somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"নাগরিক মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতা"

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের অধিকাংশ সময় প্রিয় বাংলাদেশে কাটিয়েছি, স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গাতেই একজন ছাত্র হিসেবে নিজ দেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জেনেছি ও শিখেছি। আমাদের সম্পদের অভাব থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র তাঁর নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সমূহ যেমন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে যাচ্ছে। যে সরকারই রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়, সেই সরকারকেই অনেক সময় বিব্রত মনে হয়। প্রধান কারন হিসেবে আমি উল্লেখ করতে চাই, আমরা আমাদের নাগরিক মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সচেতন না। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরঞ্জিত ব্যাবহারের ফলে আমাদের সবকিছুতে নাক গলানোর প্রবণতাটা দিন দিন বেড়েই চলছে। নেতিবাচক খবরের ভিড়ে আমরা ভুলে যাই আশার আলো সমৃদ্ধ খবর। এই পৃথিবীর কোন দেশের পক্ষে মহামারি দমন করা সম্ভব নয়, যদিনা তাঁদের নাগরিক সেই দেশটিকে সমর্থন দেয় এবং সু নাগরিক হিসেবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করে। সব দেশ যখন COVID-19 এর মহামারি ঠেকানোর জন্য নাগরিকদের গৃহবন্দি করলো, আমরা তা সঠিকভাবে পালন করছি না। আমি San Francisco তে তিন সপ্তাহ ধরে গৃহবন্দি, এই শহরে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাহিরে বের হচ্ছে না। স্বাভাবিক বিষয় হলো নাগরিক হিসেবে সবাই তা মানছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাউকে বাধ্য করছে না। নাগরিক মূল্যবোধের এটি একটি অনন্য উদাহরণ, কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা ভয়াবহ করছি আমরা নিজেরাই – প্রবাসী হিসেবে দেশে ফিরে আমরা ঘুরে বেরাচ্ছি, মানছি না গৃহবন্দির নিয়ম। সরকার যখন ছুটি ঘোষণা করলো আমরা দলবেঁধে বাড়ি ফেরা শুরু করলাম। রেলস্টেশন, দূরপাল্লার বাস, নৌযানগুলোতে তিল ধারনের জায়গা রইলো না কিন্তু আমরা জানি রোগটা ছোঁয়াচে একজন আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসলেই হবে, কিন্তু আমরা মানলাম না। আমরা কি ওই সময় নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করতে পারতাম না ? আমার জন্য আমি আমার পরিবারকে বিপদে ফেলে দিলাম। শুধু তাই না প্রবাসীরা প্রবাসের ভয়াবহতার মধ্যেই দেশে ফিরতে শুরু করল, সরকার যখন প্রবাস ফেরত লোকগুলোকে COVID-19 আছে কিনা তা সনাক্ত করার জন্য একটু কালক্ষেপণ করলো তেমনি অনেক প্রবাসী বিমানবন্দরে বিক্ষোভ করতে শুরু করলো কিন্তু তাঁরাই ওই সব দেশে লাইন ধরে সেবা গ্রহন করে, এতে কোন আপত্তি থাকে না। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের জন্য আহ্বান জানানোর সাথে সাথে সরকারের তরফ থেকে বন্ধের ঘোষণা এলো, আমরা কি করলাম পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে পর্যটন নগরী গুলো ঘুরতে গেলাম ভুলেই গেলাম সরকারের নির্দেশ। শুধু তাই না, একজন COVID-19 আক্রান্ত রোগী হিসেবে যখন কিছু নাগরিকদের একটা সরকার কর্তিক নির্ধারিতস্থানে রাখলো সেইখানের সিলিং ফ্যান চুরি হয়ে গেলো এমনকি হাসপাতালের ফ্যানগুলোও বাকি রইলো না, আমাদের নিজস্ব প্রয়োজন মিটানোর জন্য এই পন্থাটা কতোটুকু দরকার ছিলো তা একজন নাগরিক হিসেবে আমার বোধগম্য নয়।

