একজন শিক্ষার্থীর সোনালি দিন হল তাঁর স্কুলজীবন, এই স্কুলজীবনই তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। ভবিষ্যতে একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার মূলে রয়েছে এই স্কুলজীবন। আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি, কারন আমার স্কুলজীবনে আমি সেই সব শিক্ষক-শিক্ষিকার সান্নিধ্য লাভ করতে পেরেছি যারা শুধু আমার শিক্ষক-শিক্ষিকাই ছিলেন না, ছিলেন আমার অভিভাবকও। তাই তাঁদের স্থান আমার পিতা-মাতার সমান। তাঁদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন তিনি হলেন “গোলজার আহমদ খান” আমার “গোলজার স্যার”। আমি সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম, স্কুল মানেই পরাশুনা, খেলাধুলা, দুরন্তপনা আর এই সবকিছুর মধ্যে শিক্ষকদের আদর ও তিরস্কার। গোলজার স্যারকেই প্রিয় শিক্ষক বলার কারণ হল তাঁর মধ্যে যে গুণাবলী গুলো ছিল তা ছিল অনুকরণীয়, যা সচরাচর সবার মধ্যে ছিল না। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন কঠোর তেমনি ছিলেন কোমল। তাঁর সাথে প্রথম দেখা হয় আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, তিনি আমাদের বিজ্ঞান পড়াতেন। তাঁর পড়ানো আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করত, শুধু তাই নয় তাঁর বচনভঙ্গি আমাদের এতই আকৃষ্ট করত যে, সব পড়াই আমরা সহজে আয়ত্ত করতাম। তিনি সবসময় আমাদের বলতেন তোদের সব পড়তে হবে, জানতে হবে, জ্ঞানের এই অসীম ভাণ্ডার তোদের উপলব্ধি করতে হবে। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের মধ্যে যে চেতনা লক্ষণীয় তার সবটুকু ছিল স্যার এর মধ্যে যা তিনি নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বিলিয়ে দিতেন তাঁর ছাত্রদের মধ্যে। স্যারকে আরও পাশে পাই যখন আমি দশম শ্রেণীতে, তখন স্যার ছিলেন আমাদের শ্রেণী শিক্ষক। একজন শ্রেনী শিক্ষক হিসেবে যে দায়িত্ব তাঁর ছিল, আমার মনে হয় তাঁর চেয়েও বেশী দায়িত্ব স্যার আমাদের ক্ষেত্রে পালন করেছিলেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের ছদ্মনামে ডাকতেন এতে আমাদের প্রকৃত নাম যেমন, শীর্ষেন্দু, মাহীন, অপু, রাহুল, দেবাশীষ বদলে হল যথাক্রমে শীর্ষ ছেলে, রত্ন ছেলে, দেব ছেলে, রাতুল, বিশ্ব ছেলে ইত্যাদি। এভাবে আরও অনেকের নাম বদলে গেল। তাঁর প্রশংসা করার মাত্রা ছিল অন্যধরনের, কোন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সাথে সাথে বলতে থাকতেন “বাঃ বাঃ দেখছ দেখছ” যা আমাদের কাছে প্রেরণার উৎস ছিল। তাঁর বচনভঙ্গি এতটাই মধুর ছিল যে, পড়াশুনাটা আমাদের কাছে বোঝা না হয়ে আনন্দদায়ক হত। তবে তিরস্কারের ক্ষেত্রেও তিনি কোঠর ছিলেন কোন কিছু ভূল করলে একটি কথাই শুধু বলতেন “পিঠের চামড়া তুলে ফেলব” যা আমাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করত। খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় স্যার আমাদের উৎসাহ দিতেন অংশগ্রহনের জন্য শুধু তাই নয় বি.এন.সি.সি, স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট ইত্যাদি সংগঠনের সদস্য হিসেবে আর্তমানবতার সেবায় ছাত্রদের ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান করতেন। বই পড়তে তিনি সর্বদা ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করতেন তাইতো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের “বই পড়া কর্মসূচিতে” আমাদের ছিল সফল অংশগ্রহন। তিনি আমাদের মানুষের মত মানুষ হবার প্রেরণা দিয়েছেন, শুধু তাই নয় জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছেন। শিক্ষকদের মুখ্য কাজ যদি শিক্ষাদান হয়, আমি মনে করি স্যার আমাদের শিক্ষার পাশাপাশি জীবনের মূল উদ্দেশ্য খোঁজার উৎসাহ দিয়েছেন। আজ আমার এই এতদূর পর্যন্ত আসার মূলে রয়েছে স্যার এর অবদান। স্যার আপনি সুস্থ থাকেন এটাই আমার একমাত্র প্রত্যাশা কারণ আমাদের মত অগণিত শিক্ষার্থী আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১২ বিকাল ৪:৩৮