শুরুতে যখন একের পর এক ভিন্ন চিন্তার মানুষকে হত্যা শুরু হল তখন আমি খুব বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। ইদানিং আর বিষয়টা আমাকে তেমন নাড়া দেয় না। একজনকে মেরে ফেলা হলে আমি নিজের অজান্তেই পরের জনের মৃত্যুর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলি।
অনলাইনে অল্পবিস্তর লেখালেখির জন্য ভিন্নচিন্তার অনেকের সাথেই আমার পরিচয় আছে। কারো কারো সাথে অসাধারণ কিছু সম্পর্কও তৈরি হয়েছে। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও যে একজন আরেকজনের আত্মীয় হতে পারে সেটা তাদের কয়েকজনের সাথে আমার সম্পর্ক দেখলেই বুঝে ফেলা যায়। আমার কখনো তাদের আলাদা কিছু মনে হয় নি। ইদানিং মনে হয়। মনে হয় যখন তাদের চিন্তিত মুখ দেখি। যখন তাদের হতাশাগ্রস্থ চেহারার দিকে তাকাই। না, তাদের চোখে ভয় নেই। আছে বেঁচে থাকার আকাঙ্খা। ওপারের জীবনে বিশ্বাস নেই বলেই হয়ত আকাঙ্খাটা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। আমি তাদের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকি। তাদের চোখে চোখ রাখতে পারি না। নিজের বিশ্বাসটার জন্য তাদের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আমি জানি এই অপরাধবোধ বেশিদিন থাকবে না। কারণ পরবর্তী শিকার হয়ত তাদেরই কেউ। কয়েকজনকে নাকি ইদানিং বেশ ফলোও করা হচ্ছে। একে একে তাদের সবাইকে মেরে ফেলা হবে। ভালেই হল। তখন আর আমাকে অপরাধবোধে ভুগতে হবে না।
আমি জানি ওরা কী চায়। ওরা এদেশে ভিন্নমতের কাউকে বাঁচতে দেবে না। এখন টার্গেট মুক্তমনারা। এরপরের টার্গেটই আমরা। যারা নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দাবি করি তারা। তারপরের টার্গেট হবে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা। তারপর ধর্মসহিষ্ণু শান্তিপ্রিয় মুসলিমরা। একে একে সবাইকে মেরে ফেলবে ওরা। শুধু বেঁচে থাকবে কিছু ধার্মিকরূপি অমানুষ। ধর্মপ্রতিষ্ঠার নামে যারা ধর্মের গায়ে এঁকে দেয় রক্তের চিহ্ন। তাদের দাঁতে রক্ত। তাদের নখে রক্ত। তাদের সাদা পোশাক রক্তে লাল। তাদের হাতে রক্ত শুকিয়ে কুচকুচে কালো হয়ে গেছে। ওরা মানুষ না। মানুষরূপি হিংস্র কুকুর। ওরা যুক্তি জানে না। ওরা তর্ক করে নিজের ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। তাই অস্ত্রই তাদের একমাত্র ভরসা।
আমি লজ্জিত। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা কর বাংলা মা। আমি আমার ভাইদের রক্ষা করতে পারি না। আমাকে ক্ষমা কর ৩০ লক্ষ শহীদ। তোমার ছেলেদের আমি বাঁচাতে পারি না। আমাকে তোমরা মাফ করে দাও। প্লিজ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০২