পুরনো আমলের লোকজন কেমন বইয়ের সঙ্গে ছবি তুলতেন মনে আছে৷? খুব পণ্ডিত মানুষ না হলেও, পিঠ-উঁচু চেয়ারে বসে ছবি তোলার সময় পাশে যে নিচু টেবিলে একটা অলস হাত রাখা থাকত, সেই টেবিলের ওপর দু-তিনটে বইও থাকত৷ নেহাত না থাকলে ছবি রি-টাচ করার সময় বইগুলো এঁকে দেওয়া হত৷ হাতে আঁকা ছবি হলেও অবশ্যই থাকত বই৷ আর মানুষটি পেশায় শিক্ষাবিদ হলে তো কথাই নেই৷ ভাঁজ করে বুকের কাছে তুলে রাখা ডান হাতে নিশ্চিত ধরা থাকত একটি-দুটি বই৷; ঠিক যেভাবে লড়াকু সৈনিক চিতিয়ে রাখা বুকের ঠিক পাশে শক্ত মুঠিতে ধরে থাকে শাণিত বর্শা৷ কিংবা শিকারীর পায়ের নীচে মৃত বাঘ আর হাতে দোনালা বন্দুক; কতকটা অভিজ্ঞানের মতো৷ ওই ছবির মানুষটি কীরকম, উনি পড়ুয়া৷ ওই যে হাতে ধরা বই! উনি সৈনিক; কিংবা উনি শিকারী।
আমাদের এই বইন্যাওটা অভ্যাসটা রয়ে গিয়েছে৷ এখনও বহু লোক ছবি তুলতে হলে সটান গিয়ে বইয়ের তাকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন৷ নিজের সঙ্গে নিজের বই-ভাণ্ডার দেখাতে এঁরা সমান উৎসাহী৷ এর মধ্যেও এক ধরনের দেখানেপনা থাকে৷ কিন্তু সেটা কি ‘এই দেখো, আমি কত পড়াশোনা করি’, না ‘এই দেখো, আমার কত বই’? নাকি দুটোই?
বহু শিক্ষিত মধ্যবিত্তকে প্রচ্ছন্ন গর্ব নিয়ে বলতে শুনেছি, ‘লোকের বাড়িতে দামী জিনিসপত্র, টাকাপয়সা, সোনাদানা থাকে। কিন্তু আমার বাড়িতে, হেঁ হেঁ, বই ছাড়া আর কিছুই পাবেন না৷’ কিছু লোক অবশ্য থাকেন, যাঁরা ছুতোনাতায় জাহির করতে ভালবাসেন যে তাঁরা পড়াশোনা ছাড়া অন্য কিচ্ছুটি করেন না৷ টিভি দেখেন না, ফুটবল বিশ্বকাপ বা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে অর্বাচীনের হুজুগ ভাবেন, তাস-দাবা-পাশা, চা-পান-দোক্তা, মদ-মাংস-ইয়ে, কোনও নেশা নাকি তাঁদের নেই, এক পড়াশোনা ছাড়া!
কিন্তু এর বাইরেও একদল লোক আছেন, যাঁরা আদতেই বইয়ের প্রেমে বিভোর৷ বহু বছর পর দেখা হলেও তাঁরা ‘কেমন আছেন’ না জিজ্ঞেস করে প্রথমেই জানতে চান, ‘এখন কী পড়ছেন?’ এবং এই প্রশ্নের পিছনে একটা সুপ্ত ইচ্ছে থাকে, তাঁরা নিজেরা কী পড়ছেন, সেটা জানানোর৷ এঁরা মাসমাইনের টাকা বাঁচিয়ে বই কেনেন, বোনাসের টাকার কিছুটা বইমেলা কেন্দ্রিক সাহিত্যে অর্পণ করেন এবং যা খুশী তা বই কিনে আহ্লাদে আটখানা হন; বই হলেই হল৷, লেখক দেখার টাইম নাই। নতুন বই কিনে এঁদের বাড়ি পৌঁছনোর তর সয় না, ছুটন্ত বাসে বা লোকাল ট্রেনের কামরায়, কিংবা রিকশায় সম্তর্পণে প্যাকেট খুলে পুনঃ পুনঃ নতুন বইয়ের মুখচন্দ্রিমা দর্শন করে শিহরিত হন৷ নীলক্ষেতের ফুটপাতে পুরনো বইয়ের দোকানে এঁরা হামলে পড়ে গুপ্তধন খোঁজেন৷ চেনা দোকানদার হলে পুরনো প্রেমের মতো চোখে চোখে ইশারা হয়, নতুন কিছু এল নাকি?
এই সম্প্রদায়ের মধ্যে যাবতীয় সামাজিক আলাপচারিতা হয় মূলত বই নিয়েই৷ কী কিনলেন, কী পড়লেন, কোনটা বেশ সরেস লাগল, কোনটা অখাদ্য৷ নতুন বই কিনলে স্ট্যাটাস বা ছবি আপলোড করে পাঁচজনকে জানানো; দেখে সবাই বলবে "বুড়ো ভাম ফের খোকা হল"!
সো হোয়াট???
সবই আসলে আমাদের প্রতি তাদের হিংসে

উপরে উল্লেখিত ২ ক্যাটাগরির পড়ুয়ার মধ্যে আমি সম্ভবত প্রথম ক্যাটাগরির; দেখানে পড়ুয়া :/ আমি অলস

ফেসবুকে কিছু পড়ুয়ার বুক সেলফের ছবি দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গিয়েছি।
চাইলে আপনাদের বুক সেলফের ছবি কমেন্টে দিতে পারেন

আশা করি কেউ কারো বই দেখে ধার চাইবেন না

ফেসবুক পোস্ট লিঙ্কঃ Click This Link