একসময় ছিল, ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ছেলেমেয়েদের গড়ে তোলার জন্য মা-বাবারা স্বপ্ন বুনতো। আমি স্রোতের উলটো দিকে ফিরে অন্য কিছু হলাম, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েও এখনো ছাত্র রয়ে গেলাম। মনে কেন জানি ভয় কাজ করতো ডাক্তারি পেশাটা নিয়ে, আমি ছুরি, কাঁচি দিয়ে মানুষের শরীর কাঁটা ছেড়া করবো, মানুষের জীবন নিয়ে সমাধান দিব, যদি ভুল কিছু হয়ে যায় ওই রোগীর সাথে। এই ভাবনা থেকে নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম, শুভ তোমার দ্বারা এই কাজ সম্ভব না। যাই হোক আজ আমার বংশে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার দুই শ্রেণীর মানুষই আছে।
ডাক্তারদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা কেন জানি অনেক বেড়ে গেছে, উন্নত দেশের ডাক্তারদের মতো আমাদের দেশের কথাই বলি, এতো অল্প সুযোগ সুবিধা পেয়েও তাঁরা যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তা সত্যি বিস্ময়কর, সমস্ত দেশের মানুষ যখন গৃহবন্দী, আমাদের ডাক্তাররা জাগ্রত। তাঁদেরও পরিবার আছে কিন্তু মহান পেশায় তাঁরা নিজেদের অর্পণ করেছে, মৃত্যু আছে জেনেও COVID-19 রোগীদের সেবা দিচ্ছে, পিপিই সংকট থাকা সত্ত্বেও পেশাদারিত্ব থেমে নেই। কিন্তু জাতি হিসেবে আমরা তো Gold Fish, চুন থেকে পান খসলেই ডাক্তার সাব বেশী বুঝেন, তাঁদেরকে লাঞ্ছিত করা থেকে শুরু করে যা মনে হয় বলি। আবার অতিরিক্ত ফি নেয়ার কারণ ও অনাকাঙ্ক্ষিত রোগীর মৃত্যুর জন্য কসাই এর সাথে তুলনা করি। স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যদি কথা বলতে যাই, আমেরিকাতে স্বাস্থ্যবীমা আছে কিন্তু তা এতো শর্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ যে, আপনি অসুস্থ হলে সেবা পাবেন কিন্তু অধিকাংশ সময় খরচ সম্পূর্ণভাবে স্বাস্থ্যবীমার আওতায় থাকে না, আপনাকে অল্প হলেও নিজের পকেট থেকে দিতে হবে, তাছাড়া আপনি প্রতি মাসে স্বাস্থ্যবীমা বাবদ আপনার আয়ের একটা অংশ ওই বীমা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হচ্ছে। তাই আপনি অসুস্থ না হলেও আয়ের একটা অংশ চলে যাচ্ছে ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানোর জন্য। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবীমা সম্পর্কে খুবই সল্প সংখ্যক মানুষ অবগত আছে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়লে নিজের সর্বশ দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাই। আর এই ক্ষোভ ডাক্তার, হাপাতালের উপর প্রয়োগ করি। কিন্তু কেন? সেবার মানের কথা বিবেচনা করলে আপনি অবশ্যই ১ম, ২য়, ৩য় শ্রেণীর কথা চিন্তা করেন এবং এই ক্রমানুসারে অসংখ্য হাসপাতাল আমাদের দেশে আছে শুধু তাই না, সরকারের কঠোর নীতির কারণে সদ্য পাশ করা অধিকাংশ ডাক্তার গ্রাম থেকে তাঁর পেশা জীবন শুরু করে এবং অনেক স্বল্প টাকার বিনিময়ে সেবা দিয়ে থাকে। ভাল সেবা পেতে গেলে ভালো হাসপাতালে যেতে হবে, তাই খরচ তো বেশী পড়বেই । গরীব মানুষের কথা না ভেবে একটু স্বার্থপর হয়ে গেলাম তাই না, সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলে তাও সম্ভব, গ্রাম থেকে শহর পর্যায়ে বাংলাদেশের জনগণ অতি অল্প খরচে স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে যা অন্য দেশ সমুহে ব্যয়বহুল। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি রোধ করতে হবে, সাথে সাথে হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করতে হবে। হাসপাতালে সাধারণ মানুষ কেন রশিদ কেটে প্রবেশ করবে তাছাড়া রোগী বহন করার ট্রেচার ও এ্যাম্বুলেন্সের জন্য কেনো অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় তা খোঁজ নেয়া জরুরী, অনেক জায়গাতে আরো কঠোর হওয়া প্রয়োজন ড্রাগ লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট যাচাই বাছাই করা উচিত, ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার সমূহের ওপর নজরদারি বাড়ানো সহ নির্ভুল পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক ফলাফল দেয়ার জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। ঔষধ শিল্পে বিপণন বিক্রেতা ও ডাক্তারের মধ্যে যে সিন্ডিকেট তা জবাবদিহিতার মধ্যে আনা প্রয়োজন যাতে অপ্রয়োজনীয় ঔষধের মাধ্যমে রোগীর জীবন বিপন্ন না হয়। তবে স্রোতের বিপরীতে কিছু ডাক্তার ক্ষুদ্র লাভের আশায় রোগীকে নিজস্ব মালিকানাধীন ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে রোগীদের ভর্তি হতে অনুপ্রাণিত করেন যেখানে মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকে? কিন্তু একজন রোগী আরোগ্য লাভের জন্য আপনাকে সৃষ্টিকর্তার মতো বিশ্বাস করে, তাঁর বিশ্বাসে আঘাত করা মানে আপনি আপনার ডাক্তারি পেশার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা।
ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না, আমার অসংখ্য বন্ধু বান্ধব, ভাই বোন যারা ডাক্তার হয়েছে বা হচ্ছে তাঁরা প্রিয় বাংলাদেশের অনেক বড় সম্পদ। শুধুমাত্র বাজে সিস্টেম ও অসুস্থ সিন্ডিকেটের দোহাই দিয়ে তাঁদের ব্যক্তিত্বকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ সকাল ৭:৫৮