সমগ্র বাংলাদেশে তো কত কিছুই আছে দেখার মতো। সব কি দেখা হয়? হয়তো হয়, হয়তো হয় না। তবে সারা দেশের উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও বিশেষ স্থান দেখার জন্য বিশেষ কোনও প্যাকেজ থাকলে বোধহয় তা ভালোই হতো। আর তাদের কথা চিন্তা করেই একটা বারো দিনের বাংলাদেশ ভ্রমণের প্যাকেজ প্ল্যান প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত ব্যায় সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা নাই। আমি কেবল ট্যুর প্ল্যানটা শেয়ার করতে পারি আপনাদের জন্য।
আপনি ঢাকা থেকে রওনা দিবেন। গিয়ে পৌঁছবেন বাগেরহাট। সেখানে আপনার প্রথম দিন ধরা হবে। এবার দিন গুনে গুনে আমরা পর্যটন স্থানগুলোও একটু ঘুরি।
প্রথম দিন, বাগেরহা
বাগেরহাট গিয়ে আপনি ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখবেন। সেখানেই দেখবেন খান জাহান আলী’র মাজার। আরও দেখবেন নয় গম্বুজ মসজিদ। বাগেরহাটে আপনার আপাতত দর্শনীয় স্থান এগুলোই। বাগেরহাট থেকে প্রথম দিন রাতেই তাই রওনা হবেন খুলনা। গন্তব্য সুন্দরবন।
দ্বিতীয় দিন, সুন্দরবন-খুলনা
বিকাল বা সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে আপনি রাতে থাকবেন খুলনায়। এখানে আপনার সুন্দরবন একদিনে দেখে শেষ করার মতো না হলেও আপনি শুধু একটা বড় সৌন্দর্য্যের আংশিক দেখেই ছুটতে হবে। কারণ, আপনাকে দৌড়াতে হবে পুরো দেশ। আজ সন্ধ্যায়ই আপনি রওনা দিবেন কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়ায় আপনি থাকবেন আপনার ভ্রমণের দ্বিতীয় রাত।
তৃতীয় দিন, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় আপনি দেখবেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য শিলাইদহ। দেখবেন লালন শাহ এর মাজার। সাধুসঙ্গে থেকে শুনবেন লালনের গান। এখানে আপনি কাটাবেন আপনার সফরের তৃতীয় রাত। পরদিন কুষ্টিয়া থেকে আপনি রওনা দিবেন বগুড়ার উদ্দেশ্যে।
চতুর্থ দিন, বগুড়া
বগুড়া পৌছতে আপনার বিকেল হবে। সেখানে আপনি দেখবেন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও মহাস্থানগড়। ক্লান্তি ঝেড়ে নিতে আপনি এখানেও একরাত থেকে যেতে পারেন।
পঞ্চম দিন, টাঙ্গাইল
পঞ্চম দিন সকালে আপনি বগুড়া থেকে রওনা দিয়ে পৌঁছবেন টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইলে আপনি দেখবেন তাঁতের শাড়ির নির্মাণ ও তাঁতিগ্রাম। এছাড়াও দেখবেন আতিয়া মসজিদ। এখানেও আপনি থাকতে পারেন একটি রাত।
ষষ্ঠ দিন, সিলেট
পঞ্চম দিন টাঙ্গাইল থেকে ভোরে রওনা দিলে আপনার সিলেট পৌছতে বিকেল বা সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই আপনি প্রথম দিন সিলেটে খুব বেশী কিছু দেখবেন না। কেবল লালাখাল দেখবেন। আর স্বাদ নিবেন, সেখানকার সাত রঙের চা-য়ের।
সপ্তম দিন, সিলেট
এখানে আপনি শ্রীমঙ্গলে একরাত থাকবেন। ভোরবেলায় উঠবেন চা বাগানে। শ্রীমঙ্গল থেকে আপনি আসবেন সিলেট শহরে। সেখানে দেখবেন, শাহজালাল এর মাজার। এছাড়াও কিছু কিছু স্থান দেখার রয়েছে, যেগুলোর জন্য আরও বিস্তারিত প্ল্যান ও সময় দরকার। ঐ দিনই আপনি বিমানপথে রওনা হবেন চট্টগ্রামে। সপ্তমদিন বিকালে চট্টগ্রাম থেকে আপনি যাবেন বান্দরবান।
অষ্টম দিন, বান্দরবান
বান্দরবানে আপনি দেখবেন স্বর্ণ মন্দির, আদিবাসী গ্রাম, টাইগার হিল থেকে সুর্যাস্ত। এখানেও একরাত থাকবেন আপনি। পরদিন সকালে মানে নবম দিন সকালে আপনি দেখবেন, চিম্বুক পাহাড়, শৈল প্রপাত, বগা লেক, মেঘলার ঝুলন্ত ব্রিজ। এখান থেকে কক্সবাজার রওনা দিবেন।
দশম দিন, কক্সবাজার
এখানে আপনি সুর্যাস্ত দেখবেন লাবনী বিচে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত তো আপনার সামনেই রইলো। ঘুরবেন বার্মিজ মার্কেটে।
একাদশ দিন, কক্সবাজার
এই দুটি দিন আপনি কক্সবাজারের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পট, যেমন ইনানি বিচ, হিমছড়ি সহ আশপাশের পাহাড়, আর পুরো সমুদ্রের চারপাশের জীবন দেখবেন। যদি আপনি কক্সবাজার থেকেই ফিরতে না চান তবে আপনি আপনার সফরে যোগ করতে পারেন আরও একটি দিন। তাহলে আপনি দ্বাদশ দিনে ঘুরতে পারবেন প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। আর না হলে পরদিন সকালেই আপনি আপনার সফর শেষ করতে পারেন।
দ্বাদশ দিন, ঢাকা
আপনি আবার ঢাকা। বিমানে আসলে সময় কম লাগবে, টাকা বেশী লাগবে। আর বাসে আসলে সময় বেশী লাগবে টাকা তুলনামূলক কম খরচে হবে।
এবার বাজটে আপনি নিজেই করুন। কোথায় কেমন খরচ হবে, আপনার ব্যায়ের পরিমান আপনি ছাড়া আর কেউ জানে না। তাই আপনার বাজেটে আপনি বেরিয়ে পড়ুন। মাত্র তো কয় দিন। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব কিছুই আপনার দেখা হয়ে যাবে। যাত্রা শুভ হোক।