নির্লজ্জতার একটা সীমা থাকা উচিত। সব থেকে বড় সমস্যা আমারা ঠিক মত লোভী হতেও শিখি নাই।
এখন পিপিই সব থেকে জরুরী ডাক্তারদের। কারণ রোগী তাদের কাছেই যাবে, এটাও বলতে হচ্ছে কারণ আমাদের এইটা পর্যন্ত চিন্তা করার ক্ষমতা নাই।
আমরা এটাই নির্বোধ যে, অন্তত ডাক্তারদের জীবনের মায়া বাদ দিলেও, নিজের স্বার্থেও তাদেরকে নিরাপদ রাখা আমাদের দায়িত্ব সেখানে আমরা করছি সম্পূর্ণ উল্টা কাজ। তা না হলে ডাক্তারদের মরণের ঝুঁকিতে রেখে নিজেরা বেহায়ার মত পিপিই পরে থাকতে পারতাম না।
সরকার থেকে নির্দেশ আসে পিপিই ছাড়াই প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার। যদি তা কিছুক্ষণ আগে স্থগিত করা হয়েছে। তারপরও চিন্তা করে দেখেন বিষয়টা কতটা জঘন্যএমন কথা নির্দেশ দিতে পারাটা; যেখানে আমাদের নাকি পর্যাপ্ত পিপিই আছে এবং বেহায়ার দল সেগুলা পরে সেটা আবার জাতির সাথে তামাশা করার জন্য ছবিও প্রকাশ করেছে!
বিষয়টা এখানেই শেষ নয়। এই বিষয়টার "প্রতিবাদ" করায়, দুঃখিত বোধ হয় শব্দটা আমি ভুল চয়ন করেছি! শব্দটা হবে নিজের ভয়ংকর আগামীকাল দেখে ফেসবুকে "আর্তনাদ" করা দুই জন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
কাজী জাকিয়া ফেইসবুকে লিখেছিলেন, “খা সব খেয়ে ফল (ফেল)। শিক্ষা খেয়েছিস, ছাব্বিশটা ক্যাডার খেয়েছিস, সরকারকে খেয়েছিস, সরকারের সুনাম, অর্জন, স্বপ্ন সব খেয়েছিস। এবার পিপিই খা। সব তোরাই খা। আমাদের লাগবে না। মুখে মাস্ক দিয়ে বসে থাক সব নির্লজ্জ, রাক্ষসের দল। বিপদে পড়লে কোন অরক্ষিত ডাক্তারের কাছে যাবি না, যদি সামান্য লজ্জা থাকে। আর দেশের সবাই মরে গেলে নিজেরা ঝাড়ুদার ক্যাডারে এবজর্বড হয়ে যাস, আর সেল্ফি দিস।”
এবং সাহাদাত উল্লাহ লিখেছিলেন, “করোনার ভয়ে চাকুরি ছাড়ার সংবাদটা বুলগেরিয়ার। বাংলাদেশের ডাক্তার ভাইয়েরা আপনার নিজের জীবন আগে, তারপর আপনার পরিবার, ছেলে মেয়ে, স্ত্রী তারপর অন্যসব। যে দেশ আপনার পেশার মূল্যায়ন করে না সে দেশের জন্য কাজ করে কী হবে। সেখানে তিন দিনের ইউএনও ৫৫ বছরের একজন প্রফেসর ডাক্তারের নিয়ন্ত্রক থাকে, যে কিনা ডাক্তারির ‘ড’ ও জানে না।”
বরখাস্তের আদেশে বলা হয়েছে, “দেশব্যাপী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, দপ্তর, সংস্থা বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম পরচালনা করছে। সে অবস্থায় আপনি আপনার ফেসবুক আইডি থেকে নিজ নামে অনভিপ্রেত ও উস্কানিমূলক বক্তব্য ও ছবি পোস্ট করেছেন, যা সরকারের চলমান সমন্বিত কার্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।”
সেই দুই জন শিক্ষকের আর্তনাদ সাথে সম্পূর্ণ সহমত আমি। এই বরখাস্তের নিন্দাও জানাতে ইচ্ছা করছে না। কি বলব, কারণ এদের বোধটাই তো নাই।
শুধু বলব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন সাহেবকে চিনে রাখুন, কারণ তাঁর স্বাক্ষরিত এক আদেশে বুধবার তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে শোকজ করা হয় সেই দুই শিক্ষককে।
খবরের উৎসঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম Click This Link
আর্তনাদের টা যদি কান পর্যন্ত না পৌঁছায়, তবে একাত্তরের Click This Link এই লিঙ্কের প্রতিবেদনটা রইল।
বাঙ্গালি মাগনা পাইলে আলকাতরাও খায় প্রবাদকেও ছাড়িয়ে গেছে! আমরা কতটা জঘন্য সেটা কোন পরিমাপকেই মাপা সম্ভব না! কারণ জঘন্য শব্দটাও বোধহয় এটার থেকে অনেক ভালো কিছু বুঝায়।
বাংলাদেশের সকল ডাক্তার নার্সদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা নিজেদেরকে চূড়ান্ত ঝুঁকিতে ফেলে কাজ করিয়েন না। কারণ সাময়িক ভাবে হয়ত কিছু মানুষ উপকার পাবে, কিন্তু আপনদের কিছু হলে, পুরো জাতি আর সংকটে পরে যাবে। আমরা মানুষ না, ক্ষমা চাইবারও ভাষা নাই। কসাই নামেইতো পরিচিত আপনারা। সেই নামটার সাথেই আর কিছুদিন নাহয় কাটুক। প্রলয়ে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেলে, বেঁচে যাওয়া মানুষদের জন্য সেবা করার সুযোগ পাওয়া যাবে। না হলে তো কেউই রেহাই পাবে না।
জাতি হিসাবেই আমরা বিনাচিকিৎসায় মরণেরই যোগ্য! আমরা মরলে দুনিয়া তথা মানবজাতি অনেক অনেক অনেক বেশী লাভবান হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৮:৩৫