পুরনো জিনিস নতুন করে লেখার যৌক্তিকতা নিয়ে আপনার মত আমারো সংশয় আছে। তারপরো লিখছি। যেটা বিশ্বাস করি সেটা নিয়ে আজীবন লেখার মানসিকতা আমার আছে।
আমরা তো জানি, ১৯৭১ সালে আমাদের দেশে একটা যুদ্ধ হয়েছিল। স্বাধীনতা পক্ষের লোকদের মতে সেটা মুক্তিযুদ্ধ এবং বিরোধীদের মতে গন্ডগোল (তারা সত্যিই এটা বলে! আমার নিজ কানে শোনা)। গন্ডগোলবাদীদের কথা নাহয় বাদ দিই। চাঁদেও কলঙ্ক থাকে। কলঙ্ক কলঙ্কের জায়গায়ই থাক। আমরা বরং চেতনাতেই ফিরে যাই। তো, এই যে একটা যুদ্ধ হল, এত এত লোক মারা গেল, এত নারী ধর্ষিত হল সেটার নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে। সহজ কথায় এই উদ্দেশ্যটাই হল চেতনা। এই চেতনার জন্ম কবে জানেন? ৪৭? ৫২? ৬৯? ৭১? না। আপনি ভুল। এই চেতনার জন্ম হাজার বছর আগে। হাজার বছর আগে যখন আর্যদের বিরুদ্ধে অনার্যরা রুখে দাঁড়িয়েছিল তারা বাঙালী চেতনা ধারণ করেই দাঁড়িয়েছিল। যখন বার ভুঁইয়ারা মোঘলদের হাতে প্রাণ দিচ্ছিল তখন তারা এই চেতনা ধারণ করেই প্রাণ দিচ্ছিল। তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা, সিপাহি বিদ্রোহ থেকে শুরু করে স্বদেশী আন্দোলন, সব কিছুতেই আছে ওই বাঙালী চেতনা। বাঙালী চেতনাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই বাঙালী চেতনা। কোন তফাত নেই।
৪৭ এ যখন গোঁজামিল দিয়ে দেশ ভাগ হয় তখনই বাঙালী বুঝতে পারে যাদের সাথে তারা আছে তারা ঠিক আমাদের মত না। আমরা খাই ভাত, তারা রুটি। আমরা বাংলায় কথা বলি, তারা উর্দুতে। তারা দেখতেও আমাদের মত না। ধীরে ধীরে এই তফাৎটা আরো বেশি চোখে পড়ে যখন শুরু হয় চাপিয়ে দেওয়ার পালা। চাপিয়ে দেয় ভাষা, চাপিয়ে দেয় সংস্কৃতি, চাপিয়ে দেয় অনৈতিক সিদ্ধান্ত। ঠিক তখনই বাঙালী বুঝতে পারে, “অনেক হয়েছে। আর না। বিদেশী শাসন আর না। এবার নিজেদের একটা দেশ। যে দেশে শুধু আমরাই থাকবো। কী নেই আমাদের? একটা ভূখন্ড আছে, সেখানে মানুষ আছে, মানুষের মুখে ভাষা আছে, সংস্কৃতি আছে, নেই শুধু শাসনভার। এবার সেটা নিজ হাতে নেওয়া।" ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল বাঙালী জাতীয়তাবাদ। এই জাতীয়তাবাদই চেতনা যোগালো ৫২-৭১। চেতনা যোগাচ্ছে এখনো। যোগাবে নিরবধি।
(লেখাটা যখন ২য় বার পড়লাম তখন মনে হল ক্লাস সেভেনের সমাজ বই পড়ছি! যাই হোক, সেভেনের সমাজ বই পড়েও যদি কোন অচেতন মানুষ চেতনা ফিরে পায় তাহলে তাই সই।)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৪