১। তাপসী,
বেশ আগে তোকে একটা হুমায়ূন স্যারের বই দিয়েছিলাম নাম ছিল 'হিমুর মধ্যে দুপুর' বইটা পড়ে প্রান খুলে হেসেছিলাম। অমন প্রান খুলে অনেক দিন হাসি না।এই মধ্যে দুপুরেই তোর কাছে লিখতে বসলাম।হুমায়ূন স্যার বইয়ের প্রথমে লিখেছিলেন,মধ্যে দুপুর বড়ই আশ্চর্যের সময় এ সময় ভুতে মারে ঢিল।জানিনা মধ্যে দুপুর আশ্চর্যের সময় কিনা তবে দুপুর সময়টা আমার কাছে একটু অন্য রকমই মনে হয়।আগে দুপুর গুলো বই পড়েই কাটত।আর এখন দুপুর কেমন সেটাই ভুলে গেছি।কর্পোরেট লাইফে মানুষ এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে যে নিজের অস্তিত্বকেই মাঝে মাঝে ভুলে যায়।তারপরও প্রিয় মানুষ গুলোর কথা মনের মাঝে গেথে থাকে সব সময়।আয়োজন করে মনে করা হয়না হয়তো কাউকেই।তারপরও কিছু মানুষের কথা আয়োজন করেই মনে করতে হয়।জানি তুইও আমার মত বই পড়তে অসম্ভব ভালবাসিস।আমার একটা শখ আছে,একটা আলাদা ঘর থাকবে আমার আর তাতে থাকবে বই আর বই।তখন তোর হয়তো বই পড়ার সময় থাকবে না।তুই হয়তো ব্যস্ত থাকবি ঘর সংসার নিয়ে।ভাবছি বুড়া হলে বুড়া কালটা পলান সরকারের মত কাটিয়ে দেব।তোর বাড়ির দরজায় গিয়ে হয়তো কোন এক দিন বলতে পারি,তাপসী বই রাখবি পড়ার জন্য?ভর দুপুরে লিখতে বসে প্রায় বিকেল হয়ে এল।কবির ভাষায় বলি-
বিকেলের রোদ প্রকৃতির গায়ে পড়েনি
তাই দুপুর এখনও সন্নিকটে।
ভর দুপুর গুলো তোর ভাল কাটুক।প্রতিটি দুপুর আশ্চর্য নিয়ে ধরা দিক তোর কাছে।
২। তাপসী,
নগ্ন জোসনায় কখনও স্নান করেছিস?কিরে নগ্ন কথাটা তোর চোঁখে একটু বাধল?নগ্ন মানেই যে খারাপ তা নয় বরং কিছু কিছু জিনিস নগ্ন না হলে তার আসল সৌন্দর্য চোঁখেই পড়ে না।থাক এ সব কথা,জানিস আমার না চাঁদের আলোয় ঘুরে বেড়াতে খুব ভাল লাগে।চাঁদের আলো গায়ে মেখে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে দূর কোন অজানায়।
আচ্ছা তুই কখনও বাইরের একটা মানুষকে ( যার সাথে রক্তের কোন সম্পর্ক নেই) ভালবেসেছিস?(যে কোন ধরনের সম্পর্ক)।আমি বেসেছি নিজের চেয়েও বেশি।মানুষ বলে নিজের চেয়ে নাকি অন্য কাউকে ভালবাসা যায় না।আমার কাছে এই কথাটি মিথ্যা মনে হয়।নিজের চেয়ে অন্যকে ভালবাসার মাঝে এক অদ্ভুত ধরনের সুখ আছে।এই সুখটা সেই উপলবদ্ধি করতে পারে যে নিজের চেয়ে অন্য কাউকে ভালবাসে।তবে এর মাঝে কষ্টটাই বেশি।তাই বলি নিজের চেয়ে অন্যকে কখনই ভালবাসবি না।ভাল থাকিস।নিজের লেখা একটা কবিতা দিয়েই শেষ করছি।
অভিব্যক্তি গুলি কখনই প্রকাশ করা হয়নি
তাই বোঝনি হয়তো কিছুই
তবু তোমার বিচক্ষনতা পরিমাপ করা
আমার জন্য চরম বোকামীই বলব।
কেউ মনকে প্রবোধ দেয় এই বলে
পাওয়াটাই জীবনের সব কিছু নয়
তবু মনে মনেই ডুবে মরে তারা।
প্রকাশ্য ডুবলে কারও চোঁখ পড়ত
মনের মাঝে ডুবলে দেখার কে আর থাকে?
তবু আগ বাড়িয়ে নিজের বিচক্ষনতাটুকু দিয়ে
একটু বোঝার চেষ্টা করেছিলাম তোমায়
হয়তো ওটাই ভুল ছিল
সবার ভুল গুলো আর এক নয়
কারও ভুল আবার ফুলও হয়ে যায়!
