আব্বু আম্মু এবং আমি লালমনিরহাটে রাকিবদের (ফুপুর বাসায়) বাসায় বেড়াতে গেছি।
বিকাল বেলায় টেলিভিশন দেখছিলাম। হঠাত অনেক কান্নাকাটি চিৎকার চেচামেচি শুনতে পাই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি ফুপুদের বাসা ভেঙ্গে দিচ্ছে।
আমি বাধা দিতে গেলাম, আমাকে গুলি করতে ধরলে আব্বু আম্মু ফুপু এসে বাধা দেয়। তাদের অনুরধ না রেখে উল্টা তাদেরকেও মৃত্যুর জন্য তৈরি হতে বলল। এর মাঝেই দেখি আশেপাশের সব বাড়ি ভেঙ্গে একাকার, লাশের সারি! বুঝে গেলাম জীবনের শেষ দিন আজকেই।
সবাই অনেক করে বুঝাল এখনও আমি আমার সন্তানের মুখ দেখি নাই। অবশেষে অভয় দিয়ে চলে গেল। দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে না ছাড়তেই হটাত গুলির শব্দ। ভয়ে বুকটা কেপে উঠল। ভাবলাম আব্বু আম্মু আর ফুপুকে বোধ হয় গুলি করল।
তারপর একটা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম না সব কিছুই অক্ষত আছে। আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। তারপরও গুলির শব্দ কানে আসছে। মনে হল তন্দ্রা নাতো আবার। গুলির শব্দ আসছে তখনও।
জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখি পুলিশ এর সাথে অবরোধ সমর্থকদের সংঘর্ষ। দ্রুত ছাদে গেলাম। দেখলাম ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি! চোখ জ্বালা করছে, হয়ত টিয়ারশেল মেরেছিল।
এখন এ দৃশ্য আমাদের কাছে নিত্যদিনের ঘটনা। এর মাঝেই ঘর থেকে বের হতে হয় ঘরে না ফেরার সংশয় নিয়ে।
যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত নাটক ছবিতেই শুধু এসব দেখেছি। কিন্তু এখন সেই সব ঘটনার স্বীকার আমরা।
দিনটা অন্য রকম ভাবে মনে থাকবে। তারিখটা সুন্দর বলে নয়। বুলেট আর ককটেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গা একটি সকাল।
ঘটনার তারিখ ১১-১২-৭১, দুঃখিত ১৯৭১ না, সালটা ২০১৩ হবে।
১১-১২-১৩ . . . ..