মানব জাতির জন্মের পর থেকে শুরু হয় লড়াই। এই লড়াই কিন্তু যে সে লড়াই না। এক্কেবারে জান নিয়ে টানাটানি। তবে, এসকল জান খুব সাধারণ কিছু মানুষের কিনা, তাই তার কোন মূল্য নাই। বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতর স্বার্থ বলী দেওয়াই যায়। আসুন দেখি মানব জাতির মধ্যে লড়াইয়ের কারণসমূহ কী কী:-
১. ধর্ম- এইটা নিয়া লিখতে ভয় লাগে। কখন কোপ খাইতে হয় কে জানে। এই ধর্ম নিয়া যত লোক পৃথিবীতে মারা গেছে সেইটা হিসাব করতে গেলে দুনিয়ার সব মানুষরে গুনতে বসায়ে দেওয়া লাগব। পৃথিবীর ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯৯৯ দেশে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের দিবারাত্রি ব্যাম্বু দেওয়া হয়। খালি যে অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষ মরে তা কিন্তু না। একই ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন মতাবলম্বী মানুষও একটা আরেকটারে কচুকাটা করে থাকে। যেমন, প্রাচীন ভারতে আর্য অনার্য গ্যাঞ্জাম কিংবা অধুনা বিশ্বের সুন্নি-শিয়া।
ক্ষমতা- এইটা নিয়ে লেখা আরো রিস্কি। আগেরটাতে তাও কোনমতে কল্লা বাঁচানো যায় কিন্তু এইটার খপ্পরে একবার পড়লে নিজের সহ বর্তমান এবং আগামী ভবিষ্যতের চৌদ্দ দু গুণে আটাশ গুষ্টির বাঁচার কোন সম্ভাবনা থাকে না। দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি মানুষ সম্ভবত এই কারণেই মারা গেছে। আরে ব্রো, ক্ষমতা আছে তো সব আছে, ক্ষমতা নাই তো কিছুই নাই। তাই তোমার যাতে সব থাকে সেজন্য আরেকজনের সব কাইড়া নিতে দোষের কিছু না। চালায়া যাও।
বর্ণ- ”যেহেতু তোমার গায়ের রং কালা সেহেতু তুমি আমার চাকর। আমি যা কমু তোমার তাই শুনতে হইব।" যুক্তি অব দ্য সেঞ্চুরি। ঠিকই আছে। কালোরা আবার মানুষ নাকি? ভাল্লুকের গায়ের রং কালো। তোমার গায়ের রংও কালো। সুতরাং ভাল্লুক দিয়ে আমি রাস্তায় সার্কাস দেখাতে পারি তোমাকে দিয়ে কেন পারি না? ম্যান্ডেলা সাহেব হয়ত আমার মত কৃষ্ণবর্ণা কন্যার শ্বেতবর্ণের লোকের হাতে মৃত্যু বন্ধ করেছেন তবে আমার বিবাহের সময় কিন্তু পাত্রপক্ষ ঠিকই ফিসফিস করবে। “মেয়ে তো কালো। চল অন্য বাড়িতে যাই।" আর যে হৃদয়বান ব্যাক্তি আমাকে বিবাহ করিবেন তাহার ভাবখানা এমন হবে যেন তিনি আমাকে বিবাহ করিয়া মস্ত বড় পূন্য করিয়াছেন। যেন আমার বিবাহ না হইলে আমি মরিয়া যাইতাম। এবং যেহেতু তিনি আমাকে মরণের হাত হতে রক্ষা করিয়াছেন সেহেতু আমার উপর তাহার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। শুধু এই বঙ্গদেশের কথাই কেন বলিতেছি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত অতি উন্নত আর অতি সভ্য দেশেও সাদা এবং কালোদের মধ্যে অদ্যাবধি ক্যাচাল চলে।
জাতি- মানব জাতি আজ আর মানব জাতি নাই। তারা আজ বিভিন্ন উপজাতিতে বিভক্ত। আরব, ইংরেজ, বিহারি, মঙ্গোল, ভারতীয়, ইউরোপীয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এসকল উপজাতিরা একজন আরেকজনের সাথে গ্যাঞ্জামে লিপ্ত হয় এবং মারা যায়। মরুক গা। তাতে আমাদের কী? উদাহরণ- আমাদের হিটলার কাকু। উনার আত্মজীবনী খানা পড়লে মনে হয় দুনিয়াতে একমাত্র জার্মানরাই মানুষ। বাকি সব যথাক্রমে গরু- ছাগল- ভেড়া এবং অন্যান্য।
ট্যাকা- ট্যাকা ছাড়া দুনিয়া অচল। ট্যাকা না থাকলে কারো পাত্তা নাই। সুতরাং ট্যাকা কামাও। আরেকজনেরটা মাইরা হইলেও কামাও। তোমার ঘরে পোলাও পাক হয়? আরেকজন কোনমতে পান্তাভাত খাইয়া থাকে? তাতে কি? তার ঐ পান্তা ভাত কাইড়া না খাইলে তোমার ষোলোআনা পূর্ণ হইব না।
উপরের লেখার সারমর্ম কিন্তু একটাই। কিছু জ্ঞানী ব্যাক্তি মনে করেন পৃথিবী থেকে শুধু ধর্ম উঠায়ে দিলে কিংবা শুধু সাদা কালো তফাত বিদায় করলে, অথবা সমাজতন্ত্র কায়েম করলেই কেবল পৃথিবীর সব অশান্তি মঙ্গল গ্রহে স্থানান্তরিত হইব। এর চেয়ে বড় মিছা কথা দুইটা নাই। আরে ভাই, তফাৎ তোর জাতে না। তফাৎ তোর মনে। মন থেকে বিভেদ দূর কর, দেখবি দুনিয়ায় বিভেদ বলতে কিছু নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০২