somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের পরিমল স্যার

২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পরিমল স্যারের খপ্পরে যে একবার পড়েছে তার অবস্থা দফারফা। নাম শুনলেই কেমন আতংক কাজ করে সবার মাঝে। ছেলে হোক আর মেয়ে হোক সকলেরই একই অবস্থা। ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হওয়ার আগেই একটা একটি আবহ তৈরী করে ফেলেন তার উঁচু গলার স্বরে। ফলে ক্লাসে বা ক্লাসের সামনে যেখানেই হোক সাথে সাথে সকল ছাত্রছাত্রীরা তটস্থ হয়ে যায় সাথে সাথে। আর ক্লাসের বাহিরে ক্যাম্পাসে তো আরেক রুদ্রমূর্তি। উনি যে পথে ষ্টুডেন্টরা অন্য পথে।
উনি আর কেউ নন আমাদের ডিপামেন্ট হেড পরিমল কুমার শাহা। স্যারের রুদ্রভাব, কঠোর নিয়ম নীতির পাশাপাশি তার নামটা আরো পরিচিত আলোচিত পরিমল বাবু নামের এক কুলাঙ্গার শিক্ষকের বিশেষ কারণে।

পরিমল স্যার আমাদের স্কুলে ভর্তি ফেলছেন। স্কুলের মতো ক্লাস করতে হয় নিয়মিত। নিয়মিত ক্লাস , টিউটোরিয়াল, টেষ্ট পরীক্ষা, তার দেয়া হোম ওয়ার্ক ইত্যাদিতে কোন ছাড় নেই তার কাছে। এমনকি হরতালের মাঝে পুরো ক্যাম্পাসে ক্লাস না চললেও তার ডিপার্টমেন্ট ক্লাস পরীক্ষা ঠিকই চলবে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা যাই থাকুক না কেন। কোনদিন তার ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে পরের ক্লাসে দাড়িয়ে থাকতে হবে নিশ্চিত, নূন্যতম হাজিরার সময় পর্যন্ত। হাজিরা শেষে কারণ শুনে অতঃপর বসার অনুমতি। তার জয়েন করার পর থেকে এই অবস্থা।

একদিন ক্যাম্পাসে ঝামেলা হলো । অন্যান্য ডিপামেন্টগুলোর ক্লাস বন্ধ কিন্তু পরিমল স্যারের কড়া নির্দেশ ক্লাস চলবে। যেই কথা সেই কাজ, ছাত্রছাত্রী সংখ্যা খুবই কম থাকলেও তিনি ক্লাস শুরু চালালেন, ক্লাস শেষে আবার প্রিন্সিপাল স্যারকে নিয়ে আসলেন ক্লাস হচ্ছে দেখানোর জন্য। টিউটোরিয়াল পরীক্ষার সময় চলছিলো টানা হরতাল। কিন্তু তার কড়া হুশিয়ারী পরীক্ষা হবেই। স্যার পরীক্ষার সিডিউল চেঞ্জ করলেন না, হরতাল হোক আর ভূমিকম্প হোক পরীক্ষা হবেই। হরতালে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হলেও যেতে হলো ভয়ে ভয়ে যেতে হলো পরীক্ষা দিতে।

পরিমল স্যারের রুদ্রাত্বক খপ্পর থেকে বাঁচতে বাঁচতে নতুন ঝামেলার খপ্পরে পড়লো ডিপামেন্টের অনেকেই। নতুন ঝাক্কিঝামেলার নাম ফরম ফিলাপ। ফরম ফিলাপ শুরু হতেই টেনশন বেড়ে গিয়েছে সব ক্লাসমেটদের। কারণে স্যার ইতিমধ্যেই হুঙ্কার ছেড়েছেন যারা যেকোন একটি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেনি বা ১০০ টা ক্লাসে উপস্থিত ছিলো না তার পরীক্ষা দেয়া হবে না। ক্লাসের অন্যান্যদের সাথে টেনশনে পড়ে গেলো "সেভেন সিস্টারস" নামে খ্যাত সাত বান্ধবীরাও। কারণ বেশী কিছুনা , স্যারের ঘোষিত সব অপরাধে দন্ডিত হওয়ার সম্ভবনা আছে ৭ জনের মাঝে অন্তত জয়া, নিতু ,ফারিয়া আর মৌসহ ৪ জনের। পরীক্ষা না দেয়া আর ক্লাস না করা উভয় অপরাধে অপরাধী।
ফরম ফিলাপের দিন আসতেই ঘনিয়ে আসলো বিপত্তি। হাসতে হাসতে কলেজে গিয়ে বাসায় ফিরতে হলো বলা চলে কাঁদতে কাঁদতে।" সেভেন সিস্টারস" একসাথে গিয়ে ফরম তুলতে গিয়ে দেখলো তাদের কয়েকজনের নাম ব্লাক লিস্টেড হয়ে গেছে। যারা পরীক্ষা দেয়নি বা ক্লাসে অনিয়মিত তাদের ফরম ফিলাপে লাগবে স্যারের অনুমতি। অনুমতি না থাকলে ফরমই প্রদান করা হবেনা। মহা মসিবত। অপমানিত হয়ে ফিরে আসা ছাড়া কোন উপায় থাকলো না।

