যখন কেউ সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার ব্লগ একাউন্টটি কোন কারনে মুছে ফেলতে চান তখন সাধারনত তিনি ব্লগ কর্তৃপক্ষকে একটি আনুষ্ঠানিক ইমেইল করেন। ব্লগ কর্তৃপক্ষ উক্ত ব্লগারের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। যে কোন ব্লগ একাউন্ট মুছে ফেলার এটাই স্বাভাবিক পদ্ধতি।
এখন যদি কেউ তার ব্যক্তিগত ব্লগ একাউন্ট মুছে ফেলার জন্য ইমেইল না করে ব্লগে পোস্ট দেন এবং পোষ্টের শিরোনামে আল্লাহর সাহায্য চান তাহলে ধরে নিতে হবে উক্ত ব্লগার মনে করেন 'আল্লাহ' ব্লগ টিমের অংশ বা ব্লগ টিম চালান অথবা উক্ত ব্লগার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ধর্মকে অপব্যবহার করছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই পোস্টটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং পোস্ট দাতাকে একটি নোটিসও পাঠানো হয়েছে। পোস্ট দাতা সেই নোটিশটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপব্যাখ্যার মাধ্যমে কিছু সমমনা ব্লগারদের সাথে নিয়ে সামহোয়্যারইন ব্লগ যে ধর্মের বিরুদ্ধে 'তথাকথিত' অবস্থান নিয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
যে কেউ চাইলে এই ধরনের কোন মেইলকে প্রকাশ্যে আনা যায়। কিন্তু কোন মেইলকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার পর সেটার অপব্যাখ্যা সৃষ্টি করা বা সৃষ্টি করতে সাহায্য করা এক ধরনের অপরাধ মুলক মানসিকতার বহিঃ প্রকাশ। এটা ভীষন বিপদজনক আচরন। এর প্রধান উদ্দেশ্য, সামহোয়্যারইন ব্লগে ধর্ম চর্চা করা যায় না, সামহোয়্যারইন ব্লগে সব অশ্লীল এবং অনৈতিক বিষয়কে সমর্থন দেয়, এরা ইসলাম বিদ্বেষী এবং আরো অনেক কিছু প্রমান করা।
আমরা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, মায়ানমার যেমন সীমান্তে বার বার বাংলাদেশকে সংঘাতে লিপ্ত হবার জন্য উসকানী দিচ্ছে, তেমনি এই ধরনার কর্মকান্ডও ব্লগের প্রতি একধরনের উসকানী। কিন্ত সামহোয়্যারইন ব্লগ বাংলাদেশের মত শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক 'কড়া' প্রতিবাদ জানিয়েই ব্যাপারটাকে ওভারলুক করবে না, এখন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহন করবে।
অতীতে সামহোয়্যারইন ব্লগে ধর্মের পক্ষে এবং ধর্মের বিপক্ষে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। ভালো মন্দ কম বেশি অনেক লেখাই ব্লগার হিসাবে আমরা দুই পক্ষ থেকেই পেয়েছি। দারুন সব আলোচনা থেকে উভয়ের জন্য শেখার অনেক বিষয় ছিলো। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমানে ব্লগে যারা ধর্ম নিয়ে বেশি সরব থাকে, ধর্ম নিয়ে লিখেন, চুন থেকে পান খসতে দিতে চান না বা নিজেকে অতি ধার্মিক হিসাবে প্রমান করতে চান – তাদের শতকরা প্রায় ৯০%ই নির্বোধ, ধর্মান্ধ এবং মানসিকতার দিক থেকে কিছুটা ভন্ড প্রকৃতির। যদিও এখানে উপযুক্ত শব্দ হতো ছাগু। কিন্তু ছাগু শব্দটি ব্যবহার করতে পারলাম না ব্লগার গোফরানের কারনে। তিনি কারনে অকারনে বিভিন্ন পোষ্টে ছাগু শব্দটি ব্যবহার করে ছাগু শব্দটির প্রতি যে ঘৃণা লুকায়িত ছিলো তা বিনষ্ট করেছেন। তার প্রতি আনুষ্ঠানিক তিরস্কার। যদিও তিনি বর্তমানে নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে করেছেনও। কিন্তু যা ক্ষতি হবার তা ইতিমধ্যে হয়েছে। অশ্লীলতার প্রতিবাদ করলেই কেউ ছাগু হয় না। তেমনি কোনটি অশ্লীল আর কোনটি অশ্লীল নয় সেটা বুঝতে পারাও একটি বেসিক ব্যাপার।
আমি ব্লগার আহমেদ জী এস ভাইয়ের একটি পোস্ট এর কথা উল্লেখ্য করতে চাই। তিনি একটি সময় পৃথিবীর বিতর্কিত সব ছবি শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেই সিরিজটি যদি তিনি এখন প্রকাশ করতেন তাহলে যে কমেন্টগুলো পেতেন তা অনেকটা নিম্নরূপঃ
১। কিতারে! এই মাইয়ার কি জামা কাপড় না নি। অশ্লীল বেডি। ঝাড়ু দিয়া বাড়ি। এই সব দিয়া কি হয়? ব্লগে এই সব কি পোস্ট আসে?
২। আমি বুঝি না, এই সব ল্যাংটা ছবি কিভাবে শিল্প হয়? নাউজুবিল্লাহ। এই সব অশ্লীলতা সামুতে প্রকাশ পায় কিন্তু ইসলাম নিয়ে পোস্ট দিতে নানা সমস্যা।
৩। সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, প্রথম পাতায় শিল্পের নামে এই ধরনের পোস্ট কিভাবে থাকে? ফ্যামিলির নিয়ে ব্লগ পড়া যায়।
এই যে এই সকল কমেন্ট যারা করেন তারা কারা? তারা কি ধরনের মানসিকতা রাখেন? তারা কি ধার্মিক?
এর জবার হলো, এরা হচ্ছেন ছাগু বা ভন্ড মানসিকতার মানুষ। ছাগু মানসিকতা বলতে বুঝায়, যারা ধর্মের আবরনে নিজের মানসিক দৈন্যতাকে ঢাকার চেষ্টা করে, রক্ষনশীলতার নামে যারা চিন্তাভাবনার স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, নিজেদের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করে, অন্যকে সহজেই বিচার করে ইসলাম বিদ্বেষী, ধর্ম বিদ্বেষী, জাহান্নামী ইত্যাদি বানায়।
বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা কিছুটা রক্ষনশীল। ফলে রক্ষনশীলতাকে আমরা সম্মান করি। আমরা চাই একজন মানুষ স্বাধীনভাবে তার ধর্মকর্ম পালন করবে। কিন্তু রক্ষনশীলতা প্রয়োগ করতে গিয়ে নিজের বিবেক বুদ্ধি সব বিসর্জন দিবে - এটা সমর্থনযোগ্য না এবং সেটাকে রক্ষনশীলতাও বলে না।
এই ছাগু মানসিকতার ব্যক্তিদের দৈন্যতার প্রমান দেখাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক ধার্মিক ব্যক্তি কেউ বুঝে বা না বুঝে পাকিস্থানকে শুধুমাত্র মুসলমান হবার জন্য সমর্থন করেছিলো। এদেরকে আমরা রাজাকার বলি। অধিকাংশ রাজাকারের মুখে দাঁড়ি ছিলো। মাঝে মাঝে যখন কোন ব্যক্তি প্রচন্ড ঘৃনিত কাজ করে তখন আমরা ক্ষোভে হয়ত বলি দাঁড়ি ওয়ালা ছাগল বা যখন কেউ রাজাকার সাজে তখন ধর্মীয় লেবাস আর দাঁড়ি থাকে।
আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন যারা ছাগু প্রকৃতির মানুষ তারা কিন্তু ছাগল শব্দটিকে গ্রহন করবে না। যদিও তারা কিন্তু জানে যে এক প্রজাতির ছাগলের থুতনির নিচে দাঁড়ি থাকে যা ছাগলা দাঁড়ি নামে বেশি পরিচিত। মুল উদ্দেশ্য বা বক্তব্য বাদ দিয়ে হাউ কাউ শুরু করবে দাঁড়ি আর ধর্মীয় পোষাক নিয়ে। কারন দাঁড়ি শব্দটি গ্রহন করলে সাধারন মানুষের ধর্মীয় চেতনাকে ব্যবহার করা যায়, উত্তেজিত করে নিজেদের দৈন্যতাকে ঢাকা যায়। এইভাবে ছাগু সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে। সুকৌশলে ছাগুত্বকে ধর্মপ্রান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে পুরো জাতিকে মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ করা হচ্ছে। যার প্রমান বিভিন্ন সামাজিক ভিডিও কমেন্ট সেকশনে গেলেই দেখা যায়।
দুঃখজনকভাবে, অধিকাংশ ব্লগার এখন ব্লগে সময় দিতে পারছেন না দেখে ব্লগে এই ধরনের আগাছার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের সাজানো গোছানো বাগান যখন আগাছায় ভরে যায় তখন কেমন লাগে, এটা এখন বুঝি। এই টাইপ ব্লগারদের ব্লগে থাকা বা না থাকার মধ্যে ব্লগ এবং ব্লগারদের কোন উপকার নেই। সামহোয়্যারইন ব্লগ মুসলানদের জন্য ভালো না, বা এখানে ইসলামী মুল্যবোধ নেই টাইপ যতই ম্যাতাকার বা ‘ম্যা ম্যা’ হোক কেন তার মুল্য নেই। মডারেশনের গঠনমুলক পরামর্শকে এরা নেয় ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান হিসাবে। ফলে এরা আজীবন নেয়ামুল কোরান আর অনলাইন বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল থেকে লেখা কপি পেষ্ট করে ইসলামী ব্লগিং এর দায়িত্ব পালন করে যাবেন। ইসলামিক কোন বিষয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহন করতে পারবেন না, লিখতেও পারবেন না।
ব্লগার গিয়াস লিটন ভাই এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ধর্ম নিয়ে যেসব পোস্ট আসে বেশির ভাগ ওয়েট লেস, পুরোনো কাসুন্দি। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় সুরা নেসা'র আলোকে - "কারো পুত্র সন্তান না থাকলে পুরো সম্পত্তি কন্যা পাবে" ইজমা কিয়াসের ভিত্তিতে এরকম এক যুগান্তকারী মুসলিম আইন পাশ হয়েছে। আমি খুব করে চাইছিলাম ব্লগে এটা নিয়ে পোস্ট আসুক। আসেনি। পরে ভাব্লাম ব্লগে যারা ইসলামি পোস্ট দেন এদের বেশির ভাগ ইসলামী দুনিয়ার খবরই রাখেনা।'
আমি নিশ্চিত গিয়াস লিটন ভাইয়ের এই মন্তব্য শুনে ঐ সমমনা ব্লগাররা লিটন সাহেবেরও গুষ্ঠি উদ্ধার করছেন। সম্ভাব্য কমেন্ট - ঈমান বড় না লেখা বড়? এই সব নিয়ে লিখে কি ঈমান হারাবো?
নিজেদের পছন্দ না হলে সৌদি আরবের ইসলামিক ইতিহাস বা রীতিনীতি তো অনেক পরের ব্যাপার, খোদ কোরানের বানীকে পর্যন্ত এরা হাদীস দিয়ে নিজের সুবিধার জন্য অপব্যাখ্যা করে।
ফলে, খুব দ্যর্থহীন ভাষায় আমরা মনে করি - এদের মত ব্লগার থাকা বা না থাকায় ব্লগ এবং ব্লগারদের কোন উপকার নেই। আমি নিশ্চিত, এই লেখা পড়ার পর ঐ গ্রুপের অধিকাংশ ব্লগার আরো তীব্র বেগ হুক্কা হুয়ার মাধ্যমে আমার গুষ্টি উদ্ধার করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ধর্মান্ধ এবং ছাগল শ্রেনীর পাবলিকের কথাবার্তাকে 'চাইর' পয়সার দাম দেই না। যেমন,কেউ কেউ মনে করেন আমি নির্দিষ্ট কাউকে টার্গেট করে মডারেশন পরিচালনা করছি। সিরিয়াসলি?? খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই আমি সারাদিন আবর্জনা ঘাটব? আবর্জনা অনেক ঘেটেছি, কিন্তু তাতে না পেয়েছি ভালো মানের জৈব সার বা পেয়েছি কোন বাই প্রোডাক্ট। ফলে এদের কোন মুল্যই নাই আমার কাছে।
ব্লগে পোস্ট করতে হলে আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে, ক্যাচাল করতে হলেও সৃজনশীল হতে হবে। অর্থাৎ যে ক্যাচাল করতে হলেও উপযুক্ত পড়াশোনা করতে হবে, অন্যের মতামত গ্রহন করার মানসিকতা থাকতে হবে, অন্যকে সম্মান করতে হবে এবং সর্বপরি ভন্ড আচরন বন্ধ করতে হবে। ইহা গ্রাম্য ক্যাচালের স্থান না। অন্যকে জোর করে আপনার আইডোলজি গেলানোর স্থান না। সকলেরই শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। সামহোয়্যারইন ব্লগ মাদ্রাসা বা মন্দির বা অন্য কোন ধর্মের ধর্মশালা হবে না। এখানে সবাই সমান সুযোগ পাবে। কোন ধরনের ‘ছাগলামি’ এখানে প্রশ্রয় পাবে না – খোলা প্রান্তরে অনেক বিচরন হয়েছে আর না।
দিনশেষে ছাগলের খোঁয়াড় হিসাবে পরিচিতি পেয়ে ব্লগ বন্ধের চাইতে ব্লগিং এর সেরা সময়কার স্মৃতি নিয়েই বন্ধ হওয়া বহুত ভালো।
শুভ ব্লগিং।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৮