মূল খবরঃ
হিজড়াদের ‘লিঙ্গ পরিচয়কে’ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিল বাংলাদেশ সরকার।
এর ফলে সরকারি নথিপত্র ও পাসপোর্টে তাদের লিঙ্গপরিচয় ‘হিজড়া’ হিসাবে উল্লেখ করা হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ঘোঁচাতেও কার্যকর হবে এই স্বীকৃতি।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত ‘নীতিমালা’ অনুমোদন করা হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় ১০ হাজার হিজড়া রয়েছেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও আবাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যর শিকার হয়ে আসছেন।”
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে তাদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তথ্য সংগ্রহের সময় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়। ফলে সরকারি সুবিধাও তাদের কাছে পৌঁছায় না। এ কারণেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় তোলে বলে সচিব জানান।
“এই সিদ্ধান্তের ফলে তথ্য সংগ্রহের সময় ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় হিসাবে ‘নারী’ ও ‘পুরুষের’ পাশাপাশি ‘হিজড়া’ হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ থাকবে। পাসপোর্টেও তাদের লিঙ্গ পরিচয় হবে ‘হিজড়া’।”
নথিপত্রে ইংরেজিতেও ‘হিজড়া’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।
ক্রোমোজম বা হরমনে ত্রুটি অথবা মানসিক কারণে কারো লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে জটিলতা দেখা দিলে বা দৈহিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে আচরণগত মিল না থাকলে তাদের চিহ্নিত করা হয় হিজড়া হিসাবে।
বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় এ ধরনের ব্যক্তিদের ‘নিচু’ দৃষ্টিতে দেখা হয় বলে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র- সব জায়গাতেই তাদের হতে হয় নিগৃহীত, অধিকারবঞ্চিত। এ কারণেই অনেকেই অন্য হিজড়াদের সঙ্গে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস শুরু করেন।
হিজড়াদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সরকার আগেই তাদের এ স্বীকৃতি দিয়েছে।
মূল খবরের লিঙ্ক
আমার কথাঃ
আমার জীবনের কিছু স্বপ্নের একটি হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা। ছোটবেলা থেকেই দেখি এরা সবকিছু থেকে বঞ্ছিত। পরিচয়ের বেলাতেও তাদের যেন কোন অধিকারই নাই, এমন একটা অবস্থা।
আজকে খবর পড়তে গিয়ে চোখে পরল "স্বীকৃতি পেল তৃতীয় লিঙ্গ" শিরোনামটি। দেখেই যেন একটা সুখ অনুভব করলাম। তারপর পড়লাম। যদি নিজে আন্দোলন করে এই অধিকারটুকু আদায় করতাম, তবে যে সুখ অনুভব করতাম তার থেকে কোন অংশেই কম নয় আমার আজকের প্রাপ্ত সুখ। তবুও বিষাদের ছায়া ঘিরে ধরছে কিছু কিছু বিষয় চিন্তা করে।
আজ তাদের পরিচয় মিলল। এটা মানবতার অনেক বড় বিজয়। কিন্তু আই বিজয় কি শুধু কাগজে কলমেই থাকবে? আমরা কি পারব তাদের সম্মান করতে? আমরা "হিজড়া" শব্দটা হেয় করার জন্য বব্যাবহার করে আসছি। সেখানে যদি আমাদের মন মানসিকতার উন্নয়ন না হয় তবে আজকের এই প্রাপ্তিটুকু শুধু কাজগ কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
হিজড়ারাও আমাদের মত মানুষ। তাদেরও আত্মসম্মানবোধ আছে। আছে আমাদের মত মাথা উঁচু করে বাঁচবার। তারাও সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। আপনি আমিও এমন হতে পারতাম। বা আপনার আমার ঘরেও এমন একজন জন্মাতে পারে। তাই তাদের প্রতি কোন করুনা বা উপহাস নয়, তাদের অধিকার টুকুন নিয়ে তাদের বাঁচতে দেই। আই সমাজে আপনার আমার যতখানি অধিকার, ততখনি তাদেরও।
কাগজ কলমের নিয়ম কানুন বা অধিকার কখনই মানব কল্যাণে আসবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না সেখানে মন মানসিকতার উন্নয়ন হবেনা। তাই আসুন আজ থেকে হিজরাদের প্রতি কোন অবিচার করবো না বলে পণ করি।