আকাশে কাচির মতো সরু চাঁদ।চাঁদের কোমল ক্ষীণ আলো চারপাশের নিকষকালো অন্ধকার দূর করতে পারেনি।শুধু বিরাট একটা আমগাছের মাথায় চাঁদের আলো পড়েছে। অল্প কিছু তাঁরা দূতি ছরাচ্ছে।আকাশে ভেসে বেরাচ্ছে খণ্ড খণ্ড ধূসর মেঘ;মেঘের ছায়ায় মাঝে মাঝে তলিয়ে যাচ্ছে চারপাশ। তখন আমগাছের মাথাও চোখে পড়েনা। হটাৎ ক্ষুধার্ত শেয়ালের খাদ্যর সন্ধান পাওয়ার আনন্দধ্বনি, আর কিছু ঝিঁঝিঁ পোকার একঘেয়ে তীক্ষ্ণ শব্দ ছাড়া কোনো শব্দ নেই।শুনশান নিরবতা। ভূতুরে পরিবেশ।
বাতাসে লসের গন্ধ।বাড়ির আঙিনায় কূপির কাপা কাপা মৃদু আলোতে, আবছা অন্ধকারে দেখা যাচ্ছে ক্ষতবিক্ষত লাস।দেহটা কয়েক টুকরায় পরিণত হয়েছে।মাথাটা থেতলে গেছে,মুখ বিকৃত। বিকৃত মুখের দিকে তাকালে ভয়ে রক্ত হিমশিতল হয়ে যায়।পুরো শরীরে লেগে আছে রক্ত।জমাট বেধে কালো হয়েগেছে।কাপড়টা ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়েগেছে।লাসের উপর কিছু মাছি ভনভন করছে।পিপড়াও হয়তো সন্ধান পেয়েছে।
গ্রামে লাসের পাশে অনেক পাড়া প্রতিবেশিরা থাকে।এই লাসের পাসে তেমন কেউ নেই।আত্তীয়স্বজনও খুব কম।থাকবে কি করে!লাসের গন্ধ একেবারেই অসহ্য আর ভয়ানক।আমার নিজেরই থাকতে ইচ্ছা করছিলোনা। কিন্তু অজানা কারনে ওখান থেকে চলে যেতে পারছিলামনা।মনে হচ্ছিল ঐ লাসটার ভয়ানক আকর্ষন শক্তি।আমি আকর্ষন শক্তির বলয় ভেদ করতে পারছিনা।আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম কেউ কাঁদছেনা।অথচ মানুষ মরলেতো কান্নার রোল পরে যায়।তবে সবার চোখের কোনায় ভয়ের চিহ্ন।মুখ ফ্যাকাসে।
আমিতো মায়ের কোল থেকেই সব কিছু দেখছিলাম।তারপরও সেই শিশুমনে বিরাট কোনো খটকা লেগেছিল কি? এখন মনে হয় লেগেছিল। কিন্তু বাস্তবিক তা সম্ভব নয়।এতদিন বিষয়টা চিন্তার ফলে মস্তিষ্ক নতুন বিষয় ঘটনার সাথে জরিয়ে ফেলেছে।
সেইদিনের ভয়ংকর রাত, অনেক বছর পেরিয়ে গেছে।পচা লাস,লাসের গন্ধ,শুনশান নিরব ভূতুরে পরিবেশ কিছুইতো সময়কে আকরে ধরে রাখেনি।সময় অতি দ্রুত কেটে গেছে।আর এই যে আমি,সকল পিছুটান থেকে মুক্ত হয়েছি।