বাংলাদেশের অতি উৎসাহী মিডিয়া ও কতিপয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বন্ধুদের দ্বারা জানতে পারলাম ওয়াশিংটন ডি. সি. তে বিক্ষোভের মতো একটা ঘটনা ঘটেছে এবং ওয়াইট হাউজে ভাংচুর চালিয়েছে কিছু বিক্ষোভকারী; অনেকে আবার ছিঃ ছিঃ বলছে আমেরিকার রাজনীতি নিয়ে ও বাংলাদেশের নির্বাচনের সাথে আমেরিকার নির্বাচন তুলনা করতে শুরু করেছে। প্রায় ছয় বছর হতে চললো আমেরিকাতে আছি, দুটো নির্বাচন দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার কি জিনিস তা নিজে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এখানে রাজনীতি করে রাজনীতিবিদেরা আর সাধারণ জনগন শুধুমাত্র ডলারের পিছনে ছুটে কিভাবে নিজের জীবনের অবস্থার পরিবর্তন করা যায়, নির্বাচনের দিন একটা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে মাত্র। তারা নিজেরাও জানে না কে বা কোন দল বিজয়ী হবে, অনেকে আবার এই সব ব্যাপারে কথা বলতে উৎসাহ বোধ করে না, অদ্ভুত জনগন তাই না! সব জায়গায় সারি সারি পোস্টার কেউ টানায় না, নিজ দলের প্রার্থীরা সব জায়গায় সমাবেশ করে না, যে সব জায়গায় নিজ দলের নাজুক অবস্থা থাকে সেইসব জায়গায় ফান্ড তৈরি করে সমাবেশ করতে হয় তাছাড়া ওই সব সমাবেশে লোকসমাগম দেখানোর জন্য অনেক সময় ভাড়া করে মানুষ আনতে হয় ও প্রতি ঘণ্টা হিসেবে ডলার দিতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ "নির্বাচন কমিশন" নিয়ে কোন সন্দেহের সুযোগ থাকে না, এমন কি নির্বাচন চলাকালে প্রেসিডেন্ট এর কোন মন্তব্য এই সংস্থাকে বিতর্কিত করতে পারে না কারণ সুপ্রিম কোর্ট ও বিচারপতিগন দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে "নির্বাচন কমিশন" এর উপর আস্থা রাখেন। এতো ভালো সিস্টেমের মধ্য দিয়ে একটা সরকার গঠিত হয় চার বছরের জন্য। দিন শেষে আমাদের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এটাই সত্যি কিন্তু তার আগে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এর জানার অবশ্যই আইনগত অধিকার আছে কেন ওইসব অঙ্গরাজ্যে তিনি খারাপ ফলাফল করেছেন ও তার জন্য কি আইনি পদক্ষেপ তিনি নিতে পারেন এই চর্চা টা একজন রাজনীতিবিদের অধিকারের আওতায় পরে এখানে বাংলাদেশের মিডিয়া যেভাবে রং মাখিয়ে তাকে দেখানো হয় আইনি লড়াইয়ে হারতে যাচ্ছেন ট্রাম্প, সেখানে তাকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই। পরিশেষে বলতে চাই, অতি উৎসাহী মানুষের জন্য পুরো আমেরিকাতে যতো সংখ্যক সংস্কৃতির মানুষের বসবাস ও তাঁদের জীবন যাপনের দর্শন তার দশ ভাগও যদি বাংলাদেশ পেতো তাহলে আমরা অনেক আগেই উন্নত হয়ে যেতাম। বাংলাদেশের জনগণ কোন কিছুতেই সুখী হতে পারে না, তাঁদের কাছে নিজের দেশের অগ্রগতি হলো সমালোচনার শামিল, কোন দেশের বিপর্যয়কে নিজের সুখ বলে আনন্দ অনুভব করে, ধর্ম পালনের চেয়ে নিজেদের মধ্যে ধর্মীয় আগ্রাসন বজায় নিয়ে সময় পার করে দেয়, সবকিছুই যদি এই জনগণের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয় তাহলে কোন সরকারের পক্ষে দেশের উন্নতি করা সম্ভব না।অদ্ভুত লাগে যখন পদ্মা সেতুতে ৩.৬৯২ বিলিয়ন টাকা বিনিয়োগকে আমরা অতিরিক্ত খরচ হিসেবে দেখি কিন্তু অন্য সব উন্নত দেশে একটা অবকাঠামো উন্নয়নকে জনগণ সাধুবাদ জানায়। সবকিছুতে প্রতিবাদ ও না নীতির কারণেই সুযোগ সন্ধানীরা ফায়দা নেয়, দুর্নীতি হয়, আইনের সঠিক সুবিধা জনগণ ভোগ করে না আর সব দোষ হয় সরকারের।
আমি যদি নিজের ভাত যোগাড় করতে না পারি, এতে সরকারের কি দ্বায় থাকে। অনেকে বলতে পারেন এই দোষারোপ নিজের সামাজিক অবস্থার জন্য হয়ে থাকে, সত্যি কথা হলো আজকের পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে আপনি যাই করেন না কেন, দিন শেষে কতো কামাই করে ফিরলেন সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
এই সব রং মাখানো সংবাদ না দেখে ও অন্য দেশের সমালোচনা না করে, নিজের চিন্তাশক্তির মাধ্যমে নিজের দেশকে প্রচার করেন। আপনার জীবন যাপনের পরিবর্তন হলে, সমাজ পরিবর্তন হবে, নিজের জাতি শ্রেষ্ঠ হবে ও উন্নত হবে নিজের দেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৪৪