১.
ক্লাস শেষ করে বের হতে দুপুর গড়িয়ে গেল নিলিমার। সাধারনত এতোটা দেরি হয়না তার। অধিকাংশ ক্লাসই দুপুরের মাঝে শেষ হয়ে যায়। ক্লাস শেষ করে ফাইজা , মেহরুবার সাথে গল্প করতে করতে বাসার পথ ধরে। ওদের বাসা একই এলাকায় হওয়ায় ক্লাস , আড্ডা, শপিং একসাথেই করে ওরা। ছোট বেলা থেকেই গলায় গলায় ভাব। স্কুল লাইফের আরো যারা ছিলো তাদের কয়েকজন ইতিমধ্যে শশুর বাড়ী পাড়ি জমালেও ওরা এখনো আছে আগের মতো।
আজ ক্লাস শেষে এসাইনমেন্ট জমা দিতে স্যারের কাছে বেশ কিছুটা সময় গিয়েছে বলে ফাইজা আর মেহরুবা আগেই চলে গেছে। নিলিমা একটি রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো। আজ আর রিকসায় বসে তিন বান্ধবীর আড্ডাটা হবে না। কানে এয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইলে গান শুনছিলো আর রিকশাওয়ালা মামা দ্রুত যাচ্ছিল।
আর দশ মিনিট গেলেই বাসায় পৌছে যেত। কিন্তু সামনের যানবাহনগুলো দাড়িয়ে থাকায় তার রিকশাটিও দাড়াতে হলো। সাধারনত এ স্থানে কখনো জ্যাম পরে না কিন্তু আজ কি হলো বুঝার চেষ্টা করছে সে । কিন্তু এতোটা দুর থেকে বুঝা মুশকিল সামনে কি হচ্ছে। তবে মানুষের কোলহাল আর মাঝে মাঝে প্রচন্ড শব্দে বুঝতে পারছিলো সামনে হয়তো কোন গন্ডগোল চলছে।
অজান্তেই মনের মাঝে ভীতির তৈরী হলো, ফাইজা আর মেহরুবা থাকলে হয়তো তা হতো না কিন্তু আজ সে সত্যি ভয় পাচ্ছে। তার ছোটমামা এভাবেই গন্ডগোলে রিকশায় থাকা অবস্থায় আহত হয়ে বাম পা হারিয়েছেন। ভয়ংকর সে স্মৃতি মনের মাঝে শংকা তৈরী করলো। যদিও সে মনকে সাহস যোগানো চেষ্টা করছিলো কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।
হঠাৎই মনে হলো শাফিনের কথা। ওর মেজ খালার ছেলে, ছোট বেলা থেকেই একসাথে বেড়ে উঠেছে। এখন ওর ভালবাসার মানুষ। যদি ও এসময় রিকশায় তার পাশে থাকতো কোন কিছুতেই ভয় পেতো না সে। ভাবতে ভাবতেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলো শাফিনের মুখস্ত নাম্বারটিতে। ওর নাম্বার নিমিলা মোবাইলে সেভ করেনি সেভ করে অন্তরে, যা কখনো ভুলার নয়। তাইতো যখন ডায়াল করে তখন নাম্বার টিপেই ডায়াল করে।
কয়েক মিনিটেই গন্ডগোল চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। চারিদিকের মানুষেরা কেউ উৎসুক হয়ে দেখার চেষ্টা করছে আবার কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য রিকশা , গাড়ী থেকে নেমে যাচ্ছে। নিলিমা কি করবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ভাবতে ভাবতেই কল দিলো শাফিনকে।
ঃ হ্যালো ।
ঃ হ্যা, নিমিলা কেমন আছো?
ঃ কোথায় তুমি?
ঃ তুমি কোথায় ? টেনশনে আছো মনে হচ্ছে , তোমার কণ্ঠ তাই বলছে।
ঃ কিছুটা। বাসায় যাচ্ছিলাম। পথে গন্ডগোল হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না।
ঃ তুমি কি চৌমাথায় ?