সরকারের পক্ষ থেকে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনা সীমিত আকারে করার জন্য অনুরোধ করা হলো যাতে জনস্রোত ঠেকানো যায়, কিন্তু অসংখ্য মানুষ ভাবতে লাগলো একমাত্র প্রার্থনার মাধ্যমেই রোগমুক্তি সম্ভব। কিন্তু COVID-19 এর কোন প্রতিষেধক এখনো সবার জন্য উন্মুক্ত না, আবিষ্কৃত হলেও তা সর্বসাধারণের কাছে পৌছতে সময় লাগবে। কিন্তু আমরা ধর্মীয় খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে তাঁদের বিভ্রান্ত করলাম। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্বপ্নে দেখা COVID-19 এর প্রতিষেধক আবিস্কারের উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে শুরু করলাম। মানবজাতির রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা ও বিজ্ঞানের আবিষ্কার দুটোই যে প্রয়োজন তা অস্বীকার করতে লাগলাম। এ যেনো আদিম যুগে ফিরে চলা যেখানে প্রকৃতির দাসত্ব মানুষ গ্রহন করতো ও রোগমুক্তির আশায় মানুষ পূজা করতো।
এই মহামারির মধ্যেও দুর্নীতি বেঁচে থাকলো মানুষের মধ্যে, সাধারন একটা মাস্ক ৫ টাকা থাকে ২০ টাকা, তারপর ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলো। শুধু তাই না, কিছু মানুষ ব্যবহৃত মাস্ক সংগ্রহ করে তা পুনরায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতে লাগলো কিন্তু এই ব্যবহৃত মাস্ক থেকে যে রোগ ছড়ায় তা জেনেও ভুলে গেলো। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকলো, এতো ব্যবসায়ীদের পুরোন সিন্ডিকেট যা থেকে সাধারণ জনগণের রেহাই নেই। কিন্তু একজন ব্যবসায়ী হিসেবে এই মহামারিতেও আমি ছাড় দিচ্ছি না, মানলাম মূল্য ছাড় দিতে পারবো না কিন্তু সঠিক মূল্য তো রাখতে পারি। ভোক্তার সাথে অন্যায় করেও আমি সুনামের আশায় ব্যবসা করি। হাসপাতালগুলোতে সেবা নিতে আসা রোগীদের COVID-19 এর রোগী ভেবে চিকিৎসা দিতে দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হল, এর পরিপ্রেক্ষিতে রোগীর মৃত্যু হলো। এর জন্য কি আমাদের অজ্ঞতা দায়ী নয়? কে দিবে জবাব? সবাই দায় এড়িয়ে চলে যায়।

আমরা জানি এই জনবহুল দেশে সহজে এই মহামারি দমন করা সম্ভব নয়, সরকারের পক্ষ থেকেও যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যাতে সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার থেকে বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে ভর্তুকি, ত্রাণ দিয়ে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়োজিত আছে এই ক্রান্তিকাল থেকে মানুষকে সচেতন করার জন্য, যাতে তাঁরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে। কিন্তু আমরা স্রোতের বিপরীতে হেঁটে নিজেরাই নিজেদের বিপদে ফেলছি। কেন আমরা এমন করছি? নাগরিক হিসেবে আমাদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা ও মূল্যবোধের এতোই অভাব। অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে যাতে গরীব বলে না খেয়ে মৃত্যুবরণ না করে, এমন কি মধ্যবিত্তদের মধ্যেও ঘরে গিয়ে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এতো কিছু সুযোগ পাবার পরও আমরা ঘরের বাহিরে বের হচ্ছি, কখনো মিথ্যা বলে অথবা অপ্রাসঙ্গিক প্রয়োজনে। আপনি আপনার নিজের, পরিবার, সমাজ ও দেশের কথা চিন্তা করে একটু মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করলেই এই মহামারির ছোবল থেকে সবাইকে রক্ষা করতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৬:১৩
২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণপরিষদের সাথে বিএনপির সখ্যতার কারণ কি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭


বিএনপির নেতাদের সাথে গণপরিষদের নেতাদের ঘন ঘন সাক্ষাতের বিষয়টি মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে।বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে যখন বিএনপি হাই কমান্ড থেকে পটুয়াখালী -৩(দশমিনা-গলাচিপা) আসনের নেতাকর্মীদের কাছে চিঠি দেয়া হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫২



সুকান্তর একটা কবিতা আছে, দুর্মর।
"সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়:, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।" মানুষের ভবিষ্যৎ বলা সহজ কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×