প্রথম পর্বঃ শিমলা
২ সেপ্টেম্বর প্রত্যুষে আমরা মানালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম শিমলা থেকে। হোটেল ম্যানেজার এর সহযোগিতায় যে বাসের টিকেট কাটলাম, তা পছন্দ হলো না; কেমন যেন- লোকাল আবার লোকালও না। ভবিষ্যতে মানালি যেতে ইচ্ছুকদের বলি আগে থেকে অবশ্যই HPTDC তে ফোন করে ওদের বাসের টিকেট বুক করে রাখবেন; শিমলার স্ক্যান্ডাল পয়েন্টের কাছেই ওদের অফিস-মানালি থেকে লেহ এর বাস টিকেট আমরা শিমলা থেকেই বুক করে গিয়েছিলাম।
পথে এক জায়গায় বাস থামাল খাওয়া-দাওয়ার জন্যে। আমি স্বভাবত একটু কম খাই আর খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একটু বেশীই fussy; আমার কাপল (দুই দুগানে চারজন) কলীগরা আমার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বড়ই বিরক্ত, লি আপু তো খুব অবাক- মারদাঙ্গা মেয়েরা নাকি খাওয়া-দাওয়ায় বাছবিচার করে না- আমার চরিত্রের সাথে নাকি এই এটা খাই না, ওটা ভালো না এই প্যানপ্যান যাচ্ছে না। সে যাই হোক দুই জোড়া দম্পতির সাথে এই ট্যুরে আমি বিবাহ করার কেবলমাত্র দুইটি উপকারিতা খুঁজে পেলাম- ট্যুরে এক্সপেনসিভ খাওয়া-দাওয়া শেয়ার করা যায় আর দ্বিতীয়ত রুম শেয়ার করা যায় যাতে আমার মত গরীব স্কুল শিক্ষকের খরচ একটু বাঁচে। ভাবছি শুধুমাত্র এই দুটো কারণের জন্য আমার বিবাহ না করার অমোঘ সিদ্ধান্ত বদলানো কী ঠিক হবে!!!
মানালি ভ্যালীতে অবস্থিত; শিমলা থেকে মানালি নীচে; বিচ্ছিরি প্যাঁচানো আর খাঁড়া রাস্তায় আ অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল। অ আপু তো আমার কাধেঁ মাথা গুঁজে কী কী সব গান গেয়ে বমি আটকে রাখছিল। ওরা যে কেন পাহাড়কে রেস্পেক্ট না করে যেমন তেমন করে পাহাড়ের গায়ে রাস্তা বানায় কে জানে! অথচ পাশের দেশ ভূটানে পাহাড়ের গায়ে কী সুন্দর রাস্তা!
আস্তে আস্তে ল্যান্ডস্কেপ বদলে যাচ্ছিল- কী যেন নাম নদীটার আমাদের সাথে সাথে বয়ে যাচ্ছিল। আর রাস্তার পাশে সারি সারি আপেল গাছগুলো আপেলের ভারে নুয়ে পড়ছে। মনে হচ্ছিল- বাসে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়েই পেড়ে নেওয়া যাবে।

১। আপেল চাই? আপেল? আপেলের পসরা সাজিয়ে বসে

২। মানালি যাওয়ার পথে
মানালি পৌঁছুতে পৌঁছুতে সন্ধ্যাপ্রায়। মলরোডে হোটেল থেকে সুন্দর ভিউ শহর আর তাকে ঘিরে থেকে মেঘের চাদরে ঢাকা পাহাড়ের। খুব মন খারাপ হচ্ছিল পরদিন সকালেই শহরটা ছেড়ে যেতে হবে বলে। কিন্তু খুশী হচ্ছিলাম- লাদাখ আর বেশী দূরে নেই বলে। কাল সকালে এখানকার দুটো স্টার পাওয়া স্থাপত্য নিদর্শন হাদিম্বা মন্দির ও পুরাতন মানালি দেখব ভেবে রাতের অনেকটা সময় পার করলাম শহরের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে আর টুকটাক শপিং করে। আমি বরাবর শপিং অপছন্দ করি কিন্তু ওদের পাল্লায় পরে আমিও কাশ্মীরি জামার কাপড় কিনে ফেললাম। বেশীর ভাগ ব্যবসায়ীই এখানকার কাশ্মীরের যাদের দিল্লীতেও শোরুম আছে, যেখানে একই কাপড়ের দাম প্রায় দ্বিগুণ। খাওয়া দাওয়া করলাম পাঞ্জাবী এক হোটেলে- জোশ খানা। ছয়জনের প্রায় বারশ রূপীর বিলে আমার অংশ ছিল মাত্র ত্রিশ রূপী যা কিনা ভ্যাটের থেকেও কম। :!> :#>