ঃ হ্যা
ঃ টেনশন করো না আমি কাছেই আছি । তুমি রিকশা থেকে নেমে পাশের মার্কেটে দাড়াও। আমি ৫ মিনিটের মাঝে আসছি।
ঃ ওকে । তারাতারি আসো।
গন্ডগোল ইতিমধ্যে আরো বিস্তৃতি লাভ করেছে। আতংকিত মানুষের সাথে নিলিমাও নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্যই রিকশার ভাড়া চুকিয়ে নেমে পড়লো। রিকশা গাড়ীর ফাঁক গলিয়ে ফুটপাতে গিয়ে পড়তেই হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ। কান তব্দ লাগার মতো শব্দে আশেপাশের সব মানুষেরা ছুটোছুটি করতে লাগলো। নিলিমাও ভয়ে পেয়ে ছুটতে গিয়ে বেশ কিছু মানুষের ধাক্কায় পড়ার সময় শাফিন বলে জোরে চিৎকার আর কিছুটা সময় পর আবছা ভাবে শাফিনের মুখটি দেখা ছাড়া আর কিছু জানেনা সে।
২.
নিলিমার ফোন পেয়েই রকিবের সাথে কথা আর বাড়ালো না শাফিন। পরে দেখা হবে বলেই দ্রুত পা চালালো শাফিন। কলেজ ভার্সিটিতে মারামারি দেখতে দেখতে গা সহা হয়ে গেছে তার কাছে , এখন আর ভয় করে না। কিন্তু আজ কেন যেন করছে, তা অবশ্য নিজের জন্য না ভয়টা নিলিমার জন্য। গন্ডগোলে ওর কোন সমস্যা হবে না তো? অজানা আশংকায় দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে গেলো সে।
গন্ডগোলের পথে না গিয়ে একটু ঘুরা পথে যেতে কিছুটা সময় বেশী লাগলো শাফিনের। যেতে যেতে শাফিন বেশ করেকবার ফোন দিলো নিলিমাকে। সর্বশেষ যখন নিলিমার সাথে শাফিনের কথা হয় তখন নিলিমা আজাদ মার্কেটের সামনে ছিলো কিন্তু ফোন দেয়ার পর প্রথমে ২ বার রিসিভ না হলেও পরের বার নিলিমার বদলে ফোন ধরলো কোন একজন পুরুষ মানুষ।
বুকটা কেমন যেন ছ্যাত করে উঠলো শাফিনের । ফোন ধরে শুনলো একটি মেয়ে আহত হয়ে মার্কেটের সামনে পড়ে গেছে। শাফিন শুধু জানতে চাইলো কোথায়? উত্তর অপেক্ষা না করেই দৌড় শুরু করলো ও। দৌড়াতে থাকলো তার ফোনে বললো আপনার একটু অপেক্ষা করেনঃ আমি আসছি।
২/৩ মিনিটের মধ্যেই শাফিন আজাদ মার্কেটের সামনে পৌছে গেলো। মানুষের দৌড়াদৌড়ি থাকলেও অল্প কয়েকজন মানুষ মার্কেটের সামনে জটলা পাকিয়ে আছে। কয়েকজনকে ফাঁকা করে সামনে যেতেই চোখে পড়লো নিলিমার রক্তাক্ত মাথা আর মায়াবী চেহারাটা। আর কিছু ভাবতে পারলো না।
নিজেকে শক্ত করলো শাফিন। আশেপাশের মানুষের কাছে সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিয়ে নিলিমাকে পাজাকোলে তুলে নিলো । মাথা শাফিনের বুকের কাছে, একটিবার নিলিমা চোখ খুলে আবার বুজে গেলো।
আশেপাশের কয়েকজনের সহায়তায় শাফিন নিলিমাকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে সোজা চলে গেলো হাসপাতালে। ইমাজেন্সীতে চিকিৎসার পর নিয়ে যাওয়া হলো কেবিনে। স্যালাইন চলছে। সম্ভবত পা ভেঙ্গে গিয়েছে, রাস্তায় পড়ে মাথায় ব্লিডিং হচ্ছিল আর অতিরিক্ত ধকলের কারনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। এক্সে রিপোর্ট দিলে বাকীটা বুঝা যাবে। সোবহান চাচার এ হসপিটালের ডাক্তার হওয়ায় শাফিনকে বেশী কষ্ট করতে হলো না। সোবহান চাচাই যা করার করছেন। ইতিমধ্যে শাফিন নিলিমার বাসায় ফোন দিয়ে জানিয়েছে।
৩.
