ছোটবেলায় অপেক্ষায় থাকতাম কখন ডাকপিয়ন এসে বাবার চিঠি দিয়ে যাবে।বাবা থাকতেন সেই চট্টগ্রামে আর আমরা যশোরে।
যে দিন ডাকপিয়ন এসে বাবার চিঠি দিয়ে যেত তখন মনে হত বাবাই যেন সশরীরে হাজির হয়েছেন।
আপু জোরে জোরে বাবার চিঠি পড়তেন আর আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতাম।খোকনকে আমার স্নেহ দিস।আর ওকে ভাল করে পড়তে বলবি।
এই পর্যন্ত পড়ে আপু বলতেন,দেখলি আব্বা তোকে ভাল করে পড়তে বলেছে যদি ভাল করে না পড়িস তবে তোর জন্য কিছু নিয়ে আসবে না।
আব্বা চিঠির মধ্যে নতুন দুই টাকা আর পাঁচ টাকার কয়েকটি নোট পাঠাতেন আমার জন্য।আমি সেই সব টাকা খুব যত্নে তুলে রাখতাম।সহজে সেই টাকা খরচ করতে চাইতাম না।পরে বাবা বাড়ি চলে এলে আমার বড় ভাই মাসে দু একবার চিঠি পাঠাতেন।আস্তে আস্তে সেই চিঠি আসাও বন্ধ হয়ে গেল।
বড় ভাই মোবাইল ব্যবহার করার পর থেকে আর চিঠি লিখতেন না।
আমার সেজ ভাই তখন কলমি বন্ধুত্ব করতেন।ওর কাছে মাসে দু-তিনটি করে চিঠি আসত।তা দেখে আমারও মন চাইত আমার নামেও চিঠি আসুক।
কিন্তু আমাকে লিখবে কে?আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি।কলমি বন্ধুত্ব করার জন্য অনেক ঠিকানা আছে এমন একটি ম্যাগাজিন পেলাম ভাইয়ার কাছে।
তারপর দুটি নাম পছন্দ করে চিঠি পাঠিয়ে দিলাম।আমার সেজ ভাইয়ের হাতের লেখা যেমন সুন্দর ছিল তিনি চিঠিও লিখতেন খুব সুন্দর করে।
বলতে গেলে চিঠি লেখা আমি উনার কাছ থেকেই শিখেছি।আমার কলমি যে কজন বন্ধু ছিল তাদের মধ্যে কায়েস আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিল।
অসাধারন সব চিঠি লিখত।আর হাতের লেখা ছিল খুব সুন্দর।আমি ওর মত করে চিঠি লিখতে পারতাম না।তাই মনে মনে দুঃখ পেতাম খুব।
এক সময় কায়েসও আমার কাছে চিঠি লেখা কমিয়ে দেয়, পরে একদম বন্ধ।
এর পরেও দুএকজনের সাথে কলমি বন্ধুত্ব হয়েছে আমার। নওগাঁর বন্ধু নীল ছিল তাদের ভেতরে অন্যতম।নীলের সাথে এখনও আমার যোগাযোগ আছে।
নীল একবার আমাকে অনেক বড় একটা চিঠি দিয়েছিল যে চিঠিটি পেয়ে আমি অবাক হয়েছিলাম।চিঠিটি এখনও আমার কাছে আছে।
দিন বদলের এই যুগে এখন কেই বা চিঠি লেখে।তারপরও মাঝে মাঝে মনে হয় সেই আগের দিনের মত করে আমার কাছে যদি কেউ চিঠি লিখত।
এখন যতটুকু লেখা হয় তা ভার্চুয়ালেই।
হলুদ খামে চিঠি আসার দিন শেষ! তাই এখন আর আমার কাছে চিঠি আসে না।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৪২