ফেনীতে বিএনপি প্রার্থীকে অবরুদ্ধ করে তার সাথে দেখা করতে আসা নেতা কর্মীদের পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে আওয়ামীসন্ত্রাসের তীর্থভূমি ফেনীতে নির্বাচনী প্রচারের শুভ সুচনা করেছে নিজাম হাজারী। একসময়ের ত্রাস জয়নাল হাজারীর গাড়ী চালক ২০০১ সালে জয়নাল হাজারীর পতনের পর চট্টগ্রামে আজম নাসিরের প্রধান সহযোগী বনে যান। খুন ও অস্ত্র মামলা থেকে সাজা না খেটে জেল থেকে বের হন প্রকাশ্যে। আদালতে সে মামলা বহু বছর গড়িয়ে রায় আসে দ্বিধাবিভক্ত, ৩৪এর অধিক বার বিচারকরা রায় দিতে বিব্রত বোধ করেন।
ফেনীতে নতুন হাজারীর উত্থান শুরু হয় ২০০৯ সালের দিকে যখন ফেনী পৌরসভা নির্বাচনের প্রার্থী হয় সে, শহরের প্রতিটি এলাকায় নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে জনসাধারণকে আনঅফিসিয়াল ভাবে জানিয়ে দেয়া হয় অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা এড়ানোর স্বার্থে ভোটের দিন বাড়ী থেকে না বের হতে এবং ভোট কেন্দ্রে না আসতে। এই নির্বানের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় ভুলে যাওয়া নির্বাচন জালিয়াতি আবার পুন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর সংসদ নির্বাচন আসলে কৌশলে বাগিয়ে নেন আওয়ামীলীগের নমিনেশন, হয়ে যান বিনা ভোটের এমপি। এমপি হয়েই ভবিষ্যতের সম্ভ্যব্য প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে কৌশলে পরপারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এই হত্যাকাণ্ডে আসামী হিসেবে জড়িত করেন নিজের অনুসারী নয় দলের এমন সব নেতা কর্মীকে। এ সকল কাজে তার যে নিপুন দক্ষতা ভেবে আশ্চর্য হতে হয়। স্বভাবতই মনে পড়ে এর পেছনে দক্ষ শিক্ষকটির কথা, ভুলে গেলে চলবে না তিনি জয়নাল হাজারী।
৮০র দশকে গড়ে উঠা ফেনী মেডিকেল কলেজে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝামেলা করে নিজে নেতৃত্ব দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল জয়নাল হাজারী। তারুণ্যের স্বপ্নের এই কলেজ। এর পর এটা বন্ধ হয়ে গেলে আজো চালু হয়নি। বিরোধীদের জব্দ করতে চন্দ্রগন্জে একরাতে গ্রামের ৫০ এর অধিক বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে ৪৬ জনকে হত্যা করা হয় পরবর্তীতে এসব অপকর্মের সুষ্ঠ কোন বিচার হয়নি। শুধু ৯৪ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে খুন গুম হয়েছিল হাজারের অধিক, এতছোট একটা জেলা শহরে এত সংখ্যক খুন গুম হত্যাকাণ্ড ততকালীন বাংলাদেশে ছিল নজিরবিহীন আতংকজনক ঘটনা। ৯৭ সালে জাসদ থেকে ভিপি জয়নাল বিএনপিতে যোগ দিলে জয়নাল হাজারীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ব্যাপকতা পেতে শুরু করে, প্রায় এক বছর কয়েক দফা হামলা চালিয়ে ভিপি জয়নাল কে হত্যার চেস্টা করে খুন করে তার বহু সহযোগীকে। শেষে তাকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে জেলে পাঠায়। একই সাথে ভিপি জয়নালের বাড়ীর পার্শ্বে অবস্থিত ফেনী পলিটেকনিকের কিছু ছাত্রকে এর সাথে জড়িতের অভিযোগ করে বন্ধ করে দেয়া হয় ৬০র দশকে প্রতিষ্ঠিত কারিগরি বোর্ডের ততকালিন সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট। জয়নাল হাজারী দোর্দণ্ড প্রতাপে যখন এসব অপকর্ম করছেন তার অন্যতম শিষ্য ছিলেন বর্তমানের নিজাম হাজারী।
নিজাম হাজারী এমপি হওয়ার পর ফেনীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ, মেম্বার চেয়ারম্যান কাউকে কষ্টকরে ভোটে জিততে হয়নি, শুধু এমপি সাহেবের লিস্টে নামটা থাকলেই হয়েছে। এবার জাতীয় নির্বাচন আসার পর থেকেই তিনি নাখোশ বিএনপি থেকে কেউ একজন ভোটে কেন দাড়াল? তাই ভোট পর্যন্ত কি হবে বলা যাচ্ছেনা তবে বিএনপির প্রার্থী আপাততঃ বাড়ীতে অবরুদ্ধ, শহর জুড়ে থমথমে পরিবেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৯