ছোটবেলায় লোকটা ছিল আমার কাছে বিরাট বিস্ময়। কখনো দেখতাম লোকটার দুইটা হাত। আবার মাঝেমধ্যে দেখতাম একটা। লোকটার ডান হাতটা হটাৎ হটাৎ কোথায় যেন গায়েব হয়ে যেত। পরে জেনেছি ওটা নকল হাত। কখনো লাগান। কখনো লাগান না। আরো পরে যেটা জেনেছি উনার ওই হাতটা নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় গুলির আঘাতে উড়ে গিয়েছিল।
এই রহস্য উন্মোচনের পর পরই আমি নতুন এক রহস্যের মুখোমুখি হই। আমি একসময় আবিষ্কার করি লোকটা আসলে একটা পাগল। তার পাগলামিটা আজিব কিসিমের। উনি বেশিরভাগ সময় রাস্তায় হাঁটেন। হাঁটার সময় উনি পাগলামিটা করেন। উনার চলার পথে যতগুলো আবর্জনা পড়ে, টুকরো কাগজ, শুকনো পাতা, চিপসের প্যাকেট, খালি বোতল, পুরনো পত্রিকা, সব উনি সযত্নে কুড়িয়ে নেন। সারাদিন তিনি এসব যোগাড় করেন। রাতের বেলা পুড়িয়ে ফেলেন। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। না। উনি পাগল নন। উনি সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ। উনার অভাবও নেই। আমাদের এলাকায়ই একটা বাড়ির মালিক উনি। সুস্থ মানুষেরও কিছু পাগলামি থাকে। এটা উনার তেমনই একটা পাগলামি। পাগলামিটার জন্ম ভালোবাসা থেকে। দায়িত্ববোধ থেকে।
একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। নিজের একটা হাত উৎসর্গ করেছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। অপর হাতটি দিয়ে পরম মমতায় স্বাধীন দেশের আবর্জনা পরিষ্কার করে যাচ্ছেন। একা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