শুওরের বাচ্চা।
দাঁত কিড়মিড় করে শব্দটা বললেন রফিক সাহেব। যাকে বললেন তার কান পর্যন্ত অবশ্য গেল না। কারণ ড্রাইভার ততক্ষণে নেমে রিকশাওয়ালাটাকে দুটো চড় বসিয়ে দিয়েছে। দেবে না বা কেন? সাহস কত ব্যাটার! গাড়ির উপর রিকশা তুলে দেয়। রিকশার সাথে ঘষা খেয়ে গাড়ির একপাশে খানিকটা রং উঠে গেছে। একে চড় দিবে না তো কি কোলে বসিয়ে আদর করবে? এসব ছোটলোকের বাচ্চাদের........। ভাবনায় ছেদ পড়ে তার। ড্রাইভার ততক্ষণে গাড়িতে ফিরে এসে আবার ইঞ্জিন চালু করেছে। তার মনে বোধহয় ভালোই আনন্দ। গুনগুন করে গানও গাইছে। "বুঝলেন স্যার, ব্যাটার......।" "চোপ হারামজাদা!" ড্রাইভারকে এক ধমকে থামিয়ে দিলেন রফিক সাহেব। মন মেজাজ বেশি ভালো নেই।
মেজাজ খারাপের যথেষ্ট কারণও আছে বৈকি। রিনা গতকাল রাগের মাথায় কাজের মেয়েটার গায়ে গরম পানি ঢেলে দিয়েছে। মেয়ে মানুষের যা স্বভাব। সেই মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি। গ্রাম থেকে চৌদ্দগুষ্টি চলে এসেছে। তারা নাকি আর ফাতেমাকে তার বাসায় কাজ করতে দেবে না। এতটুকু হলেও হত। ফাতেমার কোন খালাতো না চাচাতো ভাই বের হয়েছে। সেটা খুব জ্বালাতন করছে মামলা করবে মামলা করবে বলে। মনে মনে একটা অশ্রাব্য গালি দেন রফিক সাহেব। দুই বেলা ঠিকমত খাওয়ার মুরোদ নাই। তেজ কত!
অনেক্ষণধরে গাড়িটা সিগন্যালে আটকে আছে। বাইরে কাঠফাটা রোদ্দুর। তবে তার উত্তাপ রফিক সাহেবের শরীর স্পর্শ করছে না। গাড়িতে এসি চলছে। শীতল বাতাস ঘিরে রয়েছে তাকে। ড্রাইভারকে বললেন গান ছাড়তে। মাথাটা ঠান্ডা করা দরকার।
গাড়িতে গান চলছে। রবীন্দ্র সংগীত। নিচু গলায় শিল্পী গেয়ে চলেছেন, "আমি চিনি গো চিনি তোমারে.....।" সিটের উপর গা এলিয়ে দিলেন তিনি। আজকের সমাবেশে কী বলবেন সেটাই বারবার ঝালাই করছেন। জননেতা রফিকউদ্দিন আহমেদ চোখ বুঁজে বিড়বিড় করতে লাগলেন, "ভাই ও বোনেরা! আজকের এই মহান মে দিবসে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল মেহনতি মানুষদের যারা.........।"
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫২