তো ঈদের এই বন্ধে আপনাদের জন্য কিছু ছবি তৈরি করেছি । আমার আজকের জীবনের অনেক রঙে স্বাগতম । কেমন লাগে দেখবেন আর বলবেন সবাই ।
প্রথমেই শেকড়ের ছবি । ঈদের সময় আমরা আমাদের শেকড়, আমাদের চিরচেনা গায়ের পরিবেশে ফেরত যাই । সেই শেকড়ের যাত্রায় কত দূর্বিপাক সবাই সহ্য করল তাই না ??
হে বৃক্ষ, অনন্ত বিস্তৃত হোক-
শিকড় তোমার, ভূতল কিংবা ভূধর ।
চারিদিকে হোক জয়জয়কার-
তোমায় করি নমস্কার !
পরবর্তী ছবিটা মেঘের । আপনারা সবাই জানেন মেঘ বিষয়ে আমার অস্বাভাবিক দূর্বলতা । তাই মেঘের প্রচুর ছবি তুলেছি । যা নিয়ে আলাদা পোস্ট দেবার পরেও আমার মনে হয় মেঘের সৌন্দর্য বর্ণন এখনো শেষ হয়নি ।
ওগো মেঘ, তুমি উড়ে যাও
আমার প্রিয়ার কাছে । কানে কানে
শুধায়ো তারে, এই হৃদয় মন্দিরে
ইষ্টদেব শুধু তুমি, হে প্রিয়তমা ।
যেহেতু আমার সিরিজের নাম জীবনের অনেক রঙ তাই এবার একটা জীবন ঘনিষ্ঠ ছবি দেয়া উচিত কি বলেন ?? ছবিটি একজন জেলের । তাকে মাছ ধরতে দেখা যাচ্ছে । কিন্তু আমরা থাকতে থাকতে সে বেশ কবার জাল ফেলেও কোন মাছ পায়নি ।
মাঝ নদীতে পোতা আমার,
ছোট্ট একটা জাল ।
সারা দিনে মাছ পাইনা-
হায়,হইল এ কী আকাল ??
এবারে আমরা সিলেটে যাই । চা বাগানের ভেতর থেকে সবুজের স্বাদ নিয়ে আসি । এইটি সিলেটের প্রথম চা বাগান । ১৮৫৪ সালে স্থাপিত ।
মেঘের কাছাকাছি বাস করা
এইসব চা গাছেরা, টিলার খাজে
নিয়েছে অবস্থান । ছায়াবৃক্ষ তলে-
যে শান্তি তারা খুজে ছিল,
পায়নি তার দেখা । নিষ্ঠুর মানবেরা
শতবর্ষ ব্যাপী রেখেছে বন্দী করে
আকারের বৃত্তে অনন্তের তরে ।
যারা জানেন না তাদের জন্য- চা গাছ সহজে মরে না অনুকূল পরিবেশে । তাই মালিণীছড়ার বেশির ভাগ চা গাছই ১৮৫৪ বা এর আশে পাশে লাগানো । আর নতুন করে লাগাতে হয়নি ।
উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু রাজবাড়ী রয়েছে । তার মধ্যে একটি হল নাটোরের রাজবাড়ী । এটি বড় তরফের বাড়ি হিসেবে সমধিক পরিচিত । ছবিটা মোবাইলে তোলা তাই অত পরিস্কার নয় ।
কথা কও কথা কও
স্তব্ধ অতীত ! হে গোপনাচারী ।
.......রবি ঠাকুর
এবারের ছবিটা সূর্যাস্তের । এই জিনিসটা খুব সুন্দর ছবির জন্ম দেয় । তাই আমার খুব ভাল লাগে তুলতে । অপার্থিব সব রঙ ।
নিমগ্ন অন্ধকারে ডুবে যাওয়া
মর্ত্যমানবেরা দেখে
সুনীল সাগরের বুকে
প্রবল সূর্যের আত্মবিসর্জন ।
গত ব্লগে একটা ছবি ছিল, বৃষ্টি জলের । সেই ছবিটা আদিরূপ ছিল এই -
পাতার বুকে বৃষ্টি জলের খেলা
দেখে জাগে আনন্দেরই মেলা ।
সৈকত তটে একটা মস্ত আকর্ষণ লাল কাকড়া । কি সুন্দর গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় ! দেখতে খুব ভাল লাগে । তারই একটা ছবি ইনানী বিচের লাল কাকড়া ।
সাগরেরই তীরে থাকা-
যেন শিল্পীর হাতে আকা,
ছোট লাল কাকড়া গুলো -
ছোটে এড়িয়ে বালি ধুলো !
