তখন ভার্সিটি তৃতীয় বর্ষে, হলে থাকি। রাত আনুমানিক ২টা- পরদিন সকালে পরীক্ষা, তাই পরীক্ষার আগের রাতের পড়ুয়া আমার মতন অনেকেই ঘুমায় নি। দু'একজন আল্ট্রা ব্রিলিয়ান্ট (সাড়া বছর ব্যপীয়া পড়ুয়া) ছাড়া সাড়া হলই প্রায় জাগ্রত। আমার ২ রুমমেটেরও একই দশা ছিলা। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিব এমন সময় দেখি এক দল পুলিশ ভাইয়েরা হলের রুমে রুমে সার্চ করছে। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে দু'একটি কক্ষ ব্যতীত সব কক্ষে শুধু দরজা খুলে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে, যেগুলোতে কিছু পাওয়ার কথা ছিল শুধু ওগুলোতেই ভালো করে খুঁজে দেখছে। যদিও পুলিস আসার আগেই ঐসব কক্ষে যা থাকার কথা ছিলা তা পগারপাড়।হঠাৎ পুলিশের আগমনের কারণ দুপুরে ক্যাম্পাসে দু'পক্ষে মারামারির সময় কিছু রড, স্টীল পাইপ, রামদা, চাপাতি দেখা গিয়েছিল, যদিও সামর্থ্যের সবগুলো অস্ত্র ব্যবহার কোন পক্ষই করেনি। কিন্তু সুবাদে রাতে পুলিশ রেইড দেখার সৌভাগ্য জীবনে প্রথমবারের মত হয়েছিল। কোন এক অজানা কারণে আমার কক্ষে সেদিন কেউ আসে নি (কারণ সহজ, ৩ টা নিরীহ ছেলে )
আজ আবার মধ্যরাত। হলে থাকি না প্রায় বছর খানেক। চাকরি-বাকরি নাই, তাই সকালে ওঠার টেনশনও নাই। বার্সেলোনা আর দেপোর্তিভোর খেলা দেখছিলাম আর ফেবুতে চ্যাট করছিলাম
আজকেও রাত আনুমানিক ২টা। আমার ঘর বরারব পাশের বাসায় প্রায় ২০-২৫ মিনিট কে যেন গেট চাপড়াচ্ছে। যে গরম, তাই ঘরের জানালাদ্বয় আর ব্যালকোনির দরজা খোলা- বাইরের চমৎকার মিষ্টি বাতাস খাচ্ছিলাম ( কাজ নাই তাই হাওয়া খাই)। দেখি তো কোন পাগলে এতক্ষণ গেট চাপড়ায় আর কেউ খোলে না !
আমার পাশের বাসায় বাড়ির মালিক থাকেন না, তার নিবাস অন্যত্র। ঢাকার এমন উচ্চ বাসা ভাড়া পাওয়ার কারণে একসাড়ি আধাপাঁকা ঘর বানিয়ে ঘরপ্রতি ভাড়া দিয়ে খালি জমি ফলনশীল করছেন। যাই হোক আসল কথায় আসি- আমি আমার ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে পাশের বাসার বারান্দায় তাকিয়ে টাস্কি ৩/৪ পোষাকধারি পুলিশ ভাই এক ঘরের দরজায় ক্রমাগত কড়াঘাত করে যাচ্ছেন।
আমি দ্রুত আমার ঘরের বাতি নিভিয়ে দিয়ে আমার জানালা দিয়ে জীবনে দ্বিতীয়বারের মত দেখলাম পুলিশি রেইড। অপেক্ষায় রইলাম কি ঘটে তা দেখার, প্রায় ২০ মিনিট এক ঘর এলোমেলো করে খুঁজেও তাহারা যাহা খুঁজিতে এসেছিলেন তা পেলেন না। আমি জানি না, তাহারা কি খুঁজছিলেন, কিন্তু অনুমান করতে পারি। কিন্তু বিধি বাম, ঐ কক্ষে বসবাসকারী এক মহিলা ও তাহার স্কুলগামী এক বাচ্চা। তাহার স্বামী নাকি দু'দিন পরপরই ইন্ডিয়া যান কি এক কাজ করতে, তিনি ছিলেন না। মহিলার উচ্চ কণ্ঠ, "বলেন কে বলছে?"
তারপর পুলিশ ভাই্য়েরা চলে গেলেন আমার ২০ মিনিট (+ ২০ মিনিট , এটা লিখতে) নষ্ট হলো, কিন্ত যে এক্সাইটমেন্ট দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলাম সেটা হলো না।
দ্বিতীয়বারের মত আসামী ধরে নেয়া আমার দেখা হলো না।
বি:দ্র: মহিলা দোষে দুষ্ট, সারাদিনই কিছুক্ষণ পরপরই কিছু যুবককে দেখা ঐ মহিলার এক হাতে টাকা দিয়ে আরেক হাতে কি যেন নিয়ে যায়।
আমরা আমজনতা, কিছু বলতে পারি না। কারণ পাড়ার উঠতি মাস্তান, প্রতিষ্ঠিত মাস্তান, হাফ মাস্তানদের আনাগোণা বড় বেশি। খবর পেয়ে ঐ বাড়ির বাড়িওয়ালা মহিলাকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পাড়ার মাস্তানদের পাতানো বোন বা খালাকে বাসা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা যায়নি।
আমি এত কিছু জানি, কেবলমাত্র এখন কামলা জীবনে বিরতি কাটাচ্ছি বলেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:০৭