কথিত আছে, 'রোম যখন পুড়ছিলো, রোমান সম্রাট পুড়ছিলও তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলও'।বাংলাদেশের একজন নাগরিক যখন কলোরেডোর রাজ্যের বোল্ডার শহরে বসে বৃষ্টিপাতের সঠিক পূর্বাভাষের উপর ট্রেনিং করছিল; তখন বাংলাদেশের রাজধানী বৃষ্টিতে ভাসছিলও
গতকাল কেয়ক জন ম্যাসেজ বক্সে অনুরোধ করছিল আবার কোন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলও কি না বঙ্গোপসাগরে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দেখে নিশ্চিত হলাম যে তখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় নাই; তবে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হচ্ছিল উপকূলীয় এলাকায়। কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশেষ করে জাপানের আবহাওয়া উপগ্রহ Himawari-8 থেকে প্রাপ্ত চিত্র (প্রতি ৩০ মিনিট পর-পর নতুন চিত্র পাওয়া যায়)। যে চিত্র প্রায় ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ নির্ভুল তথ্য দেয়। ঐ চিত্র দেখে তাদেরকে বললাম যে নিম্নচাপ এখনও ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয় না; তবে উপকূলীয় এলাকায় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হবে; সেই সাথে উচ্চ গতির বাতাস।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরও জাপানের আবহাওয়া উপগ্রহ Himawari-8 থেকে প্রাপ্ত চিত্র ব্যবহার করে। করে কি না জানি না তবে নিজেদের ওয়েবসাইটের এক কোনায় জাপানের আবহাওয়া উপগ্রহ Himawari-8 থেকে প্রাপ্ত চিত্র দেখানোর একটা লিংক করে রেখেছে। আল্লাহ মালুম; কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করার মতো যোগ্য কোন ব্যক্তি সেখানে আছে কি না। আজ থেকে ৩০ বছর পূর্বে যে ফরম্যাটে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দিত এই ২০১৭ সালেই সেই একই ফরম্যাটে আবহাওয়ার পূর্বাভাষ দেয়। এরা আবহাওয়া অফিসে বসে কি করে আল্লাহ মালুম। তাদেরই বা দোষ দেয় কি ভাবে? প্রতিবেশী তার উঠানে আম গাছ লাগিয়ে; প্রতিবেশীর কাছ থেকে আপনি যদি কাঁঠাল খাওয়ার আশা করে বসে থাকেন ও সিজন শেষ দেখেন প্রতিবেশী আম দিয়ে গেছে বাসায়, তবে বেক্কল কাকে বলা হবে আপনাকে নাকি প্রতিবেশীকে?
স্বাধীনতার ৪৬ বছরে পরেও বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া পদার্থ বিদ্যার উপর অনার্স বা মাস্টার্স প্রোগ্রাম খুলা হয় নাই (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বছর মাত্র অনার্স খুলা হয়েছে একজন মাত্র শিক্ষক দিয়ে; দূর্ভাগ্যজনক ভাবে যে শিক্ষকের নিজেরই আবহাওয়া পদার্থ বিদ্যার উপর কোন ডিগ্রী নাই)।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে আবহাওয়া-বিদ হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় পদার্থ, রসায়ন, ও পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে পাশ করা গ্রাজুয়েটদের। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের যে পরিচালক তার নিজেরই কোন উচ্চ ডিগ্রী নাই আবহাওয়া পদার্থ বিদ্যার উপর। কোন গবেষণা নাই; কোন পড়া-শুনা নাই; কোন উচ্চ শিক্ষা নাই; আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার পয়সায় প্রতি বছর বিদেশ ভ্রমণ; ফি বছরে প্রমোশন। তাহলে এরা পড়া শুনা করবে কেন? গবেষণা করবে কেন? প্রমোশনের জন্য তো উপরে বর্ণিত কোন যোগ্যতার দরকার নাই।
ফেসবুকে ঘুরে দেখেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের যে কর্মকর্তারা আছেন তাদের ওয়ালে আবহাওয়া বিষয়ে বছরে ১ টা করে পোষ্ট আছে কি না। একই সাথে লক্ষ করলে দেখবেন প্রত্যেকেই ট্রেনিং এর নামে প্রতিবছর কয়েকবার করে বিদেশ ভ্রমণ করে। এরা নিজেদের নামের সামনে বা পিছনে টাইটেল লাগায় আবহাওয়া-বিদ; কিন্তু উনাদের যদি আবহাওয়া পদার্থ বিজ্ঞানের খুবই প্রাথমিক কিছু বিষয় জিজ্ঞাসা করা হয় যেমন: Thermal Wind কি?, Ekman spiral কি?, Navier–Stokes equations এর কাজ কি? Coriolis force কি? এদের অনেকেই হয়ত উল্টা প্রশ্ন করে বসবে ঐ গুলা কি খায় না মাথায় দেয়?