দেখতে পেলে মানুষ কোন
ঢুকে যাবে গর্তে যেনো ।
এবারের ছবিটা কান্তজিউ মন্দিরের । এই মন্দিরের খ্যাতি এর টেরাকোটা কাজের জন্য । টেরাকোটার মাধ্যমে সমগ্র রামায়ণের কাহিনী মন্দিরের গায়ে লিপিবদ্ধ । তারই একাংশ
স্বপ্ত কান্ড রামায়ণ-
হয়েছে অলংকরণ,
মন্দির গাত্রে । হায় বিস্মৃতি
কত কথা কত স্মৃতি
হারায়ে গেছে চিরকালের তরে
অজানা কোন বানীর ভিড়ে ।
আবারো সাগরে যাই । ভেসে চলা জেলে নৌকোর ছবি এটি -
দরিয়ার ঢেউ কাটিয়া
চলে উজান গাঙের নাইয়া !
এবারের ছবিটি একজন বৃদ্ধ লোকের । সত্তরোর্দ্ধ এই বৃদ্ধ কানে ভাল শুনতে পান না । এই বয়সে শরীর ও সায় দেয় না কাজে । তবু তিনি লিপ্ত জীবন সংগ্রামে, পেটের দায় মেটাতে যে হবে তাকে
জীবন তোমায় দেয়নিকো
একফোটা সুখ, একফোটা ছাড় !
তাই আজো মাছের খোজে
বেরোতে হয় প্রত্যুষে । হয়ত বা
মলা ঢেলা দু একটা কোনদিন মেলে ;
কোনদিন মেলে না । তোমার
দীর্ঘশ্বাস কেউ দেখে না চেয়ে ।
শেষের দিকে চলে এসেছি । শেস করবার আগে গত পর্বের মত এবারো একটা প্রবালের ছবি দেই । এইটি কিন্তু পানির নীচে -
সবুজ প্রবাল জলের তলায়,
দেখে সবার মন উছলায় ।
এবারে সর্বশেষ ছবি । যারা সেন্ট মার্টিনে গিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন কি অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা হয় যখন কাকড়া গুলো হেটে যায় বেলাভূমে । খুব ভাল লাগে দেখতে ।
তুমি হাটো বালুকাবেলায়
নিজের সুরে নিজের খেলায় ।
সেই খেলাতে মন ভরে-
সাগরের তীর ধরে;
হেটে চলা মানবের ।
এ সাগর, এ তট সবই তোমাদের !
অনেক হল । এবারে বিদায় । সবাই ভাল থাকুন
উৎসর্গ : এই পোস্ট টা সুমন ভাইয়াকে উৎসর্গ করলাম । ভাইয়া তোমার জন্যই প্রত্যেকটা ছবির নীচে কিছু না কিছু লিখেছি । আমার মনে হয় না এরকম কোন ব্লগ কেউ কোনদিন লিখেছে ।
পরের পর্বের লিঙ্ক - জীবনের নানা রঙ -পর্ব ৩
বি.দ্র : পুরোনো ছবি ব্ল গুলো -
১) জীবনের নানা রঙ পর্ব -১
২) বান্দরবানে একদিন, ১ম পর্ব
৩) বান্দরবানে একদিন: ২য় পর্ব
৪) মেঘের অনেক রঙ