The message is clear and loud; time is running out; there shouln't be any room for doubt !!!!
"জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণাকেন্দ্র (জেআরসি) বৈশ্বিক বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ক একটি প্রতিবেদনে পূর্বাভাষ করেছেন যে ২০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উজানে বন্যার মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।"
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ৪ টি জেলায় (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ও নীলফামারী) গত ৪ দিন থেকে এক নাগাড়ে বৃষ্টি হয়ার কারণে ঐ ৪ টি জেলয় সর্ব-কালের বড় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত এলাকার পরিমান স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বন্যা ১৯৮৮ সালকেও অতিক্রম করে গেছে। পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ও নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি চরম খারাপ। পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা যাচ্ছে স্কুলের বারান্দায় গরু-ছাগল ও মানুষের সহ অবস্থান।
অত্যান্ত দুঃখ জনক বিষয় হলো বন্যা পরিস্থিতির কোন খবর গনমাধ্যম গুলোতে এখনও অনুপস্হিত। এমনি কি গনমাধ্যমগুলোর অনলাইন ভার্ষনেই নাই। ব্যাপারটা নিজের কাছে কেমন জানি অ-স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। তাহলে কি ধরে নিতে হবে ঐ সকল এলাকার সকল মানুষ মিথ্যে কথা বলছে; বন্যা পরিস্থিতির যে ছবি দিচ্ছে সেগুলো ফটোশপ করা? নাকি বাংলাদেশের মিডিয়ার চামড়া গণ্ডারের মতোই ৭ স্তর পুরু; চিমটি কাটলে ৭ দিন পড়ে টের পায়।
আবহাওয়া বিজ্ঞানের উপর বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত তথ্য মাধ্যম গুলোর বন্যা পূর্বাভাষ মডেল হতে প্রাপ্ত চিত্র, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ হতে প্রাপ্ত বায়ু প্রবাহ ও বৃষ্টিপাতের নিয়ার রিলেট টাইম চিত্র, আগামী ৩ দিনের বৃষ্টিপাত পূর্বাভাষের বিভিন্ন চিত্র ব্যবহার করে আবহাওয়া বিজ্ঞানের উপর নিজের অর্জিত সকল জ্ঞান প্রয়োগ করে বাংলাদেশে আগামী ২ সপ্তাহ সম্ভব্য যে বন্যার চিত্র কল্পনা করছি সেটা আসলেই ভয়ংকর।
উপরোক্ত প্রশ্নের উদ্রেক হতো না যদি না ঘুম থেকে উঠে ছোট ভাইয়ের ফেসবুক ওয়াল থেকে জানতে পারতাম যে আমাদের এলাকার প্রায় ১৫০ জন মানুষ নিজেদের বাড়-ঘত ছেড়ে স্কুলে অশ্রয় নিয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার ৩ টি জেলা বাদ দিলে সমুদ্র সমতল থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু স্থানে অবস্থিত নীলফামারী জেলাটি। নির্দিষ্ট করে ১৯৮৮ সালের বন্যার কথা বলা এই কারণে যে ১৯৮৮ সালের বন্যা ব্যতীত গত ৩০ বছরে সংঘটিত অন্য কোন বন্যায় আমাদের এলাকার কোন মানুষে নিজের বাড়ি-ঘড় ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হয় নি। ১৯৮৮ সালের বন্যাটি আমার নিজের চোখে দেখা। দাদা ছিলও জনপ্রতিনিধি। বন্যা উপদ্রুত মানুষদের জন্য আসা ত্রাণ বিতরণ করা হতো আমাদের বাড়ির উঠান হতে। শৈশবে আমার নিজের ঘুমানোর ঘরটি ছেড়ে দিতে হয়েছিল বন্যার জন্য আসা ত্রাণের গোডাউন হিসাবে। বন্ধু ও ছোট ভাই এর দেওয়া ছবি দেখে নিশ্চিত করেই বলতে পারি এবারের এই বন্যার পানি ১৯৮৮ সালের ঐ বন্যার অবস্থা ছাড়িয়ে গেছে।
নিচে বেশ কিছু আবহাওয়া চার্ট (প্রাপ্ত বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত, বন্যা পূর্বাভাষ, নদীর প্রবাহ, বন্যা উপদ্রুত এলাকার ম্যাপ) যোগ করে দিচ্ছি। বন্ধু লিস্টে অনেক সাংবাদিক আছে। আশা করছি জান ও মালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিবেন। আপনাদের কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন নিজের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা অনুসারে চেষ্টা করবো আপনাদের সর্বোচ্চ নির্ভরযোগ্য তথ্য ও চিত্র দেওয়ার জন্য।
National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) কর্তৃক পরিচালিত Color-enhanced Global Winds Visualization সাইট থেকে রিয়েল টাইম বায়ু প্রবাহের চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম দিকের জেলা বৃহত্তর দিনাজপুর এলাকায় স্থল ভাগের উপর মৌসুমি বায়ু প্রবাহের যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে (ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের মতো) তা দেখা যায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় এর সময়। এই বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে ঠিক হিমালয় পর্বতের কোল ঘেঁষে (উপরের চিত্র) । ফলে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে ঐ এলাকায়।
বায়ুর প্রবাহের এই দিক, মেঘের অবস্থান ও বৃষ্টিপাতের চিত্র পুরো-পুরি মিলে যায় Tropical Rainfall Measuring Mission (TRMM) নামক সংস্থা কর্তৃক অনেক গূলো কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত বৃষ্টিপাতের চিত্র যোগ করে বৃষ্টিপাতের ফাইনাল একটি ম্যাপের সাথে (NASA's Level 3 Integrated Multi-Satellite Retrievals for GPM ( IMERG ) gridded product (7-day accumulated precipitation))।
Tropical Rainfall Measuring Mission (TRMM) নামক সংস্থা অনেক গূলো কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত বৃষ্টিপাতের চিত্র যোগ করে বৃষ্টিপাতের ফাইনাল একটি ম্যাপ প্রস্তুত করে প্রতি ৩ ঘণ্টার ও ৭ দিনের। ওয়েবসাইটে পাশা-পাশী চিত্রে দেখা যাচ্ছে গত ৩ ঘণ্টা ও গত ৭ দিনের সর্বমোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ।
