somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেকসই ও নন-টেকসই উন্নয়ের পার্থক্যটা যদি বাংলাদেশের মানুষ বুঝত তবে ভূমিধ্বস উন্নয়ন নামক "পুকুর চুরি" গল্পটাও বুঝতে পারত।

০২ রা মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"পুকুর চুরি" গল্পটার সার্থক উদাহরণ বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এই দুইটা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রতিবছর সরকারি বাজেটে হাজার-হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়; মন্ত্রণালয় সেই টাকা খরচ করে উপকূলীয় এলাকায় বেড়ি বাঁধ তৈরি করে; হাওড় এলাকায় কৃষি জমি রক্ষার জন্য বাঁধ তৈরি করে; বর্ষাকালে নদীর ভাঙ্গন থেকে দুই কূল রক্ষার জন্য বালির বস্তা ফেলে, নদীর পূর্ব পূর্ব কূলে ড্রেজিং করে পশ্চিম কূলে ফেলে আগের বছর; পরের বছর পশ্চিম কূল ভরাট হয়ে গেছে বলে সেই পাশ ড্রেজিং করে পূর্ব কূলে ফেলে ড্রেজিং করা মাটি। ভাঙ্গা রাস্তার গোঁড়া থেকে মাটি কেটে রাস্তা মেরামত করে (কবি কালিদাসের মতো গাছের ডালের আগায় বসে গোড়া কাটে), বর্ষার সময় ভাঙ্গা রাস্তার গর্তের মধ্যে ইট-সুড়কি ঢেলে রাস্তা মেরামত করা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কাজ। স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিবছর ঐ একই কাজ করে আসতেছে বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। আগের বছর সে স্থানে বেড়ি বাঁধ তৈরি করেছিল সেই একই স্থানে পরের বছরও বেড়ি বাঁধ তৈরি করে। আগের বছর সে স্থানে বালির বস্তা ফেলেছিল পরের বছরও সেই একই স্থানে বালির বস্তা ফেলে।



ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সড়ক ব্যবস্থা সবচেয়ে খারাপ যেসব দেশের তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। । সড়ক নির্মান ব্যায়ে এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে, কিন্তু মানের দিক থেকে সর্বনিম্ন!

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব (ব্লগার নিরুদ্দেশ পথিক) দৈনিক বনিক বার্তার উপ-সম্পাদকীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও বাঁধ নির্মাণের অস্থায়িত্বশীল দিকগুলো
যথার্থই লিখেছেন

"ব্রিটিশ শাসন ও সাম্রাজ্য রক্ষা, খাজনা উত্তোলন ও যাতায়াত— এ তিনকে সহজ করতে সর্বভারতে রেল প্রবর্তন করে। দেখা গেল, এ টেকসই রেল অবকাঠামো এক শতাব্দীরও অধিক সময়ে বাংলার বন্যার্তদের আবাসনের ঠিকানা হয়ে উঠল। ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও প্রশাসনিক বহু ডোমেইনের আর্থিক প্রাপ্তির সঙ্গে দূরদর্শী অবকাঠামো নিয়ে এল বন্যা-কেন্দ্রিক সম্পদ ও ব্যবস্থাপনার বিশেষ উপকারের যোগ।

অন্যদিকে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, প্রশাসন ও প্রকৌশলীরা দেশব্যাপী এমন এক সড়ক অবকাঠামো তৈরি করেন, যা প্রতি বছর বন্যায় শুধু কার্পেটিংয়ের পিচই হারায় না, রাস্তাও তলিয়ে যায়। এগুলো ঠিক করতে বন্যা-পরবর্তীতে স্থানীয় ও কেন্দ্র থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ বিরামহীন ও ফলহীন কর্ম দশকের পর দশক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নেতাদের পকেট ফুলিয়ে তুললেও দেশের অবকাঠামোয় তৈরি হয়েছে সুবিশাল ক্ষত। আদতে এ ক্ষত হচ্ছে বাজেটের ওপর প্রতিকারহীন এক ফাঁড়া।

রাস্তা তৈরি, অতিশয় নিম্নমানের অদূরদর্শী ও টেকসই রাস্তার বিরামহীন মেরামতই এখনো দেশের কথিত উন্নয়নের মূল স্লোগান।

২০১২-৩২— এ ২০ বছর মেয়াদি ৩২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হাওড় উন্নয়ন মহা-পরিকল্পনা প্রকল্প চলছে। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার অধিক এরই মধ্যে খরচ (পড়ুন লোপাট) হয়েছে, কাজ আক্ষরিক অর্থে কিছুই হয়নি।"



ডিজিটাল যুগে তৈরি করা ব্রিজ উদ্ভোদনের পূর্বে ভেঙ্গে পড়ে; ব্রিজের সংযোগ সড়কের মাটি সড়ে গিয়ে ব্রিজ ঝুলতে থাকে বাড়ির উঠানের আমগাছে ঝুলানো দোলনার মতো।

টেকসই ও নন-টেকসই উন্নয়ের পার্থক্যটা যদি বাংলাদেশের মানুষ বুঝত তবে সিঙ্গাপুরের ৫ বছর পরে স্বাধীন হওয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে ৫ বছর পূর্বে স্বাধীন হওয়া দেশে চিকিৎসা করার জন্য প্রতি মাসে দৌড়াইতে দেখে (স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও) রাজনিতিবীদের পুকুর চুরির গল্পটা বুঝতে পারত।

বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গোজা-মিল দেওয়া নন-টেকসই উন্নয়নের অসাধারণ বিশ্লেষণ করেছে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। সেই সাথে অনেক সমস্যার সমাধানে করনীয় উপাও উল্লেখ করেছে নিজের লেখায়। সবাইকে পড়ে দেখার অনুরোধ রইল (লিংক নিচে সংযুক্ত)।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব (ব্লগার নিরুদ্দেশ পথিক) দৈনিক বনিক বার্তার উপ-সম্পাদকীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও বাঁধ নির্মাণের অস্থায়িত্বশীল দিকগুলো


২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওরে ফসলহানি আর কৃষকের হাহাকারের পর বছরজুড়ে এত আলোচনা-পরিকল্পনার পরও নির্ধারিত সময়ে একটি বাঁধেরও কাজ শেষ হলো না। দৈনিক প্রথম আলো, ৫ ই মার্চ, ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৮
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×