
ইভটিজিং বিরোধী আন্দোলন অবশ্যই একটি ভাল ও মহৎ উদ্যোগ। আমরা সবাই চাই বখাটেদের অবশ্যই রুখে দেওয়া হউক। সমাজ থেকে এদের সমুলে উচ্ছেদ করা হউক। তবে কথা হচ্ছে জনগনের পয়সায় যে সব বাহিনী আছে তারা থাকতে এই সব গেরিলা বাহিনী কি বিশেষ কোন সুবিধা এনে দিতে পারবে? দাঙ্গা হাঙ্গামা কি খানিক আরও বাড়বে না? কিছু নিরীহ টাইপের আন্দোলনকারীর উপর খানিক ঝুকি এনে দিবে না? কাউকে কাউকে কি সংকটের মধ্যে পতিত করবে না? উদাহরণ সরুপ - কোন স্হানীয় সরকার দলের এমপি বা নেতার ছেলে/ভাইগ্না/ভাতিজা যদি আমার আপনার মা/ মেয়ে/বোনকে উত্যক্ত করে এবং আমি/আপনি যদি নতুন উদ্ভাবিত গেরিলা পদ্ধতিতে এর প্রতিবাদ করি তখন এর পরিণতি ও পরিণাম কি ভয়বহ হবে একবার বিবেচনায় আনা উচিত নয় কি? সর্বোপরি আইন নিজের হাতে উঠে আসলে সমাজ, রাষ্ট্র কি অস্হির হয়ে উঠবে না? বা এসব অস্হির অবস্হার সুয়োগ কি বখাটেরা, সন্ত্রাসীরা, দলবাজরা নিবে না? এমনিতেই সাধারন জনগন যেখানে ত্রাহি-মধুসদন অবস্হায় আছে, তারপর উপর আবার যদি রাষ্ট্র-সমাজ আরো খানিক অস্হির হয়ে উঠে তখন অবস্হা কি দাড়াবে? তাও বিবেচনায় খানিক আনা উচিত নয় কি?
সবার প্রতি বিশেষ সম্মান রেখেই বলছি, যারা ইভটিজিং করে তারা কি জানে ইভটিজিং একটা বিশেষ সামাজিক অপরাধ? এবং তার এই অপকর্মের কারনে একটি মেয়ের বা একজন মা-বাবার সর্বোপরি একটা পরিবারের কি সাংগাতিক, অপুরনীয় ক্ষতি হয়ে যায়? তার এক সেকেন্ডের লালসার কারনে একটি মেয়ের জীবন অবলীলায় ধংস হয়ে যেতে পারে। তারা কি জানে তারা যেভাবে অন্যের মা-বোনকে টিজ করছে, সেই একই ভাবে কেউ না কেউ তার মা-বোনকেও টিজ করতে পারে? সেই শিক্ষাটা কি সে পেয়েছে? সে কি জানে, অন্য একজন মানুষকে অন্যায় ভাবে টিজ করা, কোন মন্তব্য করে কাউকে উত্ত্যোক্ত করা বা সমাজের কাছে কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করাও একটি মারাত্বক ও জগন্য অপরাধ? এই না জানা বা অজ্ঞতার জন্য কি পরিবার, রাষ্ট্র বা সমাজ এর করনীয় কিছু আছে? যা পরিবার, রাষ্ট্র বা সমাজ তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে বা করতে পেরেছে?
