তারা কোটি কোটি টাকা কামায়। টাকার কথা শুনে আবার আমার দিলডা ধ্বক কইরা উঠল। কইলাম, ঢাকা ভার্সিটির মোট স্টুডেন্টের কত পার্সেন্ট ডেস্টিনি করে? .০০০১% হবে তো? তিনি এইবার অত্যাধিক ক্ষেপিয়া উঠিলেন? বলিলেন, “এই জন্যইতো মিয়া আপনার চাকরি হয় না। বেশি বোঝেন তো? এই বেশি বুঝ নিয়াই থাইকেন।“ তাহার উত্তেজিত চেচামেচিতে (সাথে আমারটাও যোগ করে নিয়েন। ধৈর্য্যর বাধ ভেঙ্গে গেছিল) আশে পাশের বেশ কয়েকটা কামেল সাথে চামচা হাজির। সাবাই আমারে বুঝাইতে চায়। কিন্তু আমি বুঝি না। আমার বুদ্ধি কম। কি করমু কন? এক মহা ঢঙ্গী তরুনী বাঘিনীর ন্যায় আমারে জিজ্ঞেসিল, “আপনি কি কইতে চান, আমরা ৩৪ লাখ সদস্যর মাথায় কোন বুদ্ধি নাই?” আমি ভয় পাইলেও সাহস কইরা উত্তর দিলাম, “আমি কইতে চাই, আপনারা এক মাস্টার মাইন্ডের ভিক্টিম, এহন অন্যদের ভিক্টিম বানানোর তালে আছেন।“ সাথে সাথে একজনের উত্তর, “আপনার সাথে আমার পার্থক্য কোথায় শুনবেন? আপনি এত বুঝেও বেকার। আমি ডেস্টিনি করে দুইটা টাকা কামাই করি।“ বাবারা, আমারে চেন নাই। সাথে সাথে কইলাম, “চোরওতো চুরি কইরা দুইটা টাকা কামায়। কাইল থেকে কি আমি চুরি করমু?” সাথে সাখে এক কামেল পিএসডি যে মার্কেটিং এ এমবিএ করা এবং ইতিপুর্বে আমি ফাইন্যান্সের ছাত্র বলিয়া আমি মার্কেটিং বুঝিনা এই মর্মে আমাকে সাপ্লাই চেইন বোঝাইতে আসছিল, কহিয়া উঠিল, “ঐ মিঞা, আপনে এখানে আসছেন কেন? বাইর হন এখান থেইক্যা।“
দাওয়াত দিয়া ডাইক্যা আইন্যা এমুন অপমান। ভাইরে, কেউ আমারে একটা টাই দেন। টাইডা গলায় বাইন্ধা যদি ফাসি নেওনের কামডা চলে।
নোট: টানা ৫ ঘন্টার সিটিং। সহজে কি শেষ হয়? ২/৩ বার মাফ চাই কইয়া পালাইতে চাইছি। পালাইতে দেয় না।