somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদমচরিত 012

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ দুপুর ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঈশ্বর জরুরি সভা তলব করিয়াছেন। ম্যানেজার পর্যায়ের স্বর্গদূতের চোখ ডলিতে ডলিতে আসিয়া সভায় বসিয়াছে। ঈশ্বর বুঢ়া সর্বদা কাকভোরে সভা ডাকিয়া থাকেন।

ঈশ্বর রুদ্র কণ্ঠে বলিলেন, "আমি গোপন সূত্রে সংবাদ পাইয়াছি, আদম নাকি নাস্তিক হইয়া গিয়াছে!"

স্বর্গদূতরা অস্ফূটে আর্তনাদ করিয়া ওঠে। মাশরাফিলের হাতে ধরা সানকি হইতে কফি ছলকাইয়া পড়ে। আদম এত বড় চো*না তাহা কেউ আগে বুঝিতে পারে নাই।

ঈশ্বর কহিলেন, "জেমসবন্ডাইল, খুলিয়া কহো।"

জেমসবন্ডাইল একটা বিড়ি ধরাইয়া কহিলো, "বন্ডাইল! জেমস বন্ডাইল!"

দূরে অপ্সরাদের কোয়ার্টার হইতে অস্ফূট গুঞ্জন ভাসিয়া আসিলো, "মরি মরি আহা ...।"

ঈশ্বর ওয়েস্টপেপারবাস্কেট হইতে এক কপি মৌদুধিপুরাণ বাহির করিয়া জেমস বন্ডাইলের দিকে ছুঁড়িয়া মারিলেন, কিন্তু সে ঘাপটি মারিয়া বসিয়া পড়ায় তা তাহার রগ ঘেঁষিয়া চলিয়া গেলো।

"বাজে প্যাচাল পাড়িলে তোর কপালে দুকখু আছে বলিয়া দিলাম!" ঈশ্বর হুঁশিয়ার করিলেন।

জেমসবন্ডাইল বিড়িটা ফেলিয়া দিয়া গলা খাঁকরাইয়া শুরু করিলো, "সমবেত সুধীমন্ডলী, ও আজিকে যাহারা শুনিতেছেন। আমি আমার বক্তব্য দীর্ঘায়িত করিবো না ...।"

এর মাঝে ঘটিলো এক অভূতপূর্ব ঘটনা। কোথা হইতে আদমের পালতু রামছাগল ছাগুরাম আসিয়া গুটি গুটি পায়ে হাজির! সে আসিয়া সোজা একটি ত্রিকোণাকৃতির আসনে বসিয়া মন্দ্রস্বরে বলিল, "জেন্টুলমেন, আমাদের সমুখে সমূহ বিপদ। আদম নাস্তিক হইয়া গিয়াছে। পাইকারি দরে আবোল তাবোল বকিতেছে। কিছু করিতে হইবে। আমি ঈশ্বরকে আহবান জানাইতেছি ইহার প্রতিকার লইবার। নতুবা আমি ঈশ্বরের উপর অনাস্থা প্রস্তাব তুলিবো স্থির করিতেছি।"

ঈশ্বর বাকরুদ্ধ হইয়া জেমসবন্ডাইলের দিকে তাকাইলেন। সে উঠিয়া ছাগুরামের পোঁদে লাথি মারিলো। ছাগুরাম কাতর ম্যাৎকার করিয়া কহিলো, "এখন একটু ব্যস্ত রহিয়াছি, পরে আসিয়া বিশদ কহিবো!" বলিয়া তিন লম্ফে প্রস্থান করিলো।

জেমস বন্ডাইল আবারও শুরু করিলো, "ইয়ো জনাবস! সেইদিন আমি ডিউটি শেষ করিয়া আদমের কুটিরের পাশ দিয়া ঘরে ফিরিতেছিলাম, হঠাৎ শুনিলাম ঈভ ও আদমের মধ্যে ব্যাপক কাজিয়া চলিতেছে। আদম কহিয়াছে, ঈশ্বর তাহাকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, তাহার পঞ্জরের একটি অস্থি দিয়া তাহার জন্য একটি সঙ্গিনী নির্মাণ করা হইবে। আদম নাকি তখন শুধাইয়াছিলো, সঙ্গিনী কী বস্তু। ঈশ্বর প্রতু্যত্তের চোখ টিপিয়া বলিয়াছিলেন, "ভো চীজ বড়ি হ্যায় মাস্ত মাস্ত।" পরবর্তীতে কনস্ট্রাকশন পিরিয়ড ফুরাইবার পর যখন হ্যান্ডওভার হয়, তখন সঙ্গিনী দেখিয়া আদমের ভালোই লাগিয়াছিলো। সে ভাবিয়াছিলো, তাহার হাতে লিখিবার দিন তবে ফুরাইলো। টাইপরাইটারে লিখিবার দিন শুরু হইলো। কিন্তু বাস্তবে ঈশ্বরের অঙ্গীকার যে একটি স্বর্গীয় ফাঁপর, তা সে একেবারে অস্থিতে অস্থিতে টেরটি পাইয়াছে। ঈশ্বর বরং ভাঁওতা দিয়া তাহাকে একটি সঙ্গমবিমুখ কাজিয়াবাজ রুমমেট গছাইয়া দিয়াছেন, যে ঢংঢাং করে কিন্তু কামের কাম করিতে দেয় না। ব্যাপারটা লইয়া সে খোদ ঈশ্বরের সহিত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আলাপ করিয়াছে, কিন্তু ঈশ্বর তাহাকে ক্রমাগত ভুঝুং দান করিয়া বঞ্চিত করিতেছেন। টাইপরাইটারটি পাশে রাখিয়া তাহাকে দিস্তার পর দিস্তা হাতে লিখিতে হইতেছে। ঐদিকে ঈশ্বর সাম্য ও সংযমের দোহাই তুলিয়া ভাঁওতাবাজি অব্যাহত রাখিয়াছেন। শুধু তাই নয়, জ্ঞানবৃক্ষের চতর্ুর্দিকে প্রহরা ত্রিগুণিত করিয়াছেন। এহেন ঈশ্বরের ওপর আর যা-ই হোক, বিশ্বাস রাখা যায় না।"

জেমসবন্ডাইল শ্রান্ত হইয়া কফির সানকিতে একটি চুমুক দেয়।

ঈশ্বর শুধান, "ঈভ কী কহিলো?"