গত ৭ দিনের বৃষ্টিপাতের চিত্র হতে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা ও সন্নীহীত ভারতের এলাকা গুলোতে (দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, সিকিম) গুলোর উপর প্রায় ১০০০ মিলিমিটারের (১০০ সেন্টি মিটার বা ১ মিটার) অধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে তিস্তা বাধের উজানে ভারতের গজল ডোবা বাঁধ খুলে দিতে বাধ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ (সর্বশেষ সংবাদ: "ভারতের গজলডোবা বাঁধের সব গেট খুলে দেয়ার কারণে তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব (৪৪টি) জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।")।
এছাড়া ঐ সকল স্থানে পতিত বৃষ্টিপাত দিনাজপুর জেলার আত্রাই নদী, নীলফামরি, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত বক্ষ্রমপুত্র নদের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে যমুনা নদীতে মিলিত হবে। ফলে বর্তমান সময়ে বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় সংঘটিত বন্যার পানি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যভাগে প্রবেশ করবে। ফলে বন্যার অবনিতি হবে সেটা হলফ করেই বালা যায়।
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এর Tropical Rainfall Measuring Mission (TRMM) এর ওয়েবসাইটে বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চলমান বৃষ্টিপাত, বন্যায় আক্রান্ত এলাকা ও অতিবৃষ্টির কারণে ভূমিধ্বস এর সম্ভাবনা আছে এমন এলাকার মানচিত্র পাওয়া যায়। এই সাইটে বাংলাদেশে বন্যা উপদ্রুত এলাকার নিম্নোক্ত চিত্রটি পাওয়া যাচ্ছে।
আমেরিকার আমেরিকার University of Maryland এর Global Flood Monitoring System ওয়েবসাইট হতে সারা বিশ্বের বৃষ্টিপাত, বন্যা, নদীর প্রবাহ এর চিত্র পাওয়া যাবে (বর্তমান সময়ের ৩ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত; অর্থাৎ, দুপুর ১২ টায় পাওয়া যাবে সকাল ৯ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত এর চিত্র)। এখানে উল্লেখ্য যে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নিখুঁত কৃত্রিম উপগ্রহ হলো Global Precipitation Measurement (GPM)
Extreme Rainfall Detection System পোর্টাল থেকে রিয়েল টাইম সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের আগামী ২৪ ঘণ্টা (১ দিন), ৭২ ঘণ্টা (৩ দিন) ও ১৪৪ ঘণ্টা (৬ দিন) এর বন্যার পূর্বাভাষ পাওয়া যায়। একই সাথে নির্দিষ্ট বন্যার ফলে ঐ এলাকায় কি পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেই সংখ্যাও পাওয়া যায়। আর একটি তথ্য পাওয়া যায় ঐ পোর্টাল থেকে তা হলও ঐ সকল স্থানে সম্ভাব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। কোন স্থানে কোন ধরনের বন্যা হবে (সাধারণ, মধ্যম ও প্রচণ্ড) তা ৩ টি কালারের মাধ্যমে নির্দেশ করা হয়ে থাকে। এই পোর্টালটি ইতালির Information Technology for Humanitarian Assistance, Cooperation and Action (সংক্ষেপে ITHACA) নামক একটি সংস্থা পরিচালনা করে থাকে। UN World Food Programme (WFP) এই পোর্টালের তথ্য ব্যবহার করে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অতি বৃষ্টি ও বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে রিলিফ বিতরণ করে থাকে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ২০০ মিলিমিটার এর অধিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ করে হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম শহরে চলমান জলাবদ্ধতার আরও অবনতি হবে তাই নিশ্চিত করেই বালা যায়।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় জেলায় ৩০০ মিলিমিটার এর অধিক বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ করে হচ্ছে। ফলে ঐ বৃষ্টি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের হাওর এলাকায় চলমান বন্যার আরও অবনতি ঘটাবে তা নিশ্চিত করেই বালা যায়।
উত্তর-পূর্ব ভারতের যে এলাকা গুলোতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে (ভারতীয় দিনাজপুর, বিহার রাজ্য) তার পানি ফারাক্কা বাধের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হবে। ভারত ফারাক্কা বাধের অনেক গুলো গেট খুলে দিতে বাধ্য। ফলে পদ্মা নদীর পানি রাজশাহী অঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। গত ২৪ ঘন্টায় ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ রাজ্যে যে পরিমান বৃষ্টি হয়েছে তাতে করে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ফারাক্কা বাঁধের সকল গেট খুলে দেওয়ার সংবাদ শুনলে অবাক হবো না; বরং খুলে না দিলে অবাক হবো।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের স্থল ভাগের ৩ দিকেই প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে গত ৭ দিনে ও এখনও হচ্ছে। ঐ সকল বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পানি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশের বন্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে।
****************************************************************************************
সম্ভব্য একটি বড় মাপের বন্যা নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কি ভাবছেন?
