দুই পাড়েই জীবন-যাপন সমানতালে। হিসেব শেষে কখনো দুঃখ, কখনো হাসি বা হিসেবহীন। তবুও ক্লান্তিহীন অপেক্ষা, অথৈ সাগরে তাকিয়ে থাকা। এভাবেই সূযের গলায় ঘন্টা বেঁধে ফের ছুটে চলা অন্ধকারের স্পষ্ট অনুমতি নিয়ে। ....না ...না! হচ্ছে না। বিরক্তি নিয়ে কাজল দা। ঠিক করে দাও তো দাদা- অসহায়চোখে নিশি। সমুদ্রের দুই পাড়েই ....হাসি ....সবই। থাক! আজ বাদ দে।
বিশাল দিঘি, অনেকগুলো নারিকেল গাছ। সাথে নবদীপ্ত ঘাসেরা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। অসাধারন দেখতে। প্রচণ্ড বাতাস বইছে, আর এই বাতাসের মহনায় ছোট ছোট ঢেউগুলো নিজেদের উপর হুমড়ি দিয়ে পড়ছে। ঝিঁরিঝিঁরি বৃষ্টির ফোঁটায় একা বসে নিশি। দৃষ্টি পলকহীন দূরে, নোনা জল বৃষ্টি ফোঁটার সাথে মিশে ঝড়ছে নিজ গতিতে। কি হয়েছে তোর? পেছন থেকে কাজল দা, “কিরে সজীবের সাথে সমস্যা হচ্ছে?” (নিরবতা শেষে) ও কেমন যেন হয়ে গেছে। দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু ও আমাকে এখনো ভালোবাসে। অনেক অনেক। জলভরা চোখে দুহাত বাড়িয়ে অসহায় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কেঁদে কেঁদে এভাবেই কথাগুলো বলল নিশি। ও মাদকের শিকার। বাবার অনাকাঙ্খিত মৃত্যু আর আর্থিক টানপোড়নে বিষন্নতায় নেশা জগতের অফুরন্ত বাসিন্দা হয়ে গেছে সজীব। পাগলামি যেন বাড়তেই থাকে। খুবই কম দেখাদেখি হতে থাকে দুজনের। কলেজ আর বাসার মধ্যে নিথর নিশির নিঃশ্বাসগুলো।
আজ অনার্সের রেজাল্ট দিয়েছে। নিশি ভালো করলেও সজীব নামে মাত্র। পরিবার আর নিশির অনেক চেষ্টাও কোন পরিবর্তন নেই সজীবের। বরং সমস্যা বাড়তে থাকে। একে একে চতুর্দিকের চাওয়াগুলো চুপসে যাচ্ছে। এলোমেলো বন্ধি জীবনে ক্লান্তির ছায়াগুলো রং চড়ায় প্রতিনিয়ত। জ্ঞান হারিয়ে কুঁজো হয়ে পড়ে থাকে অন্ধকার রুমের ফাঁকা মেঝেতে। অস্পষ্ট নিঃশ্বাসের সাথে সিগারেটের ছাই উড়ে পড়ে। তবুও নেশার ঘোরে সজীব ওয়ালেটের ভেতর ঝাঁপসা দৃষ্টি নিয়ে দেখে নিশির ছবিটি। একটুও মলিন হতে দেয়নি লেমেনেটিং থাকা ছবির মানুষটিকে।
সজীবকে অনেকবার মুঠোফোনে না পেয়ে বাসায় এসে দেখে তালাবদ্ধ। একসময় জানতে পারে নেশাগ্রস' সজীবকে বাধ্য হয়ে ঢাকার একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করায় ওর পরিবার। অনেকবার সজীবের সাথে দেখা করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পরিবার আর পড়ালেখা নিয়ে বেশ কিছু সময় কেটে যায় নিশির। তবুও মাঝে মাঝে পুরোনো কিছু সুর বেজে ওঠে। সজীবের সাথে মুহুর্তগুলো কেটে যায় যেন নিরবে। তবুও তো জীবন চলে নিজ ধারায়। উপসংহার হয়ে থাকে সামান্য আর্তনাদ আর আচমকা কিছু হাসি। পরে পরিবার থেকে বেশ কিছু বিয়ের প্রস্তাব ফিরেয়ে দিয়েও নিজেকে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।
হরেক রঙের ভালো-মন্দ জমতে জমতে কিছু সময় কেটে যায় কারো কোন অনুমতি না নিয়েই। একদিন নিশিকে বাসায় না পেয়ে দুয়ার নাট্যশালায় দেখা হয় কাজল দা’র সাথে। কোন সময় কাজল দা’র চশমাকে টেবিলের উপর রাখা, কোন কোন সময় সজীবের চুপ থাকা। এভাবেই নিজেদের অজানা কথাগুলো শুনতে শুনতে অনেকটা সময় কেটে যায়। নিস্তব্ধতার সঙ্গে অনেক কানামাছি শেষে এক ঠোঁট বানানো হাসি এবং চায়ের কাপ টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো সজীব। আর বলল, কাজল দা এ মাসের ২৯ তারিখ আমার ফ্লাইট। দোয়া কইরো।