জেমসবন্ডাইল আবারও একটি বিড়ি ধরাইয়া কহিলো, "ঈভ কহিয়াছে, সামান্য একটা জ্ঞানবৃক্ষের ফল এক কামড় যে খাইয়া আসিতে পারে না এমন পুরুষের মুখে মুড়ো খ্যাংড়া!"

ঈশ্বর বিমর্ষ মুখে বলিলেন, "আরে এই ঈভ দেখি দিনকে দিন হান্টারওয়ালি হইতেছে। তাহার এতো ভয় কীসের, বাচ্চা তো আর আসিবে না পেটে!"

জেমসবন্ডাইল সাগ্রহে কহিলো, "আমি কি তবে একদিন তাহাকে এই ব্যাপারে উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দিয়া আসিবো? একেবারে জলবত্তরলম যাহাকে বলে আর কি ... যে আমাকে না বলিতে পারিবে না!" সে পকেট হইতে আয়না আর চিরুনি বাহির করিয়া এক পশলা টেরি বাগাইয়া লইলো।

ঈশ্বর কহিলেন, "মারিয়া পস্তা উড়াইবো। ঐসব চলিবে না। তারপর কহ।"

এমন সময় আবারও ঘটিলো সেই দুর্ঘটনা। ছাগুরাম আবারও কোথা হইতে আসিয়া সভায় ঢুকিয়া কহিলো, "আদম নাস্তিক হইয়াছে। তাহার নাস্তিকতা দেখিয়া আমার হাসি পায়। কিন্তু আমি তাহার শাস্তি চাই। নাস্তিকদের স্বর্গ হইতে বহিষ্কার করিতে হইবে। তা না হইলে জ্বলিবে আগুন ঘরে ঘরে। ঈশ্বর অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন, নতুবা কখন কী ঘটিয়া যায় কিচ্ছু বলা যায় না।"

এইবার গুজরিল আসিয়া চোখা একটি দন্ড লইয়া ছাগুরামের পোঁদে খোঁচা মারিলো। ছাগুরাম প্রবল ম্যাৎকার করিয়া উঠিয়া কহিলো, "জরুরি কাজে একটু বাহিরে যাইতে হইতেছে, ফিরিয়া আসিয়া সাইজ করিবো!" বলিয়া তিন লম্ফে পলায়ন করিলো।

ঈশ্বর কহিলেন, "ছাগুরামের সমস্যা কী? আমার উপর আদমের অবিশ্বাস জন্মিলে তাহার কী সমস্যা?"

জেমসবন্ডাইল ঈশ্বরের কানে কানে ফিসফিস করিয়া কী যেন কহিলো। ঈশ্বরের মুখ গম্ভীর রক্তাভ রূপ ধারণ করিলো। তিনি কহিলেন, "ছি ছি। টাইপরাইটার ব্যবহার করিতে না পারিয়া শেষ পর্যন্ত ছাগুর পশ্চাতে উপগমন! আদম তো ভারি অশ্লীল!"

গুজরিল বলিলো, "হাঁ, পবিত্র গন্থে দেখিলাম, উহার কিছু বংশধর একে অন্যের পশ্চাতে এই কুকর্ম সাধন করিবে। আমাকে তখন গিয়া তাহাদের শহর উৎপাটন করিয়া লবণ হ্রদ তৈয়ার করিতে হইবে।"

ঈশ্বর চটিয়া কহিলেন, "ঈভের কি টাইপ করিতে ইচ্ছা জাগে না?"

জেমসবন্ডাইল সাগ্রহে শুধাইলো, "আমি কি খোঁজ লইয়া দেখিয়া আসিবো?"

ঈশ্বর কী যেন বলিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, এমন সময় ছাগুরাম আবার আসিয়া হাজির! সে সটান আসিয়া কহিলো, "এইসব বাচ্চা ঈশ্বরদের নিয়ে এই একটা সমস্যা। নাস্তিকদের সমস্যা বলিয়া মনে করিতে চায় না। এইসব বাচ্চাদের কীরূপে বুঝাইবো যে নাস্তিকতা কত ভয়াবহ সমস্যা?"

ঈশ্বর কালেভদ্রে চটেন। তিনি চটিয়া কহিলেন, "অ্যায় কে আছিস, চো*নাটাকে ধরিয়া ভালো করিয়া পিছমোড়া করিয়া বাঁধিয়া লইয়া আয়। তাহার পর একটি টেংরি ভাঙ্গিয়া হাতে ধরাইয়া দে।"

গুজরিল আগাইয়া গেলেরা, নৃশংস কাজে তাহার হাত পক্ক, এর এ তো অজশংস কাজ। ছাগুরাম কাতর ম্যাৎকার করিয়া উঠিলো।

তদ্যাবধি ছাগুরাম একটি পদ হারাইয়া ত্রিভূজ হইয়া ঘুরিতেছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৩৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×