****************************************************************************************
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে এ বছর দেশে একটি বড় মাপের বন্যার সম্ভাব্যতা নাকচ করে দিয়েছে। কারণ হসিবে তারা উল্লেখ করেছেন যে ২০১৫-১০১৬ সালেটি ছিলও এল-নিনো এর বছর ও এলনিনো এর পরের বছর বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়।
****************************************************************************************
"মধ্য ও পূর্ব বিষুবীয় প্রশান্ত-মহাসাগর" (Central & Eastern Tropical Pacific) এর সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা প্রতি ২ থেকে ৭ বছর পর-পর স্বাভাবিক তাপমাত্রর চেয়ে বেড়ে বা কমে যায়।
ঐ অন্বচলের মুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা যদি পর-পর ৫ মাস স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে শুন্য দশমিক ৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বেশি থাকে তবে ঐ অবস্হাতে বলা হয় এল-নিনো। বিপরীতক্রমে পর-পর ৫ মাস স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে শুন্য দশমিক ৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড কম থাকে তবে ঐ অবস্হাকে বলা হয় লা-নিনা।
এখানে উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের মৌসুমি বৃষ্টিপাত "এল-নিনো সাউর্দান ওছিলেসন" (El-Nino Southern Oscillation) নামক বা এল-নিনো" (El-Nino) এবং "লা-নিনা" (La-Nina) নামক দুইটি প্রক্রিয়ার এর সাথে কিছুটা সম্পর্কযুক্ত।
****************************************************************************************
আমি বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তদের সাথে কিছুটা দ্বিমত পোষণ করছি নিম্নোক্ত কিছু কারণে।
প্রথমত:
২০১৫-২০১৬ সালের El Nino ছিলও রেকর্ডেড হিস্টোরিতে সবচেয়ে শক্তিশালী (প্রশান্ত মহাসাগরের পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ও তার বিস্তার অনুসারে)। যার কারণে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে স্বাভাবিকের চয়ে বেশি বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ভূমিধ্বস এর পূর্বাভাষ করা হয়েছিল ২০১৫-২০১৬ এর শীত কালে। কিন্ত ঐ ঘটনা গুলোর কোনটাই ঘটে নি গতবছর। অবাক করা বিষয় হলও গতবছর পূর্বাভাষ করা ঐ সকল ঘটনা ঘটেছে ২০১৬-২০১৭ সালের শীত কালে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সর্বশেষ El Niño–Southern Oscillation (ENSO) এর কারণে যে ঘটনা গুলো আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে যে সময়ে সংঘটিত হওয়ার কথা ছিলি তা অপেক্ষা ১ বছর পরে সংঘটিত হয়েছে।
গত জুন মসে আমেরিকার National Center for Atmospheric Research সংক্ষেপে NCAR এ "Advance Study Program (ASP) summer colloquium: 'The Interaction of Precipitation and Orography' ট্রেনিং চলাকালীন Kevin E. Trenberth নামক এক বৈজ্ঞানিকের সাথে আমার একটা মিটিং হয়েছিল। এই বৈজ্ঞানিককে তুলনা করা যেতে পারে আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষণার "শাহরুখ খান"। আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে গবেষণা করে পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নাই যে ব্যক্তি তার নাম শুনে নাই। এল-নিনো, লা-নিনা গবেষণার একজন পাওয়োনিয়ার বলে হয়ে থাকে তাকে।
বৈজ্ঞানিক Kevin E. Trenberth সাথে আলোচনার সময় উনি স্পষ্ট করে আমাকে বলেছেন সময় এসেছে ENSO Teleconnections and Indian Monsoon Rainfall নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার (lead-lag relationship)। বিশেষ করে ENSO Teleconnections ম্যাকানিজম ২০১৫-২০১৬ ও ২০১৬-২০১৭ সালের আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে বৃষ্টিপাতের প্যাটার্ন প্রেডিক্ট করতে সম্পূর্ণ রূপে ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয়ত:
আপনারা যদি বাংলাদেশের ২০১৭ সালের বৃষ্টিপাতের প্যাটার্ন ও পরিমাণ লক্ষ করে থাকেন তবে দেখবেন মৌসুমের শুরুতে (এপ্রিল-মে মসে) বাংলাদেশের রেকর্ডেড হিস্টোরিতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আমি আমার জীবনে দেখিনি বৈশাখ মাসে বৃষ্টির পানিতে পুকুর ভরাট হওয়া; যে ঘটনা ২০১৭ সালে ঘটেছে। বিশেষ করে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর এলাকায়। সিলেট অঞ্চলেও বৃষ্টিপাতের একই রকম চরিত্র দেখা গেছে। হাওড় এলাকার মানুষ বছরের একমাত্র ফলস হারিয়েছে মৌসুমের শুরুতে পাহাড়ি ঢলের কারণে। অর্থাৎ, স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের ২০১৭ সালের বৃষ্টিপাত আবহাওয়া বিজ্ঞানের গ্রামার মেনে চলছে না বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই।
আবহাওয়া বিজ্ঞানের সবচেয়ে বেসিক কনসেপ্ট "the atmosphere is a chaotic system. This means that it is sensitively dependent on initial conditions. In a chaotic system, a slight change in the input conditions can lead to a significant change in the output forecast." আমরা যদি উপরোক্ত কনসেপ্টকে সত্য বলে গ্রহণ করে থাকি তবে কখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না যে ২০১৫-২০১৬ সালটি ছিলও এলনিনো এর বছর তাই এই বছর বাংলাদেশে বড় মানের বন্য হওয়ার সম্ভাবনা নাই। সর্বোপরি কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণাও প্রমাণ করেনি যে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও তার ফলে সৃষ্ট বন্যার জন্য পূর্ব শর্ত এলনিনো হওয়া।
নিচে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, ও নীলফামারী জেলার বর্তমান বন্যা পরিস্হিতির কিছু ছবি যোগ করা হলো বন্যার সার্বিক অবস্হা জানানোর জন্য।
নিচের ৪ টি ছবি আমার নিজের গ্রামের (নীলফামারি জেলার সদর উপজেলার গোড়-গ্রাম মাঝ পাড়া গ্রাম)
ছবি: ব্লগার আমিনুর ভাই এর স্ত্রী এর স্কুল এলাকার ছবি (নীলফামারি জেলা)।
দিনাজপুর জেলা সদরের বন্যা উপদ্রুত এলাকার চিত্র:
ছবি কৃতজ্ঞতা: ফেসবুক পেজ Dinajpur 360
"মা তার সন্তানকে বুকে আগলে ধরে বাঁচানোর চেষ্টা!বাবা তার সন্তানকে বন্যার পানি থেকে বাঁচানোর জন্য ভেলা টানা, ভাই তার বোনকে বাঁচানোর জন্য সচেষ্ট হওয়া! ছবিটি দিনাজপুর জেলার ভূষিরবন্দর এলাকা থেকে তোলা।"
ছবি: দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকার চিত্র: বন্যা দুর্গত এই মানুষ গুলো চোখে দিকে মাত্র ১ মিনিট তাকিয়ে তাদের অবস্থা অনুভব করার চেষ্টা করুন।
পঞ্চগড় জেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র নির্দেশ করতেছে নিচের ৪ টি ছবি। ছবি গুলো ছোট ভাই (পঞ্চগড় জেলার দেবিগন্জ উপজেলায় বাড়ি) ও বোদা উপজেলা প্রসাশন এর ফেসবুক পেজের ওয়াল থেকে সংগৃহীত।
নিচের ৪ টি ছবি ঠাকুরগাঁও জেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা নির্দেশ করতেছে। ছবি গুলো ঠাকুরগাঁও জেলার এক বড় ভাই এর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ছবিতে মাথায় গামছা পরিহিত মানুষটি হলো ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ও তার পাশে ছাতা মাথায় অন্য ব্যক্তিটি হলে ঠাকুরগাঁও পৌরসভার মেয়র।