ঘন্টা ৩ পর জ্ঞান ফিরলো নিলিামার। কানে পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসছে। ভালো ভাবে শুনে বুঝতে পারলো মায়ের গলা। ধীরে ধীরে চোখ খুলতে চেষ্টা করলো সে।বুঝার চেষ্টা করছে সে কোথায় আছে? নরম বিছানা , পায়ে প্রচন্ড ব্যথা , মাথায় শক্ত ব্যান্ডেজের অস্তিস্ব অনুভব করলো সে।
উপরের সাদা ছাদ নজরে পড়লো প্রথমেই , দৃষ্টি নামিয়ে নিচে নিয়ে আসতেই প্রথমেই সামনে চোখে পড়লো ওর মাকে। তারপর পাশে দাঁড়ানো ছোট ভাই সাব্বিরকে। একপাশে বসা ফাইজা আর মেহরুবাকেও।
পুরো ঘর ঘুরে আসলেও নজরে আসলো না কাংখিত চেহারাটিকে। আবারও চোখ বন্ধ করলো সে। ওকে চোখ খুলতে দেখেই মেহরুবা শাফিনকে ডাকতে বাহিরে চলে গেলো। শাফিন তখন রকিবের সাথে বাহিরে কথা বলছে।
শাফিন এসে গলায় শব্দ করতেই আবারও চোখ খুললো নিলিমা। একদম চোখের সামনেই নজরে আসলো সে। তৃপ্তির আনন্দে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। স্মরন করার চেষ্টা করলো কি ঝড় বয়ে গেছে তার উপরে।
৪.
ঘড়ির কাটা সকাল ১০টা বাজার সংকেত দিলো। কেবিনে এখন নিলিমার মা ছাড়া কেউ নেই। নিলিমা ওর মায়ের কাছে দুর্বল কন্ঠে শাফিন এসেছে কিনা জানতে চাইলো। মা বলল, সেই কখন থেকে ছেলেটা বাহিরে বসে আছে।
নিলিমার মা শাফিনকে ভেতরে ডেকে আনলেন।
নিলিমার মাঃ বাবা, তুমি এখন বসো আমি বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসছি।
শাফিনঃ খালাম্মা আপনি রাতে কষ্ট করেছেন । বাসা থেকে ঘুরে আসেন । আপনি আসা পর্যন্ত আমি আছি।
নিলিমার মাঃ ঠিক আছে তুমি থাকো। ঘন্টাখানেকের মাঝে আমি আসবো।
কিছুক্ষনের মাঝেই বেড়িয়ে গেলেন নিলিমা মা। এ মূহুর্তে কেবিনে শুধু নিলিমা আর শাফিন।
বেশ কিছুটা সময় নিরবতা। চোখ খুলে নিলিমা তাকাতেই দেখলো শাফিন পলকহীন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সে। আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললো সে।
ক্ষনিকটা পরেই নরম হাতটি একটি হাতের স্পর্শ পেলো। দুটি হাতের মাঝখানে আটকা পড়লো তার হাত। হাতের পিষ্ঠে হঠাৎ কোন ঠোঁটের স্পর্শে শিহরিত হয়ে উঠলো সে। পুরো দেহে যেন বিদ্যুৎ বয়ে গেলো।
এক ভালবাসার মোহচ্ছনে আবদ্ধ হলো নিলিমা। দু চোখ গড়িয়ে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গন্ডদেশ বেয়ে বালিশে।
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন