“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।"
ঠিক তাই। কথায় বলে, প্রত্যেক সফল পুরুষের পেছনেই কোন না কোন নারীর অবদান থাকে। লোকের কথা বাদ দিন। আপনি একবার নিজের দিকে তাকান তো? এবার দেখুন আপনার জীবনে নারীর অবদান কতটুকু। এক নারী আপনাকে গর্ভে ধারণ করেছে। আপনার বোন একজন নারী। আপনার সহধর্মিণী, যে তার বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে ছেড়ে আপনার হাতটা ধরেছে। যে আপনার জন্য, আপনার পরিবারের জন্য নিজের সব সুখ বিসর্জন দিয়েছে সেও একজন নারী। আপনার প্রেমিকা, যে তার ভালোবাসার সবটুকু আপনাকে দিয়ে দিয়েছে সে একজন নারী। আপনার জীবনে আপনি সবার অবদান অস্বীকার করতে পারবেন। তিনজন ছাড়া। আপনার সৃষ্টিকর্তা, আপনার বাবা আর নারী।
তার আপনার মতই দুটো হাত আর দুটো পা আছে। তার মস্তিষ্কেও দশ হাজার কোটি নিউরন সেল। তার সাথে আপনার পার্থক্য সৃষ্টি করেছে ছোট্ট একটা ক্রোমোজোম। একটা ছোট্ট ক্রোমোজোম কখনো বিভেদ তৈরি করতে পারে না। বিভেদ তৈরি করেছে আমাদের সমাজ। কেন এই বিভেদ? শারীরিক গঠনের পার্থক্য? তার শরীর নাজুক? গোটা মানবজাতিকে যে গর্ভে ধারণ করেছে তার শরীর নাজুক? হাসালেন ভাই।
বেগম রোকেয়া একবার একটা কথা বলেছিলেন। কথাটার সারমর্ম হল এই, সাইকেলের দুটো চাকা সমান না হলে যেমনি সাইকেলটা বেশিদূর যেতে পারে না তেমনি দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেককে ফেলে রেখে দেশটা বেশিদূর এগোতে পারবে না। সারা পৃথিবী কতখানি এগিয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন তো সেটা নারীকে বাদ দিয়ে কিনা?
আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা এখনো পরিপক্ক হই নি। আমরা এখনো ধর্ষণের পর ধর্ষকের দিকে না তাকিয়ে ধর্ষিতার পোশাকের দিকে তাকাই। সেখানে খুঁত খুঁজি। প্রয়োজনে ধর্মের দোহাই দেই। আমি জানতে চাই আমাদের ধর্মের কোথায় বলা আছে শালিন পোশাক না পরলেই একটা মেয়েকে ধর্ষণ করতে হবে? তাকে রাস্তাঘাটে উত্তক্ত করতে হবে? আমি ধর্ম সম্পর্কে খুব একটা জানি না। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমার বাবা খুব ধার্মিক মানুষ। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি উনার কাছে অনেক লোক আসে পরামর্শ চাইতে। মাঝে মাঝে মহিলারাও আসে। সবাই নিম্নবিত্ত মহিলা। খেটে খায়। তাদের পোশাক আশাক সবসময়ই মলিন থাকে। কখনো কখনো ছেঁড়া। আমার বাবা তাদের সাথে কথা বলার সময় সবসময় হয় নিচে নয় অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলেন যেন তারা বিব্রতবোধ না করেন। সেখান থেকেই আমি শিখেছি ধর্মকে মানতে হলে অন্যের পোশাককে দোষারোপ নয়। নিজের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে হয়। আজকাল ইভটিজার রা শুক্রবারের জুম্মার নামাজ বাদ দিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মেয়েদের বিরক্ত করে আর তারপর বলে, মেয়েরা ইসলামি পোশাক না পড়লে এমন তো হবেই!
ধরুন আপনি আপনার স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য মারধোর করেন। আপনার একটা বোন আছে। তাকে একসময় আপনি বিয়ে দিলেন। আপনি প্রার্থণা করছেন বোনটা যেন সুখে থাকে। আপনি কি ভেবেছেন, আরেক ভাই তার বোনকেও এমনি করে আপনার হাতে তুলে দিয়েছিল? তার বোন সুখে নেই। আপনার বোন সুখে থাকবে ভাবলেন কী করে?
এখন সময় বদলাবার। বদলাতে হবে আপনাকে। বদলাতে হবে আমাকে। পরিবর্তন প্রয়োজন সবার। এটা কিন্তু একদিনে হুট করে হবে না। কিন্তু শুরুটা নাহয় হোক আজ থেকেই। চলুন পাল্টাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