গত ৩/৪ দিন ধরে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর এলাকায় কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে; ও ঐ জেলা গুলোতে বন্যা পরিস্হিতি কতটা করুণ তা উপরের ছবি গুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের ৪ টি জেলায় যে বন্যা দেখা দিয়েছে তা সম্পূর্ণ রূপে অস্বাভাবিক। এখানে উল্লেখ্য যে ঐ ৪ টি জেলা সমুদ্র সমতল থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে উঁচু স্হানে অবস্হিত। ঐ জেলা গুলোর বন্যার পানি নামা শুরু করলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি এলাকা প্লাবিত হবে যমুনার তীরবর্তী এলাকায়। ঠিক এই কারণেই ১৯৯৮ সালের বন্যার কথাটা স্মরণ করা হয়েছে উপরে।
আশা করছি জান ও মালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা বিষয়টির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিবেন।
গনমাধ্যমে কর্মরত বন্ধুদের কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন নিজের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা অনুসারে চেষ্টা করবো আপনাদের সর্বোচ্চ নির্ভরযোগ্য তথ্য ও চিত্র দেওয়ার জন্য।
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ১: (মঙ্গল বার দুপুর ৩ টা)
====================================================
রিলিফের জন্য বন্যা দুর্গত মানুষের হাহাকার, সরকার- গণমাধ্যম নির্বিকার। নাগরিক সাংবাদিকতাই প্রধান ভরসা বিপন্ন মানুষদের দুর্দশা দেশের মানুষকে জানানোর। (ছবি কৃতজ্ঞতা: ফেসবুক পেজ Dinajpur 360 )
স্কুল জীবনের বন্ধু, চাকুরী সূত্রে বর্তমানে জামালপুরে কর্মরত। তার এলাকার বন্যা পরিস্থিতি যেমন
"দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা, জামালপুর । চারিদিকে শুধু পানি আর পানি । নৌকা ছাড়া বাসা থেকে বের হওয়া যায়না।"
ছবি কৃতজ্ঞতা: আরবিন্দু রয়, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা, জামালপুর
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ২: (মঙ্গল বার রাত ১১ টা)
====================================================
বন্যা দুর্গত মানুষরা কেমন আছেন আর সরকার তাদের কতটু সাহায্য করছে তা বোঝানোর জন্য প্রথম আলো পত্রিকার একটা সংবাদ হতে নিম্নোক্ত অংশ কোট করলাম:
এই পানির মধ্যে কীভাবে থাকছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ঘর ছাড়ি কোনটে যামো। চাইরো পেকে তো খালি পানি আর পানি। সাপ-জোঁকের ভয় নিয়া আছি। তা-ও কারও সাহায্য না পাওছি।’ গ্রামেরই দিনমজুর আফজাল হোসেন (৪০) বলেন, ‘কামকাজ নাই, কী করমো বাবা। চার দিন থাকি পানির মধ্যে আছি। এখন পর্যন্ত কায়ও একটা দানাও দেয় নাই।’
রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বলেন, ‘উপজেলার ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। এসব মানুষকে ন্যূনতম এক কেজি করে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ইউএনওকে বলেছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। আমার নিজস্ব তহবিল থেকে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছে।’
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিলুফা সুলতানা বলেন, সরকারিভাবে যে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে, তা আজ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। "
১০ মেট্রিক টন চাল = ১০ হাজার কেজি; ঐ উপজেলার ৩০ হাজার পানিবন্দী মানুষের মধ্যে যদি মাত্র ১০ হাজার চরম দারিদ্র মানুষ বন্যা দুর্গত হয়ে থাকে; আর সরকারি দলের নেতা-কর্মী, চেয়ারম্যান-মেম্বার যদি ১ গ্রাম চাউলও চুরি না করে তবুও প্রতিটি বন্যা দুর্গত পরিবার পাবে গড়ে সর্বোচ্চ ১ কেজি চাউল। একটা দুর্গত পরিবারে যদি মাত্র ৪ জন সদস্য থাকে আর দিনে ২ বার মাত্র অর্ধ-পেট ভাত খায় তবে সরকারি ত্রাণের ঐ চাউল দিয়ে সর্বোচ্চ ১ দিন ভাত খেতে পারবে। ভাত খাওয়ার জন্য আরও কিছু দরকার; যে জিনসগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম।
(ছবি কৃতজ্ঞতা: ফেসবুক পেজ Dinajpur 360 )
ছবি কৃতজ্ঞতা: ফারুক আব্দুল্লা
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ৩: (১৬ই আগষ্ট, সকাল ৮ টা)
====================================================
"ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে এখন যে পানিপ্রবাহ তা গত ষাট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে মঙ্গলবার সকালে আগের সর্বোচ্চ পানি সমতল রেকর্ডের ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রক্ষ্মপুত্র-যমুনা নদীর নুনখাওয়া, চিলমারি, সারিয়াকান্দি, সিরাজগঞ্জ এবং আরিচার মতো স্পর্শকাতর পয়েন্টে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর ফলে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম এবং সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।" (সুত্র: চ্যানেল আই, ১৫ ই আগষ্ট, সময় রাত ১১ টা।)
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ৪: (১৬ই আগষ্ট, দুপুর ১ টা)
====================================================
ঘুমোতে যাবার পূর্বে কোন-কোন এলাকার বোন-ব্রাদারদের আশার বানী ও কোন-কোন এলাকার বোন-ব্রাদারদের ভয় দেখাই। নিচে একটা ছবি দিলাম। ছবিটা সংগ্রহ করা হয়েছে আমেরিকার হাওয়াই রাজ্যে অবস্থিত Pacific Disaster Center এর তৈরিকৃত গত ৩ দিনের মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। ছবির রং যে স্থানে যত গাড় সেই স্থানে গত ৩ দিন তত বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। লাল চার কোনা বক্সেরের মধ্যকার এলাকা হলও ভারতের বিহার ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্য; ঐ এলাকার সকল বৃষ্টির পানি গঙ্গা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফারাক্কা বাঁধে হাজির হবে এর পরে দাদা বাবুদের দয়াপরবশ হয়ে ফারাক্কার বাঁধের দরজা গুলো খুলে দিলে আপনারা পদ্মার পানিতে সাঁতার কাটতে পারবে। মালকোঁচা মেরে এখন থেকেই সাঁতার কাটার জন্য রেডি হয়ে থাকেন।
ছবি কৃতজ্ঞতা: আমেরিকার হাওয়াই রাজ্যে অবস্থিত Pacific Disaster Center
লাল বৃত্তের মধ্যে সিলেটের প্রতিবেশি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বর্ডারের কাছে সবচেয়ে গাড় বাদামি রঙের স্থানটা হলো চেরাপুঞ্জি। মনে করার চেষ্টা করেন তো ঐ নামটা জীবনে শুনেছেন কি না? মনে করার চেষ্টা করেন তো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় ঐ স্হানের নাম কি? রাজশাহী অঞ্চলে বন্যার পানি দেখার জন্য হয়ত আরও ৩/৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে। সিলেটের হাওর এলাকার মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। আগামী ১/২ দিনের মধ্যে।
শেষ করি উত্তরাঞ্চলের ৪ টি জেলায় (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ও নীলফামারী) মানুষদের আশার বানী শুনিয়ে। যদি নতুন করে ভারি বৃষ্টি না হয় (সম্ভাবনা একটু কম) তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বন্যার পানি সরে গেলে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাট দেখা দেয় তা হলও কলেরার প্রাদুর্ভাব। বোন-ব্রাদার যারা ডাক্তার আছেন; নিজেদের সুযোগ-সুবিধার কষ্ট লুকাইয়া হাঁসি মুখে দুর্গত মানুষগুলোর একটু সেবা করিবেন।
‘আইজ হামরা কোনো খাই নাই বাহে’
সিরাজগঞ্জে বন্যায় ২১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সঙ্গে জেলাটিসহ সারা দেশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ আজ সকাল আটটা থেকে বন্ধ হয়ে গেছে
ষাট বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুরে দূর্গত মানুষদের মন্তব্য "আশ্রয় নেই, ত্রাণও নেই"
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ৫: (১৭ ই আগষ্ট, রাত ১ টা)
====================================================
বন্যার ভয়াবহতা কি সরকার এখনও বুঝতে পারতেছে না?