আমার বুঝি আর হলনা কিছু।
তারপরও কেন জানি অপেক্ষায় থাকি
তোমার বিচক্ষনতা দিয়েই বুঝে নেবে
আমার অভিব্যক্তি কি ছিল।
৩। তাপসী,
কেমন আছিস? লেখার সময় আমি অবশ্য অতটা ভদ্রতা দেখায় না।আর আজকাল কেমন আছ জানতে চাওয়াটা আমার কাছে আদিখ্যেতাই মনে হয়।তারপরও প্রিয়জনেরা কেমন আছে,তাদের একেকটা দিন কেমন কাটছে সেটা তো সকলেরই জানতে মন চাই।আমাদের যার যার স্থানে সবার দিন গুলোই কেমন জানি এক ঘেয়ে।এই আমি রোজ গেলে একই রুটিনে চলি।ইচ্ছে থাকলেও রুটিনের বাইরে যাওয়ার কোন রাস্তা দেখিনা।ভাল লাগাটা আজকাল মানুষের মাঝ থেকে উঠেই গেছে।সবার মুখে নড়ে চড়ে এক কথায় শুনি,কিছু ভাল লাগছে না।তারপরও সব ভাল লাগা এখনও হারিয়ে যায়নি।এই যে ভাল লাগছে বলে তোকে লিখছি।তুইও হয়তো লেখাটা ভাল লাগা থেকেই পড়বি।জীবনে কিছু কিছু কষ্টের কথা কখনও কারও কাছে শেয়ার করিনি।তবে বলতে ইচ্ছে করে কাউকে।কিন্তু বলার মত মানুষই তো পায় না।কিছু কিছু কথা শেয়ার করব তোকে।তোর ভাল লাগার রেশটা বেশিক্ষন স্থায়ী করতে পারলাম না।শেষে প্রিয় কবিতার দুটি লাইন আওড়াই-
আর না হয় যত্ন করে ভুলেই যেও
আমি না হয় ভুল করেছি
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে...হাসান হাফিজ।
৪। তাপসী,
কত কিছু ভুলে যেতে চাই জীবনে।কিন্তু যে বিষয় গুলি ভুলে যেতে চাই সে গুলি ভুলে গেলেও অগোচরে সুপ্ত মনের মাঝে গেথে থাকে।আর মাঝে-মাঝে সে গুলো মনে পড়লে মনটা এক রাশ বিষাদে ভরে ওঠে।যতই আমরা বলি না কেন মন খারাপ করব না তা কি আদৌ সম্ভব?মনের উপরে নিয়ন্ত্রন কজনের আছে বল।মনকে বশে রাখা অসম্ভব একটা কাজ।আজ কাল খুব একটা মন খারাপ হয়না আবার কারনে অকারনে মন খারাপ হয়।তবে আগের চেয়ে বুঝতে শিখেছি অনেক।বলতে পারিস ঠেকেই শেখা।ঠেকে হোক আর যাই হোক শিখেছি তো।বাঁচলে সামনে আরও শিখব।তুইও তো মনে হয় অনেক শিখেছিস।
আমার কাছে যে বিষয় গুলো ভিষন কষ্টের সেই একই বিষয় গুলি কারও কারও কাছে হাস্যকর।তাই কখনই মনের কষ্ট গুলি কারও কাছে বলা হয়নি।কাউকে বলেই বা কি লাভ?কেউ তো আর কষ্টের ভাগ নিবে না।জীবনে কিছু করিস আর না করিস কিছু মানুষ চিনে রাখিস।আর চিনে রাখা এই মানুষ গুলোর সাথে উপযুক্ত ব্যবহার করিস।
৫. তাপসী,
তুই বলেছিলি এখন থেকে ভাল থাকার চেষ্টা করবেন।আচ্ছা তুই বল চেষ্টা করে কি ভাল থাকা যায়?ভাল থাকা না থাকা তো সম্পূৃর্ন মনের ব্যাপার তাইনা।ভাল থাকার চেষ্টা করে যদি ভাল থাকা যেত তাহলে এই জাগতিক বিশ্বে বেশির ভাগ মানুষই ভাল থাকতো।তার পরও তোর কথা মতই ভাল থাকার চেষ্টা করি।মন খারাপ হলেই বই পড়ি না হয় গান শুনি।
জানিস আমিনা ভাল থাকার ভাল একটা উপায় পেয়েছি। উপায়টা হল কঠিন স্বার্থপর হওয়া।আমরা সকলেই কম বেশি স্বার্থপর।যারা স্বার্থপর বেশি তারাই জগতে সুখি বেশি।
,এখন দুপুর গুলো কি তোর আগের মতই কাটে নাকি ঘুমিয়ে কাটস? আমার দুপুর গুলি এখন ঘুমিয়েই কাটে।বই পড়াটাও আজকাল হয় না।
মানুষের সাথে এখন খুব একটা মিশি না।আর নতুন করে সম্পর্ক করা তো কবেই বাদ দিয়েছি,কারনটা তো তুই জানিস।কবির ভাষায় বলি-
সম্পর্ক মানেই যে সুখ তা নয়
কিছু কিছু সম্পর্ক
মনের যত অসুখেরও কারন হয়।
আমি জানি তুইও এখন আর নতুন করে কারও সাথে সম্পর্ক করিস না।ভাল থাকিস আজ আর লিখছি না।ও হ্যা শুনলাম তুই নাকি ভাল থাকার অভিনয়টা ভালই শিখেছিস?