আবহাওয়া পদার্থ বিদ্যায় মানুষের আর্জিত জ্ঞান এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ৩ দিনের পূর্বাভাষ প্রায় শতকার ৮০ ভাগ নিশ্চয়তাসহ করা যায়। ১/২ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাষ করা যায় প্রায় ঘড়ি-ঘণ্টা ধরে। আমেরিকা ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখে একটি কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে যার নাম Geostationary Operational Environmental Satellite system (GOES)-16। এই কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের পূর্বের নাম ছিলো GOES-R। এই কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করার পূর্বেই আমেরিকা টর্নেডোর পূর্বাভাষ করতে পারত প্রায় ১-২৪ ঘণ্টা পূর্বেই। বর্তমানে সেই সক্ষমতা বেড়েছে প্রায় ৫ গুন।
এই কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে পশ্চিম গোলার্ধের জলভাগের সকল ঘূর্ণিঝড় ও স্থল ভাগের severe thunderstorms (বর্জ্য বৃষ্টি) ও টর্নেডোর পূর্বাভাষ করা হচ্ছে। উপরোক্ত কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করার ১ দিন পূর্বে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এর সহযোগিতায় The University Corporation for Atmospheric Research (UCAR) নামক আবহাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহারের উপর ১ দিনের একটা ট্রেনিং দেয়। সৌভাগ্যক্রমে সেই ট্রাইনিং এ অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয় আমার।
UCAR নামক আবহাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি হলো বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান যা আমেরিকার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করেন ও স্নাতক ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ শিক্ষকদের জন্য উচ্চ প্রশিক্ষণের ব্যবস্হা করে থাকেন। আমি বর্তমানে "Advance Study Program (ASP) summer colloquium: 2017 - THE INTERACTION OF PRECIPITATION WITH OROGRAPHY (IPRO) নামক যে ট্রেনিং করতেছি সেই ট্রেইনিংএর আয়োজকও এই প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি হলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নামকরা আবহাওয়া বৈজ্ঞানিকরা। এই প্রতিষ্ঠানটি আবহাওয়া বিষয়ক অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমও পরিচালনা করেন COMET নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে; যে কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন পৃথিবীর যে কোন মানুষ। প্রশিক্ষন শেষে পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেটও অর্জনকরা যায়। সাধারণ বিজ্ঞান শিক্ষা ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই এই প্রতিষ্ঠানের ট্রেইনিং গুলোতে অংশগ্রহন করা যাবে।
ইউটিউবে ঢুকে যেমন সিনেমা-গান দেখতে পারেন বা হাল আমলের কেকা আপার ডেকো নুড়ুসের বিরিয়ানি রান্নার রেসিপি শিখতে পারেন একই ভাবে COMET নামক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ঢুকে একাউন্ট খুলে আবহাওয়া বিজ্ঞানের উপর ট্রেনিং নিতে পারে। যখনই সময় পাই আমি নিজেই এই সাইট থেকে আবহাওয়া বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করি।
বাংলাদেশে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া বিজ্ঞানের উপর প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষার ব্যবস্হা নাই। কিন্তু প্রবাদে আছে "ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়"। প্রশ্ন হলও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরে কর্মরত মানুষের শেখার ইচ্ছে আছে কি না?
পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে চলমান ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন কিংবা হ্যারিকেন থেকে জীবন ও সম্পদ রক্ষার্থে পরিচিত হউন ১ ডজন ওয়েবসাইট এর সাথে
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