দুপুর বারোটার মধ্যেই কাজ সেরে হোটেলে চলে এলাম।মধুমিতা ভাইও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন।
ঊনার গাড়ীতেই আল-আবহা শহর দেখতে বেরুলাম।
আবহা হচ্ছে সৌদি আরবের দক্ষিন-পশ্চিম প্রান্তের আশির প্রদেশের রাজধানি শহর।আসির আরবী শব্দার্থ হচ্ছে কঠিন।সেখানকার লোক জনও নাকি চারিত্রিকভাবেই খুব কঠিন মনের।আমাদের পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মতো এখানেও বাইরের লোকেরা কোন জমি জমা ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যাবসা বাণিজ্য করতে পারেনা।
আসির প্রদেশ বেশ কয়েকটি পাহাড়,উপত্যকা এবং সমভূমি নিয়ে গঠিত।আবহা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার ফুট উপরে।আর তাই জলবায়ু সারা বছরই ঠান্ডা থাকে,দেশের সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাতও হয় এখানে।তাই সবুজ চারণভূমি এবং কৃষি ভুমিও এখানে আছে।আর এই সুন্দর দৃশ্যাবলী,বিখ্যাত কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বতের চূড়া এবং ঠান্ডা বাতাসের কারণেই গ্রীষ্মকালে সৌদি আরবের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সবাই এখানে ছুটি কাটাতে আসে।
আমরা দুজনে গল্প করতে করতে পাহাড় বেয়ে একটু নীচে নেমে গেলাম।সেখানে দেখলাম বিশাল এক পানির জলাধার বা ড্যাম।আরও আছে আশপাশে শিশু পার্কসহ ছোটখাটো পিকনিক স্পট।এখন সারা সৌদি আরবের মতো সেখানেও উন্নয়নের কাজ চলছিল।
এর নিকটেই আসির ন্যাশনাল পার্ক।তবে আমরা দুজনেই সিঙ্গেল ছিলাম বলে ভেতরে যাইনি।এটা সৌদি আরবের প্রায় প্রতিটা শহরেই প্রযোজ্য।পরিবার ছাড়া অনেক স্থানেই প্রবেশ নিষেধ এমনকি অনেক শহরেই বসুন্ধরা মার্কেটের মতো বড় বড় মলেও প্রবেশ নিষেধ।
আভা শহরের মাঝখানে রয়েছে একটি সবুজ মাউন্টেন,যেখান থেকে সম্পূর্ন আবহা শহরটি দেখা যায়।তাই পর্যটকদের জন্য এই পাহাড়টিকে আরো আকর্ষনীয় করতে রাতের বেলায় সবুজ লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়, যা দূর থেকে আরো চমৎকার মহনীয় করে তুলে। পাহারটির উপড়ে পর্যটকদের জন্য রয়েছে হোটেল-মোটেল।অনেকেই সেই মহনীয় পাহাড় থেকে সুর্যাস্ত বা রাতের দৃশ্য দেখতে পছন্দ করে।
রাতের বেলার দৃশ্য
বেলা দুটোর সময় ভাবী বাসায় ফিরবেন তাই ফিরে গেলাম লাঞ্চ করতে।খেতে বসে দেখলাম একদম দেশী মুরগীর মতো,জিজ্ঞেস করে জানলাম এগুলি সৌদি দেশী মুরগী(পাহাড়ী),সাইজে একটু বড় দাম চারগুণ বেশী।এগুলো কিনেছেন এখানকার আরেকটি প্রসিদ্ধ স্থান সুক তালাতা অর্থাৎ মঙ্গলবারের বাজার থেকে।
মঙ্গলবারের বাজার মূলত মহিলা বিক্রেতারা চালায়,এছাড়া তাদের বেশিরভাগই হচ্ছে তালাকপ্রাপ্তা আর বেদুঈন পুরুষেরা যাদের সংক্ষেপে আমরা বেদু (কৃষকদের আমরা যেমন বলি চাষা বা ক্ষেত ) বলে থাকি। এটা অনেকটা আমাদের গ্রামের হাট বা মেলার সঙ্গে তুলনা করা যায়। সেখানে পাওয়া যায় স্বর্ণ ও রূপার বেদুইন গয়না,জাম্বিয়া(বেদুদের কমড়ে রাখা একপ্রকার ছুরি),ট্র্যাডিশনাল পোষাক,ঝুরি,টুপি থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগি,খোরগোস, শজারু,কবুতর,পাখি,হরেক রকমের মশলা,খেজুর,মধু,হাড়িপাতিল ইত্যাদি রকমারি পসরা।
এখানে উল্লেখ্য সৌদিরা খরগোশ খায় আগেই জানতাম কিন্তু কাঁটাওয়ালা শজারু খায় শুনে,ভয়ে আমার শরীরেও কাঁটা দিয়ে ঊঠলো
চলবে ----
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