বুঝতে পারলে তো পুরো একটা উপজেলার লাখের উপরে দুর্গত মানুষদের জন্য ৮০ হাজার টাকা; কিংবা এক উপজেলার ৩০ হাজার দুর্গত মানুষের জন্য ১০ হাজার কেজি (জন প্রতি ৩০০ গ্রাম) চাউল বিতরণ করতো না। পত্রিকার তথ্য মতেই এখন পর্যন্ত বন্যায় ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য গত ৪৮ ঘণ্টায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি পানিতে ডুবে ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। । মৃত মানুষের প্রকৃত সংখ্যাটি যে আরও বেশি সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
গত কয়েক দিন থেকে গণমাধ্যমে বিভিন্ন পানি প্রকৌশলী বাংলা লিংক দামে মন্তব্য করে যাচ্ছে বন্যা ১৯৮৮ সালের মাপের হবে না ১৯৯৮ সালের মানের হবে; বা ঐ দুইটার কোন টার ধারের কাছেও যাবে না। সেই Water resources engineers দের বলতে চাই বন্যার পানিকে যদি পাথরের তৈরি পাহাড়ের সাথে তুলনা করি; তবে গোটা একটা পাহাড় ধসে পড়ার দরকার নাই; পাহাড় হতে মাঝারি মানের (২০০-৩০০ মিটার ব্যাসার্ধের) একটা পাথ গড়িয়ে পড়লেও নিজের চলার পথে ঘড়-বাড়ি, গাছ-পালা সব কিছুই পিষে মেরে সামনের দিকে এগোতে থাকবে। পিছন দিকে থাকবে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন।
পানি প্রকৌশলী নিজেরাই বলতেছে বন্যা ১৯৮৮ সালের মাপের হবে না ১৯৯৮ সালের মানের হবে না; ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় ঢাকা শহরে ডুবে ছিলও অনেক দিন; দেশের প্রায় ৬০ % এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে ছিলও। তাদের প্রশ্ন করি ঢাকা শহরের আয়তন কতো? ইতিমধ্যে ২০ টি জেলা বন্যা আক্রান্ত। ঐ ২০ টি জেলার আয়তন কতো? কত মানুষ বাস করে? ঐ ২০ জেলার মানুষদের আর্থিক অবস্থা কেমন? বন্যা পরবর্তী তাদের নিজের পুনর্বাসনের সক্ষমতা কেমন? ঐ ২০ টি জেলার উৎপাদিত ধান ও শাক-সবজি ঢাকা শহরের কত % খাদ্যের যোগান দেয়?
সরকারি প্রতিষ্ঠান পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলতেছে যমুনা নদীর পানি গত ৬০ বছরে বিপদ সীমার এত উপরে দিয়ে প্রবাহিত হয় নাই। অন্যান্য নদী গুলো ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
অনেকেই নিজেদের পানি বিশেষজ্ঞ ও পানি প্রকৌশলী দাবি করতেছে; কিন্তু তারাই এবার প্রশ্ন করতেছে নদীতে এত পানি আসতেছে কোথা থেকে? তারা হয়ত বিজ্ঞান গবেষণায় প্রচলিত একটা কথা ভুলে গেছে; তাই আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই; Think outside the box; Look outside the Bangladesh border।
জানি আপনারা সেটা করবেন না; আপনাদের ক্যারিয়ার জীবনে নতুন করে পাওয়ার কিছু নাই; তাই আপনাদের নতুন করে কিছু জানার আগ্রহ নাই; শেখার ইচ্ছেও নাই। তাই আপনাদের প্রশ্নের উত্তরে নিচের কয়েটি মানচিত্র যোগ করে দিলাম। বাংলাদেশের নদীতে এত পানি কোথা থেকে আসতেছে সেটা নিজেই দেখে নিন। নিচের চিত্র গুলো প্রস্তুত করা হয়েছে বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সবচয়ে নির্ভুল কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA ও জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা JAXA এর Global Precipitation Measurement (GPM) নামক ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও অন্যান্য দেশের একাধিক কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ দ্বারা সংগৃহীত তথ্যের সাহায্যে।
৩ দিন পূর্বে বলেছি, আজকে আবারও মনে করিয়ে দেই সবাইকে, প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ও ৩০০-৫০০ কিলোমিটার প্রস্থের এলাকার উপর পতিত ১ মিটার উঁচু (৩ ফুট) পানি একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী গুলোর মধ্যমে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হবে। বাংলাদেশের নদী গুলোর ঐ ক্ষমতা নাই যে ঐ পরিমাণ পানি ১ সপ্তাহের মধ্যে প্রবাহিত করবে; বড় রকমের বন্যা ছাড়াই।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ৪ টি জেলা (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ও নীলফামারী), ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় ৪ দিন ধরে একনাগাড়ে প্রায় ১০০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এত অল্প সময়ে এত অধিক বৃষ্টিপাত ঐ সকল এলাকায় পূর্বে কোনদিন হয় নি (বাবা-দাদাদের জীবদ্দশায়)।
আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভাষার এই ধরনের ঘটনাগুলোকে বলা হয়ে থাকে Extreme Events। এই ধরণের ঘটনা গুলো গ্রামার মেনে চলে না। আর একটি সহজ উদাহরণ দেই বুঝার সুবিধার্থে। রাতের মেঘ মুক্ত আকাশের দিকে তাকালে সবসময়ই কিছু ধূমকেতু দেখা যায়। কিন্তু হ্যালির ধূমকেতু দেখা যায় প্রতি ৭৫ বছর পর-পর। এবারের বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ঘটনাটি ঐ হ্যালির ধূমকেতু দেখার মতোই ঘটনা। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা এই Extreme Events নিয়ে আগামী দিনে গবেষণা করবে নিশ্চিত করেই বলা যায়। এই বৃষ্টিপাতের কারণ জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণা ও তার ফলাফল প্রকাশ করা পর্যন্ত।