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে , ইভটিজিং এর বিষয়ে সর্বপ্রথম পরিবার থেকেই বড় ভুমিকা পালন করতে হবে। সে ছেলে হোক আর মেয়ে হোক তাকে নীতি নৈতিকতার শিক্ষাটা পরিবার থেকেই দিতে হবে এবং নিতে হবে। সেই সাথে মানবিক মুল্যবোধ ও ধর্মীয় মুল্যবোধের শিক্ষাটাও তাকে সমাজ ও পরিবার থেকে দিতে হবে। একটা ছেলে যেমন রাস্তা ঘাটে সংযত আচরন করবে তেমনি একটা মেয়েকেও সংযত হয়ে চলাফেরা করতে হবে এই শিক্ষাটাও পরিবার বা সমাজকে থেকে এনশিওর করতে হবে। অসংযত, অসংলগ্ন আচরন কখনও কখনও সমাজ বা রাষ্ট্রকে অস্হির করে তুলে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। ইদানিংকালে কিছু কিছু উছশৃঙ্খল ছেলে মেয়েকে বেলাল্লাপনার সহিত যেভাবে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে দেখা যায়, এতে করে ইভটিজিংকে খানিকটা উৎসাহিতই করে। যারা নারীকে সম্মান ও সমীহ করে চলে এদরে উছশৃঙ্খল চলাফেরা ও আচরনে তাদেরও ব্রু খানিকটা কুঞ্চিত হয়। ব্যাক্তি স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতার সহিত রাস্তাঘাটে বে-আব্রু হয়ে বেলাল্লাপনার সহিত চলাফেরা করে ইভটিজাদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া খানিক দুস্করই বটে।
আরেকটা গুরুত্বপুর্ণ জিনিস হচ্ছে সাংস্ক্কৃতিক আগ্রাসন। ইদানিংকালে আমাদের সমাজে এর ভয়াবহ আগ্রাসনের ব্যাপকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব অপ-সাংস্ক্কৃতিক আগ্রাসনে আমাদের দেশ হতে ধীরে ধীরে মানবিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধ এর অবসান ঘটছে এবং দিনকে দিন তা শুধু ত্বরান্বিতই হচ্ছে। আর তাতে করেই ইভটিজিং এর পাশাপাশি আরও ভয়ন্কর কিছু অপরাধের বিস্তার খুব দ্রুতই সমাজে ঘটেছে এবং তা বেড়েই চলেছে ক্রমান্বয়ে। পুর্বে এর ব্যাপকতা এরকম বহুলাংশে কখনও দেখা যায়নি। সাংস্ক্কৃতিক আগ্রাসন এর মাধ্যমে "শীলা কি জওয়ানী" এর মত খেমটা নাচ দেখিয়ে আমার আপনার ছেলেকে, মেয়েকে সংযত থাকতে বলা!! এটা স্ববিরোধীতার মত হয়ে যায় না? আগে খেমটা নাচের থাবা থেকে আমারদের ছেলে, মেয়েকে বাচাঁতে হবে, তখন ওরা এমনিতেই খানিক সংযত হয়ে যাবে.............................বাকী না হয় প্রতিরোধ এর মাধ্যমে এরকম একটা ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিকে কন্ট্রোল করা যাবে। গোড়ায় পচন রেখে শুধুমাত্র আগায় মলম ঘষলেই কি এর সুফল পাওয়া যাবে? প্রতিরোধের চেয়ে প্রতিকারটাই আগে করা জরুরী। ব্যাক্তি পর্যায়ে প্রতিরোধ কখনও কখনও সাময়িক সুফল এনে দিতে পারে আবার প্রতিরোধের ফলে তাৎক্ষনিক সমাধান আসলেও এর খানিক শীতিলতাই আবার এর পুনঃবিস্তার ঘটবে এবং আগের তুলনায় এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রতিকারকেই আগে প্রাধান্য দিয়ে পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন হিসাবে খানিক প্রতিরোধও করা যেতে পারে।
শুধুমাত্র পরকীয়ার জন্য মা তার কলিজার ধন বা পিতা তার ঔরসজাত সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করছে। এর থেকে সামাজিক অবক্ষয় কি আর কিছুতে হতে পারে? ফোনে বা মোবাইলে প্রেমের ফাঁদ পেতে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে তারপর খুন খারবি করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া এসবের ভয়াবহতা ইভটিজিং এর চেয়ে বেশী নয় কি? উদাহরণসরুপ কিছু দিন আগে এক এজেন্সির মালিক ফোনে প্রেম এর ফাদঁ পেতে এক অবলা মেয়েকে করায়ত্ব করে। এক সময় সেই মেয়েকে বা প্রেমিকাকে ডেকে নিয়ে তার অফিস কক্ষে লান্ছিত করে অবশেষে হত্যার পর লাশ ২৬ টুকরো করে রাস্তায়, এর ওর ছাদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। এর চেয়ে অমানবিক, পৈশাচিক জঘন্য কাজ আর কি হতে পারে? আমরা এসব ঘটনার প্রকাশ পর্যন্ত অনেকেই জানি তারপর এর কোন প্রতিকার আদো হয় কিনা, সেই নির্যাতিত সংসারের পাশে কেউ দাড়ায় কিনা, তার খবর আমরা কেউ পাইও না বা নিজেরা সেটা রাখার চেষ্টাও করি না। কি আশ্চর্য!!! মানুষ আমরা আর কেমন সমাজ ব্যবস্হা আর রাষ্ট্র ব্যবস্হাইনা আমাদের!!!!!!!!!!!!!!!!! এর সবকিছুর মুলেই রয়েছে মানবিক আর ধর্মীয় মুল্যবোধ এর অভাব সাথে আছে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন।
