কুয়ালা লামপুর-সিঙ্গাপুর ঘুরে এসে বেশ কয়েকটি পর্ব লিখেছি। আমি আমার প্রথম পর্বেই লিখেছিলাম যে এই ট্যুরের গল্প থেকে কেউ তেমন কোন আননদ বা রেফারেন্স পাবেন না। তবুও যা কিছু দেখেছি তা লিখলাম। যদি কারো কাজে লাগে।
সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া খুব কাছের দেশ হলেও ভিসাক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। যে কারনে মালয়েশিয়া যাওয়ার আগ্রহ যতটা পূরন করা সম্ভব সিঙ্গাপুরেরটা করতে একটু বেশীই কষ্ট করতে হবে। মালয়েশিয়াতে যে কয়টা স্পটে সাধারনত সবাই যায় সেগুলো দেখতেও ৭দিনের বেশী লাগার কথা। তাই একসাথে ২/৩ দেশ দেখা কঠিন। কেউ যদি আমার মত "গিয়েছি" বলার জন্য যায় তো অন্য কথা। মালয়েশিয়ার প্রধান আকর্ষন আর গেটওয়ে দুটোই কুয়ালা লামপুর। কুয়ালা লামপুরেই পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। এই বিশাল বিল্ডিং দেখাটাই একটা বিশাল অভিজ্ঞতা। এমনকি শুধুমাত্র এই ভবনের জ্ঞান আহরন করতে করতেই ১দিন চলে যেতে পারে। আমার ইতিহাসে আগ্রহ নেই। এই যে বিশাল ভবন তা দেখেই আমার মনে হল 'স্বার্থক হলাম'। পর্যটন নগরী কুয়ালা লামপুরে থাকার জায়গার কোন অভাব নেই। অনলাইনে সার্চ দিয়েই অনেক অনেক হোটেলের খোজ দ্য সার্চ পাওয়া যাবে। আমি অন্যের রেফারেন্সে বিরজায়া টাইমস স্কোয়ারে ছিলাম। যারা বাচ্চা নিয়ে যাবেন তাদের পানি গরম বা বাচ্চার খাবার রান্নার ব্যাপার থাকে। তাই এই খবরটুকু নিয়েই যাবেন যে সেখানে এই ব্যবস্থা থাকবে কিনা। আর যাবার প্লেন টিকেট যার যার সাধ্য অনুযায়ী। জিএমজি'র কারনে নাকি এয়ার এশিয়া বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে যদিও জাপানের মত দেশে চলছে। আবার কালে কালে জিএমজি ও বিলিন হয়ে গিয়েছে। এখন মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স, বিমান আর ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স যায়। আমি বিমানটাই প্রেফার করব। আর বিমান ছাড়ে সন্ধ্যা ৭.১৫ এ আর পৌছে স্থানীয় সময় রাত ১টা। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেষনে তেমন দেরী না হলে এয়ারপোর্টেই বাস পেয়ে যাবেন কুয়ালা লামপুর যাওয়ার। এত রাতে ট্রেন পাওয়া যাবে না আর ট্যাক্সি নিয়ে যাওয়াটা অনেকেই সাজেস্ট করেন না। শেষ বাস ছাড়ে রাত ১.৩০টায়। আবার শুরু হয় ভোর ৬টায়। আর তা পাওয়া না গেলে বিশাল এই এয়ারপোর্টেই রাত কাটাতে পারেন। মসজিদের ভিতর উষ্ঞ থাকুন এই সময়টুকুতে অথবা ওয়াই-ফাই দিয়ে সময় কাটান। কুয়ালা লামপুর শহড়ে মনোরেল চলে। ট্যাক্সি না নেয়াই ভাল। আর একান্তই নিতে হলে জেনে রাখুন নীল ট্রাক্সি কস্টলি। এখানে খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