পানি বিশেষজ্ঞ ও পানি প্রকৌশলীদের অনুরোধ করছি, নদীর পানি কোথা থেকে আসতেছে সেই প্রশ্নের উত্তর জানা এখন গুরত্বপূর্ন না; এখন গুরত্বপূর্ন হলো যে মানুষরা ইতিমধ্যে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও বন্যার পানি বন্দি তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্হা করা; আর যে মানুষরা আগামী ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে যাচ্ছে তাদের জান ও মালের রক্ষার করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিন।
উপরে ৩ টি ছবি যোগ করা হলো বিভিন্ন রেজুলেশনে। এই ছবিগুলোতে স্থানের নামও আছে। ছবির রং যে স্থানে যত গাড় সেই স্থানে তত বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই ছবি বন্যার শুরু প্রথম ৪ দিনের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্দেশ করতেছে। এই ছবি গুলো দেখলেই বোঝা যাবে বন্যার পানি সামনের দিন গুলোতে কোন কোন জেলায় উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাষ মানচিত্রও সাক্ষ্য দিচ্ছে উত্তরাঞ্চলের ৪ টি জেলায় (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ও নীলফামারী) বন্যার প্রকোপ কমে আসা শুরু করেছে; ও ঐ ৪ টি জেলার ভাটির জেলাগুলোতে বন্যা শুরু হয়েছে; সময়ের সাথে যার প্রকোপ বাড়তে থাকবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: Pacific Disaster Center, বৃষ্টিপাতের তথ্য: Tropical Rainfall Measuring Mission (TRMM), (NASA's Level 3 Integrated Multi-Satellite Retrievals for GPM ( IMERG ) gridded product (7-day accumulated precipitation)
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৩ লাখ মানুষ
ফরিদপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াল রূপ নিয়েছে বন্যা
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারকান্দি-ভুয়াপুর সড়ক বাঁধটি আজ যমুনার নদীর পানির তোড়ে ভেঙে গেছে।
২৬ জেলার বন্যা পরিস্থিতি: বড় বন্যার আশঙ্কা, প্রস্তুতি কম
বন্যা মোটেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটা মানুষ সৃষ্ট রাজনৈতিক দুর্যোগ!!!
২২ জেলায় বন্যা মৃতের সংখ্যা শতাধিক
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ৬: (১৭ ই আগষ্ট, দুপুর ২ টা)
====================================================
কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্রে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের আকাশে বর্তমানে যে বায়ু আছে তাতে জলিয় বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টা বাংলাদেশের ভারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে দু-এক জায়গার অল্প বৃষ্টি হতে পারে।
কমলা ও হলুদ কালার নির্দেশ করতেছে শুষ্ক বাতাস (যত বেশি কমলা ও হলুদ তত বেশি জলিয় বাষ্প); নীল-সবুজ-লাল কালার নির্দেশ করতে আর্দ্র বাতাস (যত বেশি সবুজ ও তত বেশি জলিয় বাষ্প)। আকাশে জলিয় বাষ্প না থাকলে মেঘের সৃষ্টি হবে না; মেঘের সৃষ্টি না হলে বৃষ্টি হবে না। তবে সারা দিনে সূর্যের আলোর তাপে পৃথিবী পৃষ্ট থেকে পানি জলিয় বাষ্প হয়ে উড়ে গিয়ে দিনের শেষের দিকে কিছু মেঘের সৃষ্টি হতে পারে। তার ফলে রাতের বেলা কোন-কোন এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে।
বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগন্জ জেলায় বন্যা পরিস্হিতির অবনতি হতে পারে। পক্ষান্তরে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, ও নীলফামারীর বন্যা পরিস্হিতির উন্নতি হতে পারে।
অতঃপর প্রতীক্ষার অবসান করে পদ্মার পানি বাড়া শুরু করেছে ও আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ঐ দিকে উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো শুরু করেছে। ২১ শে আগস্ট অমাবস্যায় জোয়ারের পানি বন্যার পানি সমুদ্রে পতিত হতে বাঁধা প্রদান করবে। যমুনা ও পদ্মার মিলিত পানি ফরিদপুর, মাদারীপুর এলাকার মানুষ গুলোকে অনেক সাফার করবে বলে মনে হচ্ছে।
পানি বাড়ছে পদ্মার, হুমকিতে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ৭: (১৭ ই আগষ্ট, রাত ২ টা)
====================================================
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা দারুণ একটা বিভাগ চালু করেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার চলমান পরিস্থিতি জানার জন্য। যে কেউ নিজ এলকার বন্যা পরিস্থিতি ও ছবি পাঠাতে পারেন নিম্নোক্ত লিংকে গিয়ে। এই সংবাদটি শেয়ার সবাইকে জানান। তাদের আহবানটি নিম্নরুপ:
বানভাসি জীবন নিয়ে জানান
"পানিবন্দী জীবন কেমন যাচ্ছে? আপনার এলাকার কী অবস্থা? অনেক খবরই হয়তো জানা যায় না। কিন্তু আপনিই লিখে বা ছবি তুলে জানাতে পারেন সর্বশেষ খবর। সর্বোচ্চ ৩০০ শব্দের মধ্যে নিজ এলাকার অবস্থা জানিয়ে লিখুন।"
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ৮: (১৯ শে আগষ্ট, সকাল ৬ টা)
====================================================
The following image is taken by Japan's Space Agency's Himawari-8 satellite using a wavelength (Band 10 (7.3 µm)) sensitive to the content of water vapor in the atmosphere. Bright and colored areas indicate high water vapor (moisture) content (colored and white areas indicate the presence of both high moisture content and/or ice crystals).
