দেশের চলমান অস্থিরতা পূর্ণ সময়ে বাইরে বের হওয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ - এর কাজ। আমি তো মনে করি এই চ্যালেঞ্জ এভারেস্ট জয় করার সমান। তো এই এভারেস্ট জয় করে বাসায় এসে রাজনৈতিক ক্যাচাল শুনার জন্য যেই টিভির রিমোট হাতে নিয়েছি, ঠিক সেই সময় আমার ফোন-খানা ইদুঁরের বাচ্চার মত কিচ কিচ শব্দ করে উঠল, নিয়ে দেখি আমার দোস্ত (সম্প্রতি যিনি বিবাহের কারণে অমাবস্যার চাঁদ) - এর কল, জরুরী তাগাদা পেয়ে দেখা করতে যেয়ে দেখি বেচারার মুখ ভার, কি সমস্যা? কি সমস্যা?
(সমস্যা হিসেবে যা শুনলাম তার কিছুটা আপনাদের জানালাম, পারলে সমাধান দিয়েন)
দোস্ত-এর জবানে বলছি-
"সমস্যা হচ্ছে উনি মেয়ে, আর সমস্যা হচ্ছে আমি আমার জীবণে কোন সমস্যা হোক তা চাই না, কিন্তু আমার জীবণে কোন সমস্যা না হওয়াটাই ওনার জীবণে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই খুশিতে তো ওনার সেলিব্রেট করা উচিত। সত্যি আজকাল মনে হয় ও যখন মুখ খুলে তখন ইঁদুর মারার বিষ খাওয়ায় দেই, আরে ছয় মাসে সব দেখা হয়ে গিয়েছে, কিসের ভালবাসা? কিসের সম্পর্ক, কিসের খুশি?
সম্পর্ক-এর মানে হল আমাদের খুশি, আমাদের সম্পর্ক, আর এখন এই সব ছেড়ে আমাকে ভাবতে হয় ওনার জন্মদিন, ওনার বন্ধুর জন্মদিন, ওনার কুকুরের জন্মদিন, ওনার নতুন বছর উদযাপন যেটা কখনো আমারো নতুন বছর ছিল।
মেয়েদের কেউ কখনো খুশি রাখতে পারে না, খুশি মেয়ে একটা কল্পনা মাত্র।
আরে তুই যদি সুপারম্যান-ও হোস তাহলেও খুশি রাখতে পারবি না। যতদিন সুপারম্যান না হবি ততদিন ও বলবে তুমি কিছু কর না, কিছু পারো না, তুমি নুপংসুক, তোমার মত মানুষের সাথে কিভাবে সংসার করবো? আর যদি কোন ভাবে তুই সুপারম্যান হয়ে যাস তাহলে বলবে তুমি তো সুপারম্যান হয়ে গেছো, আমি তো কোন সুপারম্যান চাই না, একজন সাধারণ মানুষ চাই, এখন আমি তোমার সাথে কিভাবে থাকব?
বুঝলি সব সিনেমার দোষ, রোমান্টিক মুভি, একটা ছেলে একটা মেয়ে, দুজন একসাথে হয় আর মুভি শেষ। এর পরের গল্প আর কেউ বলে না।
এর পরের গল্প আমি তোকে বলছি শোন, কোন দিন যদি আদর না করি তো সমস্যা, আর করলে বলে এত কিসের আদিখ্যেতা এত ভালো লাগে না। "শপিং" - ঐ কথা আর বলিস না, ওনার তো শপিং শেষ হয় না, প্রথমে পর্দার কাপড় কিনবে তারপর সেটা কাটাবে, তারপর দেখবে সেটা দেয়ালের রং-এর সাথে ম্যাচ করছে না সেই কারণে আবার কাপড় কিনবে, আরে বাসায় এত চায়ের কাপ আছে যে বিক্রি করলে সারামাসের খরচ মিটে যাবে। আরে যেটা কিনতে যাবে সেটা কিনবে না আরেকটা কিনবে। গত মাসে টেবিল কিনতে হবে টেবিল কিনতে হবে বলে মাথা খারাপ করে ফেলেছে, গেলাম মার্কেটে কি হল? ৫ ঘন্টা ঘুরে স্যান্ডাল কিনে আসছে, দুই সপ্তাহ পর আবার শুরু করছে টেবিল কিনতে হবে।
অফিসে কাজ করছি ফোন আসবে ফোন তুলে বলি ব্যাস্ত আছি পরে কথা বলব, আচ্ছা বল কতটা কঠিন এই কথা বোঝা? তখন বলবে দুই মিনিট কথা বললে কি হয়? আচ্ছা তুই বল দুই মিনিটে কি কথা হবে? তারপর আমি তোমাকে ভালবাসি না বলে ফোন রেখে দিলি তো এক নাটক শুরু হবে, সব দোষ এই মোবাইলের প্রতি মিনিট ১ টাকা, আরে কল প্রতি টাকা কমে গেলেই তো আর কথা বলা বেড়ে যায় না।
আচ্ছা যাক ফোন রিসিভ করলি কিন্তু কথা বললি না তখন বলবে তুমি কথা বলছো না কেন? কথা বলতে ভালো লাগছে না? আর যদি হুম হুম করে পাশ কাটাতে চেয়েছিস তো গেলি, বলবে এই ভাবে কথা বলবে তো আমি তোমাকে ফোন করলাম কেন। আরে আমি কিভাবে বলব উনি কেন ফোন কেন করেছেন!!!