কুয়ালা লামপুর থেকে ২ ঘন্টার ডিসটেন্সে অনেক স্পটই আছে যেখানে যাওয়া যেতে পারে। গ্যান্টিন হাইল্যান্ড, সানওয়ে লেগুন, পুত্রজায়া, বার্ডস পার্ক ইত্যাদি আছে। আবার লম্বা বাস+ফেরী জার্নী করে বা এয়ার এশিয়ায় উড়ে ল্যাংকাউই যেতে পারেন। অনেকেই জহর বাহরুতে যায়। আমি এর কোনটাতেই যাই নি বলে কিছু বলতে পারছি না। তবে এর প্রায় একই সময় ও খরচে সিঙ্গাপুর যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল ও আরামদায়ক হবে ডিরেক্ট বাসে যাওয়া। টাইমস স্কোয়ার বা এয়ারপোর্ট থেকেই বাস ছাড়ে। ভাড়া ৪৫ রিঙ্গিত, জার্নী ৬ঘন্টার আরামদায়ক। মাঝে ২বার বিরতি আছে। বাসেই ইমিগ্রেষন ফরম ফিলাপ করে রাখুন। কারন সিঙ্গাপুর কাস্টমসে আপনার জন্য বাস সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট অপেক্ষা করবে। বাস মিস করলে একই কোম্পানীর পরের বাসে যেতে পারবেন। ইমিগ্রেষন পয়েন্টে সিঙ্গাপুরিয়ান বা মালয়েশিয়ানদের লাইনে দ্রুত কাজ হওয়ার কথা। এই বাস বিস্ট্রোতে থামে। সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে আপনার হোটেলে চলে যেতে পারেন। হোটেলও অনলাইনে খোজ করুন বা আগে গিয়েছে এমন কোন বন্ধুকে জিজ্ঞেস করুন। সাধারনত বাংলাদেশের ট্যুরিস্টরা সেরাঙ্গুনে থাকে। এখানে বাংলাদেশীদের বেশী দেখা যায় আর মোটামোটি কম খরচে থাকা যায়। এই কম খরচ হল ৭৫০০-১০০০০ টাকা পার নাইট রুম ভাড়া। সিঙ্গাপুরে খুবই কম খরচে ঘুরা যাবে যদি আপনি মিজানুররহমানসুমনের এই পোস্ট (Click This Link) ফলো করেন। আমি করেছি এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে তার কারনে আমি খুব কম খরচে এবং কমফোর্টলি ঘুরেছি। ম্যাপ দেখে দেখে আপনার যেটায় আগ্রহ আছে সেখানে ঘুরতে থাকুন। সিঙ্গাপুরের এমআরটিতে না চড়লে দেশটা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানবেন না।
তারও আগে সিঙ্গাপুর ভিসা নিতে হবে। সিঙ্গাপুরের ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য সেই দেশ থেকে ইনভাইটেশন লাগবে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স বা টাইগার এয়ারের বাংলাদেশ এজেন্টের কাছ থেকে টিকেট কাটলে ইনভাইটেশনের সমস্যা হবে না। অথবা পরিচিত কেউ যদি সেদেশে স্থায়ীভাবে বাস করে তবে তার কাছ থেকেও আনিয়ে নিতে পারেন ইনভাইটেশন লেটার।
মালয়েশিয়া/সিঙ্গাপুরে যে কোন রোড/এয়ারপোর্ট/এমআরটি স্টেষনে হারানোর ভয় নেই। সুন্দর করে নির্দেশিকা দেয়া আছে। আর আমাদের বাংলাদেশী ভাইরা তো সর্বত্র। স্বদেশীদের দেখে ভালই লাগে। তবে আফসোস হয় কেন তারা আরেকটু ট্রেনিং নিয়ে যায় না। সেক্ষেত্রে তাদের কাজের উন্নতির যথেষ্ট সুযোগ ছিল। যে সুযোগটি ভারতীয় বা শ্রীলঙ্কানরা নিয়ে নেন।
আমি এমন কোন ট্যুরিস্ট না যে কোন একটি দেশ নিয়ে খুব ভাল করে লিখব বা দেখব। সহজভাবে যা কিছু দেখেছি তাই লিখলাম। যদি কারো কিছু জানার থাকে তবে মেইল করতে পারেন বা কমেন্টে লিখতে পারেন।