সোজা বাংলা বলতে হয় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের আকাশে উচ্চ জলিয় বাষ্প যুক্ত মেঘ সঞ্চরণশীল ও বৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাব্য রয়েছে। তবে এক নাগাড়ে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে চিন্তার বিষয় এই যে বাংলাদেশে উত্তর-পশ্চিমে বক্ষমপুত্র অববাহিকায় নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে যমুনা নদীর পানি খুব দ্রুত বিপদ সীমার অনেক নিচে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
যেহেতু, আগামী ২১ শে আগস্ট অমাবস্যা; ফলে জোয়ারের পানি বন্যার পানিকে সমুদ্রে পতিত হতে বাঁধা প্রদান করবে। ফলে দেশের মধ্যাঞ্চলের চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম; নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় ফরিদপুর, মাদারীপুর এলাকার মানুষ অন্তত পক্ষে আগামী ১ সপ্তাহ অনেক সাফার করবে বলে মনে হচ্ছে।
অনেক আশান্বিত হচ্ছি এই দেখে যে বরাবরের মতো দেশের অনেক স্বেচ্ছা সেবী সংগঠন বিবেকের তাড়নায় এগিয়ে এসেছে বর্না দুর্গত মানুষদের সাহায্যার্থে। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ ঐ সকল স্বেচ্ছা সেবী সংগঠন, তাদের সাথে সম্পৃক্ত সেচ্ছাসেবী ও ঐ সকল সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকদের।
অবশেষে কিছু-কিছু মিডিয়ার ঘুম ভেঙ্গেছে বলে মনে হচ্ছে। ঐ সকল মিডিয়াকে ধন্যবাদ। তবে এখনও অনেক মিডিয়া আছে যাদের চামড়া গণ্ডারের চামড়ার চাইতেও পুরু ফলে গত ১২ ই আগস্ট থেকে চিমটি কেটে যাওয়ার পড়েও তাদে মস্তিষ্কে চিমটি কাটার অনুভূতি পৌছায় নি। এক কালের পরাক্রমশালী দৈনিক জনকণ্ঠ ও ভোরের কাগজের পরিণতি দেখেও যদি তারা শিক্ষা নিত তবে হয়ত সঠিক সময়েই বন্যা দুর্গত মানুষের দুর্দশার চিত্র প্রকাশ করত। কিন্তু প্রবাদে আছে ইতিহাসের সবচেয় বড় শিক্ষা হলও ইতিহাস থেকে সবাই শিক্ষা নেয় না।
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ৯: (১৯ শে আগষ্ট, দুপুর ১২ টা)
====================================================
বন্যা পরবর্তী সরকারের করনীয় নিয়ে সাহিত্যিক Shakoor Majid এর নিম্নোক্ত চিন্তাভাবনাগুলো সরকারকে ভেবে দেখার অনুরোধ
"একটা খুব খারাপ সময় আসছে বলে মন বলছে। দেশের কৃষিপ্রধান দুটো অঞ্চল (উত্তরাঞ্চল আর ভাটি এলাকা) এ বছর ফসলশূন্য হচ্ছে। কেবলমাত্র ধানফলানোর উপর যারা নির্ভর ছিল, আগামি একবছর তাদের চূলা কী দিয়ে চড়বে তারা কেউ জানে না। পেটের জ্বালা মেটাতে তারা পার্শ্ববর্তী শহরগুলো এবং ক্রমাণ্বয়ে বড় শহরে আসবে কাজের সন্ধানে। শহরে কাজ পাবেনা। বাড়বে অপরাধ। তারা ব্যবহার হবে নষ্ট রাজনীতির কাজে। দেশে উন্নয়নের জন্য শিল্প, কলকারখানা বাড়লে তাদের কাজ পেতে সুবিধা হত। সে সম্ভাবনা নাই। রাজধানী শহরে কিছু কাজের সুযোগ আছে বিবেচনায় বন্যাবিপর্যস্তদের ভিড়ে এই অতি অতি জনবহুল শহরে বাড়বে অযাচিত জনচাপ। এ নিয়ে সরকারকেই ভাবতে হবে।
প্রেসদেখানো দুর্গতসাহায্যের মলমমাখানো কর্মকান্ড কমিয়ে অনাগত দুর্দিন মোকাবেলার যথাযথ পদক্ষেপ নিন। না হলে বন্যা দুর্গতদের অভিশাপ থেকে কেউ মুক্তি পাবে না।"
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ১০: (২০ শে আগষ্ট, দুপুর ১২ টা)
====================================================
ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সকল ট্রেন চলাচল বন্ধ হইয়া গেছে
গ্রামের কিছু সাহসী মানুষের বদৌলতে ভাগ্যের জোড়ে বেঁচে গেছে নীলসাগর এক্সপ্রেসের প্রায় ৮০০ যাত্রী। ভাঙ্গা ব্রীজের ১০০ গজ সামনে গিয়ে ট্রেন থেমে গেছে।
"টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় পৌলী নদীর ওপরের রেলসেতুর একাংশের মাটি বন্যার পানিতে ধসে গেছে। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেলসেতুর কাছে নীলফামারী থেকে ঢাকাগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস, বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব স্টেশনে ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম স্টেশনে দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো জয়দেবপুর রেলস্টেশনে আটকা পড়ে আছে। "
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ১১: (২২ শে আগষ্ট, সকাল ১১ টা)
====================================================
বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে সরাজীবন কাজ করে যে মানুষটি কিংবদন্তি হয়েছে বাংলাদেশের মানুষদের কাছে সেই সাইখ সিরাজের ফেসবুক ওয়াল থেকে নিচের মন্তবটা কোট করলাম। বন্যা পরবর্তী কৃষক পুনর্বাসন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন।
"বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে সদ্য রোপন করা আমন ক্ষেত, সবজি ফসল, রোপা আমনের বীজতলা। ভেসে গেছে মাছের পুকুর, ঘের, গবাদিপশু। ২৬টি জেলার প্রায় অর্ধকোটি মানুষ হয়েছেন বহুমুখী ক্ষতির শিকার। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক যাতে আবারো আমন রোপনের প্রস্তুতি নিতে পারে সে সহায়তা নিয়ে প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ কৃষি বিষয়ক উন্নয়ন সংগঠন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি। দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে আসুন বন্যা কবলিত ও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াই।"
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ১২: (২৪ শে আগষ্ট, সকাল ১০ টা)
====================================================
"সাপে কাটার ফলে, পানিতে ডুবে প্রায় দেড় শ মানুষ মারা গেছে। দুর্যোগের আগাম তথ্য, মোকাবিলার পরামর্শ; প্রশাসন যদি তা জানাত, তাহলে ক্ষতি কমত। তথ্যও একধরনের ত্রাণ; তা বিতরণের দায়িত্ব কিন্তু কর্তৃপক্ষেরই। কিন্তু ত্রাণের মতো তা-ও বিরল।"
সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফের উপরোক্ত মন্তব্যটি ছিলও আমার এই পোষ্টের মূল বক্তব্য। পৃকৃতির সাথে আমরা যুদ্ধ করতে পারবো না; কিন্তু আমাদের পূর্ব-প্রস্তুতি জান ও মালের ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারবে হলফ করতে বলা যায়। বন্যা দুর্গত এলাকা ঘুরে কৃষক, গৃহহীন দিন-মজুর, বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলাদের মানবেতর জীবন-যাপন নিয়ে দারুণ একটা প্রতিবেদন লিখেছে দৈনিক প্রথম আলোতে। সবাইকে পড়ে দেখার অনুরোধ রইল।
বন্যা ‘আপনারা শুনপেন না, দ্যাখপেন না অবস্থা?’
