বিপ্লবী শব্দগুলো প্রায়ই এই ছোট্ট শহরের অনলউৎস। জোয়ার-ভাটার মত সুখ-দুঃখের গল্প এখানে ছিল হয়ত কোন এক কালে , এখন শুধুই ক্ষরা।ক্ষরা...ক্ষরা... ক্ষরা... রক্তবন্যাও মলিন করতে পাড়ছে না এতটুকু। মরন-ক্ষরা জ্বলে পুড়ে ছাই করছে প্রতিদিন ছোট্ট কোমল শিশুগুলোকে। মায়েদের চোখের জল শুকিয়ে গেছে।
এ কোন আদিম রূপকথা নয় যে ডাইনী বুড়িকে শেষ করতে যুবরাজ তাঁর পঙ্খীরাজ ঘোড়া ছুটাবে। এখানে সূর্যদয় হ্রদাত্তাকে কম্পিত করে। ফাগুন এক কালো ডাইনী। এ শহরের ধূলীকনাও নরবলীর উৎসবে উত্তেজিত উত্তপ্ত।
আমরা যারা খুব ইতিহাস পড়েছি তারা এই মৃত নগরীর মৃত্যুকুঠুরীতে আত্মগোপন করে মৃত সেজে ইতিহাস হতে চাইছি। যেন এই নগরীর রক্তস্রোত আমাদের না রাঙাতে পারে।
আমরা লিখি। মৃত্যুকুঠুরীতে বসে এক চন্দ্রস্নাত রাতের ইতিহাস লিখি। আমরা ইতিহাস গাথার জালে স্বপ্নকে ধরতে লিখি। আমরা লিখি। লিখে লিখে আমরা সব বয়সগুলোকে একটা দোলনায় চড়িয়ে দেই। তখন বয়সগুলো স্বপ্নালু চোখে চড়কা কাটা চাঁদের বুড়ির গান শুনে... কখনও কানা মাছি ভোঁ ভোঁ খেলে...কখনও বা প্রিয়তার চোখে চোখ রাখে...
স্বপ্নে স্বপ্নে মাতাল বয়সগুলু ভুলে যায় এটা স্বপ্ন। তাঁরা হাটতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে জুতো পড়ে। পথে চলতে গিয়ে পথ না পেয়ে রাস্তা বানায়। হাজার বছরের পথ চলার রাস্তা।
এক সময় ঘুম ঘোরে হাত থেকে ইতিহাস বইটা পরে যায়। চিনেমাটির বাসন-কোসন ভেঙ্গে একাকার......।
বয়সগুলো জেগে উঠে...... বিপ্লবী হয়ে উঠে......চিত্কার করে উঠে......কেঁদে উঠে...... রণাঙ্গনে দাড়ায়। ইতিহাসের সাহসপিন্ডকে হৃদপিন্ডে অস্ত্রপ্রচার করে খুব যত্নে লুকিয়ে রাখে। এক এক জন সময়কে জয় করা বিপ্লবী নেতা হয়ে উঠে।
এরপর...লাস...আর...লাস। রক্ত... রক্ত... রক্ত।
বারুদের গন্ধ...চুল পোড়া গন্ধ...চামড়া পোড়া গন্ধ...মাংস পোড়া গন্ধ...মগজ পোড়া গন্ধ...।
তারপর সদ্য স্নাতক আর্কিওলজিস্টরা শিশুর কোমলতার গন্ধ খুজতে আসে।
বিপ্লবী শব্দগুলো ছিল এই ছোট্ট শহরের অনলউৎস।মা কাঁদতে ভুলে গেছে। শুধু একটা নিউরন আছে যে প্রায়ই গভীর ঘুম নগরীতে পঙ্খীরাজের মত আসে।ভ্রুনের প্রথম স্পর্ষানুভূতি। সাবধানে কোলে নেওয়া প্রথম শিশুর কোমলতা।তার সদ্য গজানো দাতের হাসি।
এরপর গান পাউডারের গন্ধে ঘুম ভাঙ্গা সকাল।আর এলমেলো ব্রাশফায়ার............
এই নগরীতে স্বপ্ন দেখতে নিষেধ নেই, বিপ্লবী হতে নিষেধ নেই।শুধু শান্ত হয়ে উঠতে চাওয়া নগরীটা প্রায়ই ঢেকে যায় কোন পোড়া পোড়া ধূয়ায়।