বছর ঘুরে আবারও শুরু হয়ে গেল অমর একুশে বই মেলা-২০১৪। এবারের বই মেলা বাংলা একাডেমীর মাঠের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, এই বিভক্তির সম্প্রসারন হয়ত মেলার সৌন্দর্য কিছুটা ক্ষুন করবে, কিন্তু দিন শেষে নিজেকে ভূল প্রমানিত হতে দেখে বেশ ভালোই লাগছে। বরং একাডেমীর অংশের চাইতে সোহরাওয়ার্দী অংশটিকে বেশ ভালোই জমজমাট বলে মনে হয়েছে।
প্রতিবারের মত এবারও বেশ কিছু প্রকাশনী থেকে সামুর অনেক ব্লগারদের বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যা জেনেছি তাতে ঐ প্রকাশনীগুলোর স্টল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশেই মূলত বেশি। ফলে এই অংশেই হয়ত পরিচিত লেখক ও ব্লগারদের বেশি দেখা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা বই মেলাকে কেন্দ্র করে পুরো ফেব্রুয়ারী মাসটাই পরিনত হয় একটা জমজমাট আড্ডার মাসে। তাই বই কেনার পাশাপাশি প্রানবন্ত আড্ডার মাধ্যমে আশা করি রথ দেখা ও কলা বেচা দুটোই আমরা করতে পারব।
এই লক্ষে প্রথম দিন থেকেই ঝাপিয়ে পড়লাম। ঘুরে আসলাম বই মেলায় প্রথম দিনেই। আমার সাথে অলিম্পাস কোম্পানীর একটি প্রাগৈতিহাসিক আমলের একটা ক্যামেরা ছিল। যারা দেশের বাইরে আছেন, কিংবা দেশে থেকেই ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারনে হয়ত সময় করে আসতে পারবেন না তাদের জন্য একটা ছবি ব্লগ দিলাম। আশা করি দুধের স্বাধ পানি মিশ্রিত ঘোলে কিছুটা মিটবে।
প্রবেশ পথঃ এবার রাস্তায় কোন স্টল বসতে দেয়া হয় নি, তাই রাস্তা ফাঁকা। মাঝরাস্তার আইল্যান্ড এবং প্রবেশ পথে বই মেলা উপলক্ষে বাহারী তোরণ বসানো হয়েছে।
বাংলা একাডেমী অংশের কিছু ছবি। এখনও অনেক দোকানের প্রস্তুতি পর্ব চলছে।
নজরুল মঞ্চেও বেশ আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
প্রথম দিন বলে প্রায় ফাঁকাই লিটল ম্যাগাজিন চত্তর। অন্যান্যবার যে স্টলগুলো লিটল ম্যাগাজিন চত্তরের সামনেই বসে সেগুলোকে এবার সরিয়ে নেয়া হয়েছে দেখে মনে হয় বিশাল একটা জায়গা বুঝি লিটল ম্যাগের জন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
নজরুল মঞ্চের একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ল ঐতিহাসিক মুক্তধারা প্রকাশনী (স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ)।
বইমেলার ইতিহাসের সাথে এই প্রকাশনীটির অত্যন্ত প্রত্যক্ষ ভূমিকা আছে।
এটি প্রতিষ্ঠা করেন চিত্তরঞ্জন সাহা। ভদ্রলোক বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের একজন পথিকৃৎ। তিনিই বাংলা একাডেমী বই মেলার প্রথম উদ্যোক্তা ছিলেন। তার হাত ধরেই মূলত বই মেলার শুরু হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে অন্যান্যরা অনুপ্রাণিত হোন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমীকে মেলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি; এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। (তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া)
প্রায় পর্দার আড়ালে থাকা এই মানুষটি ১৯২৭ সালে বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার লতিবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। (মানে হ্যাতে নোয়াখাইল্লা! । বই মেলার ইতিহাস জানার নিমিত্তেই এই তথ্য গুলো সংযুক্ত করা হলো, কোন প্রকার স্বজন প্রীতি কিংবা আঞ্চলিক প্রীতির অভিযোগ কাম্য নয় )
কিছু খুচরা ছবিঃ
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে প্রবেশের তোরণঃ
মেলার ভেতরের দিক।
এখনও অনেক স্টলের প্রস্তুতি শেষ হয় নি। চলছে শেষ মুহুর্তের ঘষামাজার কাজ।
আরো কিছু স্টল
প্রথমে বাংলা লায়নের স্টল ভেবে প্রান খুলে ইয়ে দিয়ে বলতে যাচ্ছিলাম, কি হে বাপু তোমাদের আইএসপি থেকে ব্লগে ঢুঁকতে পারি না কেন?? পরে ভালো করে চেয়ে দেখি বাংলালায়ন না, স্টলটার নাম বাংলায়ন
হুমায়ুন আহমেদ ও অন্য প্রকাশ প্রকাশনীঃ
অন্য প্রকাশ প্রকাশনীর সামনে গিয়ে এক ধরনের কষ্ট অনুভব করলাম। আবারও স্বীকার করতে বাধ্য হলাম, আর কখনই হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই প্রকাশিত হবে না।
আদী প্রকাশনী! এখান থেকে বেশ কিছু ব্লগারের বই প্রকাশিত হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে, হাসান মাহবুব, নাজিম উদ দৌলা এবং অপর্ণা মম্ময়, রাসয়াত রহমান জিকো।
এখানে হাসান মাহবুব ভাই সহ অনেক ব্লগারদের সাথে দেখা হয়ে গেল। বই কেনা এবং অটোগ্রাফের পালা শেষে পোলাপাইন শুরু করল বিশাল ম্যারাথন আড্ডা আর শুটিং কনটেস্ট। আমাদের সবাইকে পিছনে ফেলে বিস্মিত করে প্রথম হলো নব ব্লগার দম্পতি তন্ময় ফেরদৌস ও অপরিনীতা। এমন লক্ষ্যভেদী কাপল সচারচর দেখা যায় না। দূর্দান্ত এই আড্ডা শেষ হলো বিখ্যাত চে' দা এর একটি অসামান্য চৈনিক পরিবেশনায়! তাকে ধন্যবাদ।
আপাতত বিদায়! জানি না ঠিক কতগুলো ছবি আপলোড করেছি। সামনে বই মেলা নিয়ে আরো পোষ্ট দেয়ার ইচ্ছা রাখি। ধৈর্য ধরে এতক্ষন প্যানপ্যানানি সহ্য করার জন্য অগ্রিম ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:২৯