বন্যা দূর্গত মানুষের সাহার্যার্থে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করে দারুন একটা লেখা
নিয়ম রক্ষার জন্য নির্বাচিত সরকারকে উন্নয়ন এবং মানুষের সুখ দেখিয়ে যেতে হয়। দেখাতে হয় কোনো প্রান্তিকতা নেই, দুর্যোগ নেই—সবাই সুখে-শান্তিতে দিনাতিপাত করছে। সবকিছু স্বাভাবিক। রাষ্ট্র তাই চায় কিছুদিন চোখ বন্ধ করে রাখতে, যেন এর মধ্যে বন্যার পানি নেমে যায়। এবং প্রান্তিক মানুষেরা আবার ফিরে যায় তাদের সাপ্তাহিক কিস্তির লুকিয়ে রাখা জীবনে, না খেয়ে মরে না যাওয়ার উৎসবে। কিন্তু রাষ্ট্র চোখ বন্ধ করে থাকলেই এই বন্যার্তদের দুর্দশা এখনো লাঘব হচ্ছে না। তাই উত্তরবঙ্গের এই বন্যাদুর্গত প্রান্তিক মানুষের আজকে আপনার সাহায্য প্রয়োজন।
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ১৩: (২৪ শে আগষ্ট, রাত ১১ টা)
====================================================
মানুষ হিসাবে নায়ক অনন্ত জ্বলিল অনেক মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন সেটা সে অনেকবারই প্রমাণ করেছে। অনন্ত জলিল সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যা কবলিত মানুষদের সহায়তা করতে অামি এসেছি। এটা কোনও দয়া নয়, এটা দুর্গত মানুষদের অধিকার।’
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অাব্দুর রাজ্জাক। তিনি জানান, অনন্ত জলিল চিলমারীর তিনটি ইউনিয়নের ২৪’শ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবেন। এরমধ্যে থানাহাট ইউনিয়নের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১১০০ পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করবেন। এছাড়াও রমনা ইউনিয়নের ৮০০ পরিবার এবং চিলমারী ইউনিয়নের ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেবেন অনন্ত জলিল।
বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ সহায়তা দিতে কুড়িগ্রাম পৌঁছেছেন চিত্রনায়ক ও ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল।
====================================================
বন্যা পরিস্থিতি আপডেট ১৪: (২৭ শে আগষ্ট, দুপুর ২ টা)
====================================================
বরাবরের মতো এবারের বন্যা পরবর্তী দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে সমাজের সাধারণ মানুষরা। নিজের চার পাশের মানুষদের দেখছি নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে ত্রাণ নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন দুঃস্থ মানুষের দার গোঁড়ায়। যেমন
১) কুমিল্লা জেলে স্কুলের এসএসসি ৯৪ ব্যাচের বড় ভাইয়েরা ত্রাণ নিয়ে হাজির হয়েছে জামালপুর জেলায়।
২) রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের এক বন্ধু ব্যক্তি উদ্যোগে নিজের পরিচিত সার্কেলে অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলায় ইতিমধ্যে কয়েক-শত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। আগামী মঙ্গলবার নীলফামারী জেলায় ২০০ মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করবে।
৩) আজকে দেখি বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে নীলফামারী জেলায়।
৪) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ত্রাণ বিতরণ করেছে নীলফামারী জেলায়।
৫) সিলেটের শাহাজালা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা অর্থ সংগ্রহ করতেছেন বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করার জন্য।
৬) ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমও নীলফামারী জেলায় ত্রাণ বিতরণ করেছে।
৭) ব্লগার নেক্সাস, সেলিম আনোয়ার সহ অনেক ব্লগার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করছেন দেশের বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের মাঝে।
৮) কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিরা ইতিমধ্যেই ১৩ হাজার ডলার সংগ্রহ করেছে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করার জন্য।
দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যার্থে সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসা দেখে
কবি চণ্ডীদাসের কবিতার ভাষায় বলতে হয়
“ সবার উপর মানুষ সত্য, তাহার উপর নাই ”
**********************************************************************************
পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে চলমান ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন কিংবা হ্যারিকেন থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে পরিচিত হউন ১ ডজন ওয়েবসাইট এর সাথে
**********************************************************************************
====================================================
চলমান বন্যা সম্পর্কিত সামু ব্লগে অন্যান্য ব্লগারদের পোষ্ট সংকলন:
====================================================
১) ব্লগার পুলক ঢালী এর "বন্যার পদধ্বনি"
২) ব্লগার হাসু মামা'র বাংলাদেশের বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির দিকে
৩) ব্লগার মো: হাসানূর রহমান রিজভীর "বন্যার প্রস্তুতি"
৪) ব্লগার সাহাবুব আলমের "আমাদের (দিনাজপুর জেলার বন্যা দূর্গত মানুষদের) সাহায্য দরকার"
৫) ব্লগার প্রামানিক ভাই এর বানের জলে যাচ্ছে ভেসে
৬) বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান।
৭) সামহোয়্যার ইন ব্লগের সহ ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
৮) একজন তানিশা এবং অনেকের গল্প
৯) বানভাসি মানুষ ভালো থেকো তোমরা
১০) বানভাসি মানুষ :: ঘুড়ি ত্রাণ সহায়তা ২০১৭
১১) মানুষ মানুষের জন্য
১২) প্রাণবিকতা
১৩) বানভাসি মানুষের পাশে জাতীয় ইমাম সমিতি গাজীপুর জোন
১৪) 20 worst floods in Bangladesh in one hundred years
১৫) মানবতার টানে.... (বন্যার্তদের সাহায্য করুন)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:২৩