আমরা জাতি হিসাবে অসভ্য, অকৃতজ্ঞ, নির্লজ্জ, অনৈতিক, বিশৃঙ্খল এবং হিংসাপরায়ণ; এক কথায় খুবই জঘন্য। অনেকর হয়তো চেতনায় বা জাতিস্বত্বায় আঘাত লাগতে পারে। কিন্তু তাদের জন্য আমি মোটেই দুঃখিত নই।
যেহেতু আমরা জাতি হিসাবে অসভ্য, তাই আমরা কখনই গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার পাওয়ার যোগ্য না। আমাদের দরকার একনায়কতন্ত্র, তবে সেক্ষেত্রে সেই নায়কের উদ্দেশ্য হতে হবে সৎ, তাঁকে হতে হবে বিচক্ষণ, দূরদর্শী এবং কঠোর। তবেই কেবল আমাদের উন্নতি হবে।
যারা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসন আমল দেখেছেন, তাদের কাছে থেকে শোনা, তাঁর আমলেই দেশের বেপক উন্নয়ন হয়েছে। শান্তিতে ব্যবসা করা গেছে। যত রাতেই হোক, মানুষ নিরাপদেই চলাচল করেছে। এবং তাঁর গ্রামকে উন্নত করার উদ্যোগ সর্ব মহলে প্রসংসিত।
যতদূর জেনেছি, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করাই তাঁর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আমি যেমনটা দেখেছি এবং দেখছি তাতে আমার কাছে তাঁর সিদ্ধান্ত খুবই যৌক্তিক বলে মনে হয়েছে। অনেকেই বলতে পারেন, ভাষা আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলনেরই ফল। ছাত্র আন্দোলন এবং বর্তমান রাজনীতি আমার কাছে দুই মেরুর মতই আলাদা মনে হয়। তাঁর পতনের পর দেশ গুনগত মানদণ্ডে কতটুকুন এগিয়েছে তা সকলেই জানেন। আমার দেখা মতে দেশ তো খারাপ থেকে অধিকতর খারাপের দিকেই যাচ্ছে। সৈরশাসকে সরিয়ে দেশ এখন কতটা গনতান্ত্রিক দেশে পরিণত করতে পেরেছি তাও সবাই হাড়ে হাড়ে পাচ্ছি।
আর দল না করেও যে ছাত্র আন্দোলন করা যায়, তা দেখার জন্য ইতিহাস ঘাটতে হবে না। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনই প্রমাণ। দাবি যদি যৌক্তিক হয় তবে জনসমর্থন পাবেই।
সব মিলিয়ে তাঁর শাসন আমলের প্রশংসাই বেশি শুনেছি। আমি যেহেতু দেখি নাই, তাই দাবী নিয়ে বলতে পারছিনা। ভুলও হতে পারে। তবে যদি সেগুলা সঠিক হয় তবে, তিনি নেতা হিসাবে খুবই ভালো ছিলেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমাদের ব্যপক মাথা ব্যাথা। যদি তার সামান্যও আমাদের নিজেদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য নিয়ে থাকত তবে দেশের চেহারাটাই পালটে যেত।
এবার আসি আমার পাওয়া হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে। বর্তমান দেশের অবস্থা যা তাঁর জন্য দায়ী হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কারণ তিনি আওয়ামী লীগের নির্লজ্জ শর্ত মেনে নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে একই সাথে সরকার এবং বিরোধী দলে থেকে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখেছেন দেশের গণতন্ত্র শেষ করে। এরকম নির্লজ্জ উদাহরণ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা জানা নাই। দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলতেও মানুষ এখন ভয় পায়।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আওয়ামী লীগের এমন নির্লজ্জ শর্ত মেনে নেবার কারণ হিসাবে দুইটি বিষয় পাই।
১. জেল থেকে বাঁচার জন্য।
২. তাঁর দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে।
এবং সকাল বিকাল কথা পাল্টানোর কারণে নিজেকে হাস্যকর বানিয়েছেন। আরও কিছু বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে তাঁর মানসিক এবং সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতার হাল!
দেশকে নিজের থেকে বেশি ভালবাসার উদাহরণই হল ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগ বা নিজের ক্ষতি হলেও তা মেনে নিয়ে দেশের স্বার্থ বড় করে দেখা। আর সে অর্থে দেশপ্রেমিক ২% আছে কিনা সন্দেহ আছে। তিনি যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ বাদ দিয়ে দেশের কথা ভেবে এমন শর্ত মেনে না নিতেন, তবে দেশের অবস্থা এতটা প্রকট নাও হতে পারত। শুধু কি দেশ? তিনি নিজেও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হিসাবেই থাকতেন। তাই জেল থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে যা করেছেন, তাতে তাঁর নিজের এবং দেশ অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছেন। এখন তো মানুষ পল্টিবাজদের "এরশাদ" বলেও ডাকে। দেশ হয়তো কোন একদিন ঠিক হয়ে যাবে। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েই থাকবেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের গল্পটা পল্টিবাজ হয়েই থাকবে। আমরা যেহেতু পরনিন্দায় সেরা জাতি, তাই ভালকাজ সামনে আসার সুযোগ অনেক কম, এটা আমাদের সকলের ক্ষেত্রেই।
এখানে সকেলের জন্যই বলা প্রয়োজন যারা শুধু মাত্র টাকা এবং ক্ষমতার লোভে নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা কি একবারের জন্য ভাবেন না যে, পক্ষান্তরে নিজেদেরকেই অসাম্মান এবং ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিনত করছেন। মানুষ তার কর্মের মাধ্যমেই বাঁচে, কর্মই মানুষের পরিচয়।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জীবনের ভালোমন্দ হিসাব করলে গল্পে শোনা, তাঁর শাসন আমল এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো। তাঁর মানে তিনি ভালো শাসক ছিলেন। কিন্তু শেষ জীবনে তাঁর জেল থেকে বাঁচার মূল্য দেশবাসীকে দিতে হচ্ছে। আপনি আমি হলেও হয়তো তাই করতাম। তবে এখানে একটা জিনিস বলা প্রয়োজন যে, উনি কিন্তু দেশকে বাহিরের মানুষের কাছে বেচেন নাই, অন্যরা যেভাবে বেচতেছেন।
মানুষ হিসাবে তাঁকে আমার খুব একটা খারাপ মনে হয় নাই। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইচ্ছে না করে হলেও বাধ্য হয়ে করা কাজে অন্যের ক্ষতি হয়ে যায়। কিছু ক্ষতি কম, আর কিছু অপূরণীয়।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চলে গেলেন না ফেরার দেশে, পরে থাকলো শুধু তার কর্ম।
"ইন্নানিল্লাহি ওয়ানিল্লাহির রাজিউন।"
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ৯:৪৭