৩।মল রোডে রাতের মন্দির
খুব সকালে আমরা বের হলাম মন্দিরে যাওয়ার জন্য, কাছেই মল রোড থেকে- মাত্র দুই কিমি। মন্দিরের থেকেও পছন্দ হয়েছে তার সেটিং। এত্ত সুন্দর ল্যান্ডস্কেপের মাঝে তার অবস্থান! পাশেই ভারতের বনবিভাগের সংরক্ষিত বন, লম্বা লম্বা পাইন গাছ আর নীচে সবুজ সবুজ পাথর। মন্দিরে তখন আরতি চলছিল, সুন্দর কাঠের কারুকাজ করা মন্দিরের ভিতরে আছে দেবী হাদিম্বার পদাঙ্কিত এক পাথরের টুকরো।

৪। মানালির ঝিরিপথ ১

৫। মানালির ঝিরিপথ ২

৬। jab we met এ কারিনা মনে হয় এই পথে হেঁটেছিল



৭। না কি এই পথে?

মন্দিরেই মনে হয় চাইলে সারাদিন বসে থাকা যায়, এত্ত সুন্দর চারপাশ! তারপর গেলাম পুরাতন মানালিতে। vernacular architecture এ বরাবরই আমার আগ্রহ- এর আগেও বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের এই স্থাপত্য নিয়ে কাজ করেছিলাম। পাথরের টুকরো দিয়ে বাড়ীগুলোর নীচের অংশ আর উপরের অংশে কাঠের কাজ। ভালো লাগছিল সেই পুরনো মানালির রাস্তায় হেঁটে বেড়াতে- সময়ের স্বল্পতার কারণে তাড়াহুড়ায় ফিরে আসতে হলো।
সেই গ্রামের পাশেই বয়ে যাচ্ছে নদী- ঝিরিপথ বলতেই আমার বেশী ভালো লাগে- পাহাড়ী নদীগুলো এত সরু আর অগভের হয়! বাংলার নদীই আমার কাছে সেরা- যদিও পাহাড়ী স্বচ্ছ পানির নদীর আলাদা সৌন্দর্য।

৮। পুরাতন মানালি (পুরান ঢাকার মতোই ঐতিহ্য- বিখ্যাত vernacular housing এর জন্যে)

৯। হাদিম্বা মাতা কি মান্দির

১০। মন্দিরের দরজায় কাঠের কারুকাজ
আমাদের হোটেলেরই (হোটেল রেণুকা) নীচের রেস্তোরায় নাশতা করার আগে দিনের আলোয় ছোট্ট সেই শহরে আরেক পাক দিলাম। কাছেই ছিল ন্যাচার পার্ক- পার্কের কাউন্টারের লোকটা তখনো আসে নি বলে ঢোকা হয় নি, তবে রাস্তা থেকে দেখেই মুগ্ধ হচ্ছিলাম- উচুঁ উচুঁ পাইন গাছের জঙ্গলের ওপারে মেঘে ঢাকা পাহাড়।

১১। মানালি শহরে

১২। মেঘে ঢাকা মানালি

১৩। মানালির শিশু
সকাল সকাল দেখলাম মানালির সব বাচ্চা-কাচ্চা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মোড়ে স্কুল বাসের জন্য- হাই তুলছে; মায়া লাগছিল ওদের জন্যে; আহারে বেচারারা! আমিও এক সময় এমন বেচারা ছিলাম! সকাল এগারটায় বাস ছাড়ল লাদাখের পথে- রাস্তায় রোটাং পাস পড়বে ভেবে খুশীই হচ্ছিলাম- অল্প সময়ে এই শহরটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি।
সম্পূর্ণ ট্যুরের একটি চিত্র পেতে ক্লিক করুন।