এইসবে বিরক্ত হয়ে যদি কোথাও একা একা ঘুরে আসতে চাস তো প্রশ্ন করবে কোথায় যাচ্ছো? কেন যাচ্ছো? আচ্ছা জানো না কোথায় যাচ্ছো? সরাসরি বললেই তো হয় যে আমার থেকে দূরে যেতে চাচ্ছো।
আবার ধর অফিসে কাজ করছিস এসএমএস আসবে ”আমি তোমাকে ভালবাসি”, তুইও ফিরতি এসএমএস দিলি, দিলি তো গেলি, এরপর এসএমএস এর পর এসএমএস আসতেই থাকবে, আরে কি কাজ করবো অফিসে, দুইটা এসএমএস-এর জবাব না দিলেই ফোন চলে আসবে, আর যদি ফোন রিসিভ না করিস ১০ মিনিট পর এসএমএস আসবে "It's not working any more”। ১০ মিনিটেই “I love you” থেকে "It's not working any more”। এতদিনে বুঝলাম কেন শুধু পুরুষ মানুষ হার্টএটাক করে।
সবাই বলে সব সফল পুরুষের পিছনে একজন নারী থাকে, এইটা তো কেউ বলে না যে অসফল পুরুষের পিছনেও একজন নারী থাকে, আর সবাই এটা স্বীকার করবে যে সফল পুরুষের চেয়ে অসফল পুরুষের সংখ্যা বেশি।
কখনও যদি বলি আজকে কাজ বেশি তুমি খেয়ে শুয়ে পর আসতে দেরী হবে, তখন অভিমান করবে, খাবে না, না খেয়ে শুয়ে পরবে, আরে আমি কি কাজ ছেড়ে দিব? বাসায় যাও, বুঝাও, খাওয়াও, এইসব করতে করতে নিজের খিদেটাও মরে যায়। এতকিছুর পরও শান্তিতে যদি এক কোণে গিয়ে বসে থাকি তখনও বলবে কি ভাবছো? কি ভাবছো? আরে কিছু ভাবছি না, শুধু ভাবছি কি ভাবে তোমার মুখ বন্ধ করা যায়? তারপর ঝগড়া।
দুইদিন পর বলবে আচ্ছা আসো একসাথে বসে প্রবলেম সল্ভ করি, আলোচনা করি। কিন্তু আমি তোকে বলছি মেয়েদের সাথে আলোচনা হয় না, কেননা তুই কথা বলতে পারবি না, ওনিই শুধু বলবে, আর তাছাড়া আজকে যা বলবে তা আজকের ঘটনা না, দুই মাস আগের ঘটনা, আরে মনেই থাকে না দুই মাস আগে কি হয়েছিল, মেয়েরা সব জমিয়ে রাখে, এটা বড় হাতিয়ার বড় লড়াইয়ে ব্যবহার করতে হবে। আর ঝগড়ার মাঝে হটাৎ করে বলবে আঙুল নিচে কর, আরে তোর হয়তো খেয়ালও নেই কখন আঙুল তুলেছিস, তারপর তো সব শেষ, আসল আলোচনা যে কোথায় যাবে তার ঠিক নাই, এখন মূল আলোচনা তোর এত সাহস কিভাবে হল তুই উনার দিকে আঙুল তুলেছিস, উনি জুতা ছুড়ে মারলেও কিছু হবে না, কিন্তু তুই আঙুল তুললেই সব দোষ তোর।
আরে বিয়ের সময় কেন ব্যান্ড মিউজিক, ডিজে পার্টি হয় জানিস? আসলে বুঝায় বিয়ের পর কি অবস্থা হবে।"
পরিশেষে একটা কৌতুক-
এক রাতে স্বামী স্ত্রী বলছে, "জান, আমি নৈশভোজ-এর জন্য একজন বন্ধুকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে."
"কি? তুমি কি পাগল? ঘরটা একদম জগাখিচুড়ি হয়ে আছে, ঘরে বাজার করা নেই, থালা - বাসন সব ময়লা হয়ে আছে, এবং আমি রান্না করতে পারবো না"
"আমি সব জানি."
"তারপরেও তুমি কেন নৈশভোজ-এর জন্য বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছো?
"কারণ আমার বন্ধুটা বিয়ে করতে চাইছে.":
(এটি একটি রম্য রচনা, একটি চলচ্চিত্রের ছায়া অবলম্বনে তৈরী)