প্রথমে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্তৃক ধর্ষিত হওয়া ও পরে সেই ক্ষমতাসীন দলের নেতার স্ত্রী ও তার কমিশনার বোন (যে নিজেও একজন ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী) কর্তৃক ধর্ষিতা ঐ মেয়ে ও তার মা এর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া নিয়ে সবাই কথা বলছি; কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে কাউকে কথা বলতে শুনলাম না; সেটা হলো ঐ মেয়টি ধর্ষকের খপ্পরে পরেছিল ও ধর্ষিত হয়েছিল কলেজে ভর্তির চেষ্টা করতে গিয়ে; পড়ালেখার সুযোগ চাইতে গিয়ে। গার্মেন্টস শ্রমিক মায়ের এস এস সি পাশ ঐ মেয়েটি চেয়েছিল কলেজে ভর্তি হয়ে শিক্ষিত হয়ে নিজের ও পরিবারকে ভবিষ্যতে আর্থিক ভাবে সচ্ছল করার জন্য।
সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম নির্যাতিতা ঐ মেয়ের মা একজন গার্মেন্টস কর্মী; বাবা রিক্সা ওয়ালা; ঐ মেয়ে এসএসসি পাশ করেছে নানার বাড়িতে থেকে। মেয়েটিকে কলেজে পড়ার সুযোগ করে দিতে তার মা ঢাকায় গার্মেন্টসের চাকুরী ছেড়ে বগুড়ার বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। যে কোন কারণেই হয়ত মেয়েটি কোন কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় নি; তাই তো ধর্ষকের সহযোগীদের কথায় রাজি হয়ে কলেজে ভর্তির ব্যবস্হা করে দিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতার দ্বারস্থ হয়।
রাষ্ট্র যদি এস এস সি পাশ সকল ছেলে-মেয়ের কলেজে ভর্তির ব্যবস্হা নিশ্চিত করত তবে আজকে ঐ মেয়েটিকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতার কাছে যেতে হতো না কলেজে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য; কলেজে ভর্তির কথা বলে ক্ষমতাসীন দলের ঐ নেতা মেয়েটিকে নিজ বাড়িতে ডাকতে পারত না।
সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ গুলোতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের অবৈধ উপায়ে স্কুল-কলেজ গুলোতে ভর্তির ব্যবস্হা বন্ধ করা সম্ভব না হলে তুফান সরকারের মতো ক্ষমতাসীন দলের হাজারো নেতা-কর্মীর হাতে অনন্ত কাল ধরে মেয়েরা ধর্ষিত হতে থাকবে; ধর্ষণের বিচার চাইলে ধর্ষিতা মেয়ে ও মায়েদের একই ভাবে মাথা ন্যাড়া করে লাঞ্ছিত হতে থাকবে। সরকারে ক্ষমতাসীন দলটি যদি আওয়ামীলীগের পরিবর্তে বিএনপি, জাতিয় পার্টি ও জামাতে ইসলামিও হয় দুঃস্থের দুর্বলতার (আর্থিক, শিক্ষাগত, শারীরিক শহ যে কোন প্রকার) সুযোগ নিতে ক্ষমতাসীন দলের হাজারো নেতা-কর্মীর অভাব হবে না এটা আমি হলফ করেই বলতে পারি।
ধর্ষক তুফান সরকার ২০১৫ সালে ছিলেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক। ঐ সময় দেড় হাজার বোতল ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার করে র্যাব-১২ বগুড়ার বিশেষ কোম্পানির সদস্যরা। নিজে ও নিজের বড় ভাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার বদৌলতে শাস্তি ভোগ না করেই জেল থেকে মুক্তি পান তুফান সরকার। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করলে যেমন বাবা-মা সন্তানকে পুরস্কৃত করে; একই ভাবে সফল ভালে ছোট অপরাধ করে হাত পাকানোর পুরষ্কার স্বরূপ ক্ষমতাসীন দলটি তুফান সরকারকে পুরস্কৃত করে বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক থেকে প্রমোশন দিয়ে পূর্ণ আহ্বায়ক (সভাপতি) পদে অধিষ্ঠিত করে। তুফান সরকার আবার নেমক (লবণ) খেয়ে নেমক হারামি করার মানুষ না। সে তার প্রতি দলের অধিক আস্থার পুরষ্কার দেয় দেশ ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা অপরাধ করে। আশা করছি এবারে জেল থেকে মুক্তি পেলে ক্ষমতাসীন দলটি তাকে শ্রমিক নেতাদের সর্বোচ্চ পদ যোগাযোগ মন্ত্রী পদ দিয়ে পুরস্কৃত করবেন।
বগুড়ায় দেড় হাজার বোতল ফেন্সিডিলসহ শ্রমিক লীগ নেতা গ্রেফতার
তুফান সরকারের মতো ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ধর্ষক হওয়ার সুযোগ করে দেয় রাষ্ট্র নিজেই; যে কোন উপায়ে ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য তুফান সরকারের মতো ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সকল অন্যায়ে চোখ বুঝে থাকে রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিরা; ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গুলোকেও নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করা থেকে চাপ প্রয়োগে বিরত রাখে রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তিরা। সেই সুযোগে ফ্রান্কেনস্টাইন হয়ে উঠে তুফান সরকারের মতো ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা; এবং তাদের কর্মই ক্ষমতাসীন দলটির ক্ষমতা হতে প্রস্থান নিশ্চিত করে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষমতার ইতিহাস বলে ইতিহাস থেকে কোন ক্ষমতাসীন দলই শিক্ষা নেয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:১০