ডিপামেন্টের আরো অনেকেরই একই অবস্থা। ক্লাসে উপস্থিতি কম অথবা পরীক্ষা গ্যাপ। উপায় কি? সবাইকে এপ্লিকেশন নিয়ে যেতে হবে পরিমল স্যারের দরবারে। কোন উপায় নেই। দীর্ঘক্ষন অপেক্ষার পর সকলের দরখাস্ত জমা হলো স্যারের টেবিলে আর সকলকেই দাড়াতে হলো সিরিয়ালে। যার নাম ডাকা হচ্ছে সে গিয়ে কারণ দর্শিয়ে বকা খেয়ে সাথে জরিমান দিয়ে পরীক্ষার অনুমতি নিয়ে আসছে।

বকা খাওয়াটা কষ্টের না হলেও দীর্ঘক্ষন সিরিয়ালে দাড়িয়ে থাকটা মেজাজটা বিগড়িয়ে দিচ্ছিল সকলের। নিতু, জয়া, মৌ, ফারিয়া একই সিরিয়ালে দাড়িয়ে আছে। যেই ফিরে আসছিলো সেই বকা খেয়ে কুপকাত। ঘন্টা ২ সিরিয়ালে দাড়িয়ে শুনতে হলো "টিসি নিয়ে দূরের কলেজে চলে যাও" "তোমরা অনার্স শেষ করতে পারবে তো" "ক্লাস পরীক্ষা ভালো না লাগলে শশুর বাড়ী চলে যাও" "পরীক্ষা দেয়া লাগবে না" ইত্যাদি কান গরম করা কথা আর প্রতি পরীক্ষার জন্য ১০০ টাকা করে জরিমানা প্রদান সাপেক্ষে সেদিনের মতো পরিমল স্যারের রোষালন থেকে উদ্ধার পেলো তারা।

সকালে ফরম ফিলাম করতে এসে দুপুর গড়িয়ে বিকাল হওয়ার পথে। সারাদিনের ক্লান্তি আর দাড়িয়ে থাকার অপমানের পর সামনের অন্তত দুইমাসের জন্য পরিমল স্যারের রক্তচোক্ষু থেকে আপাতত মুক্তি লাভ করে কিছু হলেও হালকা হলো "সেভেন সিষ্টারস"। কথা না বাড়িয়ে গেটের জব্বার চাচার দোকানে আইচক্রিম খেয়ে যে যার পথ ধরলে বান্ধবীরা।

পরিমলের স্যারকে নিয়ে যদিও আতংকে থাকি তবুও স্যারকে সম্মান করি সবসময়।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মহাকাশের দূত ও সৌর শক্তির ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২০


মহাকাশের দূত ও সৌর শক্তির ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি
সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি প্রফেসর শঙ্কু — তাঁর নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিজ্ঞানের আশ্চর্য সব আবিষ্কার, একেকটি কল্পনার জগৎ, আর রহস্যে ঘেরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিশুদের গুড টাচ ব্যাড টাচ শেখানো আপনার দায়িত্ব

লিখেছেন অপলক , ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৩৪

বর্তমানে বাংলাদেশে একক পরিবার বেশি। আগের যুগে যৌথ পরিবারে শিশুরা বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে অনেক কিছু শিখত, নিরাপত্তা পেত। এখন সে সুযোগ অনেকটাই কম। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ৫ বছরের শিশুও... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুন্নী না হয়ে জান্নাতি হওয়ার কোন সুযোগ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫৯



সূরাঃ ১৭ বনি ইসরাঈল, ৭৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৭৭। আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে পাঠিয়ে ছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও সুন্নাত (নিয়ম) এরূপ ছিল। আর তুমি আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০৪

বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...

ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকৃতপক্ষে একক কোনো কাহিনী নির্ভর বই না। 'ময়মনসিংহ গীতিকা' হচ্ছে কবিতা বা গানের সংকলন, যা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের মুখেমুখে প্রাচীন কাল থেকে ভিন্নভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাটারি অটো রিক্সা বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ?

লিখেছেন চোরাবালি-, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮



বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড় হল এখন অটো রিক্সা, স্বল্প পরিশ্রমে সহজ আয়ের মাধ্যম হিসাবে খুবই জনপ্রিয় একটা পেশা। স্বল্প ভাড়ার জন্য অনেক মানুষ এখন পায়ে হাঁটা ভুলেই গেছে আর হাঁটার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×