শেষ পর্ব-
চিঠি গুলো পড়তে পড়তে তাপসীর চোঁখ কখন যে জলে ভরে উঠেছে তাপসী বুঝতেই পারেনি।এই চিঠি গুলি পড়ে তাপসী মনে যে সুখ পায় তা কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারবে না।চিঠি গুলো পড়ে তাপসী যেমন আনন্দ পায় আবার যখন তাপসীর মনে হয় এই চিঠির লেখক জাগতিক সব কিছুর উর্ধ্বে চলে গেছে তখন নিজের চোঁখের জলকে আর আটকে রাখতে পারে না।
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই হয়তো এক জন খুব প্রিয় মানুষ থাকে যে কাছে না থেকেও সব সময় ছায়ার মত কাছে থাকে।তাপসীও তার এই প্রিয় মানুষটাকে জীবনে খুব বেশি একটা কাছে পায়নি।তবে তিনি সব সময় ছায়ার মতই তাপসীর পাশে থাকতেন।তাপসী কত কিছু শিখেছে এই মানুষটির কাছ থেকে।সব চেয়ে যে জিনিসটি তাপসী বেশি ভাল শিখেছে সেটা হল,মানুষ চেনা!
খুব বেশি টাকা পয়সা ছিল না তাপসীর এই প্রিয় মানুষটির।তারপরও তাপসীকে সব সময় কিছু না কিছু দিতে চেষ্টা করতেন।একবার হুমায়ূন আহমেদের একটা বই উপহার দিয়েছিলেন।সেই বইয়ের একটা সাদা পেজে তিনি লিখেছিলেন,তাপসী অনেকের হয়তো বিশাল একটা মন আছে কিন্তু তার হয়তো কাউকে বিশাল কিছু দেবার ক্ষমতা নেই তাই তার বিশাল মনের বিশালতাও কারও চোঁখে ধরা পড়ে না।
তাপসীর এই প্রিয় মানুষটির মন ছিল আকাশের মত বিশাল।তাপসীর যখন খুব মন খারাপ হয় তখন তাপসী তার এই প্রিয় মানুষটির দেওয়া চিটি গুলো পড়ে।তাপসীর সাথে এই প্রিয় মানুষটির সম্পর্ক কি?না থাক তাপসী সেটা বলতে চাচ্ছে না।তবে এতটুকু তাপসী বলতে পারে এই মানুষটির সাথে তার রক্তের সম্পর্ক আছে!
হুট করেই একদিন তাপসী শুনতে পেল তার এই প্রিয় মানুষটি আর নেই।আত্বহত্যা করেছে তার এই প্রিয় মানুষটি।কারনটা তাপসী আজও জানে না।কত কথা শেয়ার করেছে এই প্রিয় মানুষটি তাপসীকে।আবার নিজের একান্ত কষ্টের কথা গুলি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছে।তাপসীকে একটা চিঠিতে এই প্রিয় মানুষটি লিখেছিল,তোকে আমার কষ্টের কথা বলতে চাই না তাহলে তুইও তো কষ্ট পাবি।
মৃত্যুর পরে তাপসীর এই প্রিয় মানুষটির ঘরে এক লাইনে লেখা একটা সাদা কাগজ পাওয়া গিয়েছিল তাতে লেখা ছিল - অভিমান বড় খারাপ জিনিস।
তাপসীর খুব জানতে ইচ্ছে করে কার উপর অভিমান করে তার এই প্রিয় মানুষটি পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছে।কিন্তু তা এখন আর সম্ভব নয়।
তাপসীর এই চিঠি গুলি পড়তে গিয়ে কখনই মনে হয় না যে তার প্রিয় মানুষটি এই পৃথিবীতে নেই।তাপসী মনে মনে বিশ্বাস করে তার প্রিয় মানুষটি আবার তাকে লিখবে।তাপসী অপেক্ষায় আছে তার প্রিয় মানুষটির চিঠির জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২১