বলতে গেলে অনেক কিছুই বলা যায়। এখানে সবার মত আমিও চাই সমাজ থেকে সবধরনের অনৈতিক, অমানবিক কাজ কর্মের অবসান হউক। তবে তার জন্য এসব আন্দোলনের পাশাপাশি অন্যায়ের মুলে গিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। কেন অনৈতিক সব কাজের ব্যাপকতা দিনকেদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাকে চিহ্নিত করতে হবে তারপর তার নিরাময়ের উদ্যোগ নিতে হবে। বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়ের আলোকে পশ্চিমা সমাজ বিজ্ঞানীরা মানুষ, পরিবার, সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে যে সকল গবেষণা করেছেন এবং সর্বশেষে যেসব উপসংহারে পৌছেছেন সেখানেও তারা পরিবারকে প্রাধান্য দিয়েছেন সবার উপরে অর্থ্যাৎ একজন মানুষকে প্রথমেই নীতি নৈতিকথাটা শিখতে হবে তার আপন পরিবার থেকে এবং সেখানে যৌথ পরিবারের চাহিদা ও মর্যাদা সবার উপরে। এরপর আছে ধর্মীয় অবতার ও স্কলারদের আদেশ, উপদেশ ও নির্দেশনা। তারা বরাবরই নৈতিকতার শিক্ষাটুকুকে প্রাধান্য দিয়েছেন সবার আগে। একজন মানুষকে অন্যায় হতে সবার আগে বিরত রাখে তার নৈতিক শিক্ষা আর তা অর্জিত হয় পরিবার থেকে, ধর্মীয় মুল্যবোধ থেকে। এসবের বিলুপ্তি যখন মানুষের ঘটে যায় তখন কেবল প্রতিরোধেই প্রতিকার পাওয়া দুস্কর হয়ে উঠে। তাই আমাদের সবার উচিত আমাদের নিজস্ব স্বার্থে আমাদেরই সন্তানকে পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষাটুকু দিয়ে দেওয়া, ধর্মীয় মুল্যবোধের আলোটুকু তার অন্তরে প্রোথ্বিত করা। একটা জিনিস মনে রাখা দরকার সমাজ বা রাষ্ট্রে যদি নৈতিক চরিত্রের চেয়ে অনৈতিক চরিত্রের লোকের আধিক্য বেশী হয়ে যায় তবে সেই সমাজ বা রাষ্ট্রে অন্যায়, জুলুম আর নির্যাতন এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করবার ক্ষমতাও হ্রাস পেয়ে যায়। তাই সবার আগে উচিত পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নীতিবান লোকের বিস্তার ঘটানো।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে সুশাসনের বড়ই অভাব, আইনের শাসনের বিশাল সংকট। তাই কেউ এসব নিয়ে ঝামেলায়ও জড়াতে চায় না সে হউক ব্যাক্তি বা রাষ্ট্র। ব্যাক্তি পর্যায়ে কেউ এগিয়ে আসেনা বা আসতে চায় না এর সবচেয়ে বড় কারণও হচ্ছে নিরাপত্তা। এর জন্য প্রথমেই দরকার দেশে আইনের শাসন কার্যকর করা। কেউ যদি উত্ত্যক্ত হয় তবে তাৎক্ষনিক ভাবে তার পাশে বা তার পরিবারের পাশে প্রথমেই রাষ্ট্রকে গিয়ে দাড়াতে হবে। উত্ত্যোক্তকারীকে আইনের আওতায় এনে এর দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্হা করতে হবে। তাহলেই এর থেকে অন্য অপরাধীরাও শিক্ষা নিবে এবং সব ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হবে। এসব দেখে সাধারন মানুষও ধীরে ধীরে মানবিক বোধসম্পন্ন হবে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখি একজন অপরাধী অপরাধ করেও ক্ষমতার বলে পার পেয়ে যায়। প্রায় ক্ষেত্রেই তার শাস্তিতো হয়ই না উপরন্ত ভিকটিম বা তার পরিবারের উপর বেড়ে যায় হুমকি ধমকি আর নির্যাতনে মাত্রা। আর এসব নিয়ে কিছুদিন পত্রপত্রিকায়ও বেশ হৈচৈ হয় তারপর আবার যেই সেই। একজন যৌন অপরাধী সমস্ত দোষ স্বীকার করার পর জামিনে মুক্ত হয় বা খালাস পেয়ে যায় বা লঘু দন্ডপ্রাপ্ত হয় কিভাবে!!!! সেটা ভেবে আমাদের প্রায় সময়ই অবাকই হতে হয়, যা অহরহই ঘটে থাকে। এই ভয়ন্কর প্রবনতাকে আমাদের অবশ্যই অবশ্যই ঠেকাতে হবে, রাষ্ট্রকে আর অনেক বেশী দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে। এরপর যেটুকু সামাজিক অবক্ষয় পরলিক্ষিত হবে সেটাকে না হয় সবাই মিলে প্রতিরোধ করা হবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ১০:৫৫