বিকেলের প্রায় মৃত বুড়া সূর্যের হালকা আঁচে পিঠটাকে তাতিয়ে নিয়ে বসন্তের প্রথম কোন দিনের শেষবেলা ভালোই কাটে। সূর্যটা মরে যাক বা ঘুমে যাক বা আপাতত চলে যাক তা কোন সমস্যা না। সবই এক। এর ফলে পথের দূরত্বটা মোটেও কমবে না কিংবা পথের বাঁকটাও সোজা হয়ে যাবে না। ফলে সূর্যের পরিণতি যাই হয় হোক। আর একটা নতুন সূর্য কাল সকালে পাওয়া যাবেই। কোন সমস্যা নেই।
আসলে সমস্যার সৃষ্টি করে মানুষগুলো অথবা মানুষেরা। সূর্য, চাঁদ, পথ, পথের পাশের রোয়া ক্ষেত বা নারোয়া খটখটে ফাঁটা ক্ষেত কিংবা একটু একটু ঘাসময় সবুজক্ষেত যাতে ছেলেরা খেলছে অথবা পথের মোড়টা সেখানে মূলত: পথটা তিনদিকে চলে গেছে যার একটি দিক নদীর পাড় ঘেঁষে চলেছে এবং সেটি মেঠোপথ; আবার যেটি পিচঢালা বা যে পথটি ইট বিছানো অভিজাত হবো হবো করছে, এগুলো আসলেই এবং মূলত:ই কোন সমস্যা নয়। সমস্যাগুলো অন্যখানে। অন্যবিষয়ে। এই যে পথের মোড়টা, যেখানে পথটা বিভক্ত তিনভাবে তিনদিকে সেখানে যে বাঁশঝাড় যার মাথায় কত রকম পাখি ডাকছে উড়ছে বসছে আর একটু পরে সূর্যটার চলে যাওয়া বা মরে যাওয়ার পর ফিরে যাবে গাছে গাছে এগুলোও কোন সমস্যা নয়।
কিন্তু সমস্যাগুলো কি এবং কেন বা কোথা হতেই বা আসে? এই যে পথের মোড়ের যে দিকটা পিচঢালা অর্থাৎ অভিজাত হতে হতে এগিয়েছে সেও কিন্তু কিছুদূরে গিয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে এবং যথারীতি একটি অভিজাত আর অন্যটি অর্ধ-অভিজাত বা হবো হবো অভিজাত। ঠিক সে জায়গায় এই পিচঢালা পথটি ভাগ হয়েছে এবং একটি আর একটিকে ছেড়েছে ঠিক সেই জায়গায়ই একটি মসজিদ। বেশ সুন্দর। কোন একটি এনজিও-এর সাহায্য পুষ্ট এবং যথাসম্ভব পথটির মতোই অভিজাত। মসজিদটির অন্যপাশে অর্থাৎ যে দিকে হবো হবো অভিজাত পথটি চলেছে সে জায়গায় বা তারপাশেই একটি আধাছোট আধাবড় দোকান। টঙঘর। সোজা ভাষায় বলা যায় টংগী। টিনের বেড়া। চালও টিনের। দোকানের ভিতর ও বাইরে নানান রঙ বেরঙের কিংবা বাহারী পোস্টার। যেমন ধরা যাক অর্থাৎ পোস্টারগুলোর কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।
স্যাম্পল -১. সুন্দর সুন্দর মুখের শরীরের মেয়ে-ছেলের ছবিসহ আর কিছু লেখা বড় ছোট অক্ষরে অর্থাৎ সিনেমার পোস্টার। এতে আবার মারামারি বা ফাইটিং (সিমেনার ভাষায়); বন্দুক, ছুরি, দা, রক্ত অথবা সুন্দর ছেলে-মেয়েগুলোর জড়াজড়ির ছবিও আছে। কিংবা নাচের মুদ্রাসম্বলিত দুএকটি ছবি যাতে মেয়েগুলো অর্ধ বা প্রায় ন্যাংটা।
স্যাম্পল-২. সাদা কাগজে লাল-কালো কালিতে কিছু লিখা। যার ভাষা এরকম - ইসলাম দরদী বন্ধুগণ; আসছে আগামী ১২ রবিউল আউয়াল.... হিজরী, ১৩ ফাল্গুন.... বাংলা, ২৬ ফেব্রুয়ারি.... তারিখে গাড়ারোডস্থ তিনমাথা মোড় সংলগ্ন খোলা মাঠে এক বিরাট ইসলামী জলসার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ওয়াজ ফরমাইবেন পীরে কামেল হযরত মাও: এনায়েত উদ্দিন নূরে সাঁই কেবলা কদমপুরী সুলতান মোহাঃ রাজীবুল ইসলাম (রহ। এতে দলে দলে উপস্থিত হয়ে দুজাহানের কামিয়াবী হাসিল করুন।
স্যাম্পল - ৩. দেশ আজ শংকিত।
জাতির বুকে আজ শকুন....
জনগণ জেগে উঠুন।
জাতীয় কনভেনশন। স্থান- ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
তারিখ : ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি....
উদ্ভোধক : মাননীয়া দেশনেত্রী।
দেশকে রাজাকার ও জালিম সরকারের হাত থেকে বাঁচান।
- এই পোস্টারটির কালার কম্বিনেশন আর কাজ বেশ ভালো।
স্যাম্পল- ৪. আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি .... ঐতিহাসিক মোক্তারপাড়া মাঠে এক বিরাট জনসভা। এতে ভাষণ প্রদান করবেন জননেত্রী, জনগণের নয়নমণি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। উক্ত জনসভায় দলে দলে যোগদান করুন ও দেশকে বিক্রির ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন।
- এ পোস্টারটির মুদ্রণও বেশ ভাল।
এছাড়াও আরও অনেক ছোট বড় ও হাতের লেখা পোস্টার আছে দোকানটিতে।
তবুও সমস্যার বিষয় কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এরকম অন্যান্য দোকান থেকে এ দোকানের একটি ব্যতিক্রম পাওয়া গেল যা হল দোকানে কোন মাইক- টেপরেকর্ডার বা কোন রেডিও নাই। ধারণা করা যেতে পারে পাশের মসজিদটিই এর বড় প্রতিবন্ধক। এটাকে যদি একটা সমস্যা বলে ধরা যায় - না, না এটাকে সমস্যা বলা যাবে না। কারণ একে যদি সমস্যা বলে ধরা হয় তাহরে প্রকারান্তরে মসজিদকে দোষারোপ করা হয়। আর মসজিদকে দোষী করে আর যাই হোক পাপের বোঝা বাড়িয়ে পাপি হওয়া যাবে না। এমনিতেই সমস্যা খুঁজতে গিয়ে সমস্যা না পেয়ে সে সমস্যার সৃষ্টি তারপরে আবার পাপি, নাউযুবিল্লাহ।
বরংচ সেই পথের কাছেই ফিরে আসা যাক। সেই যে, পথের অভিজাত অংশটা যেখানে এসে দুই ভাগে ভাগ হল আর যার একটা অভিজাতই রইল সেটা কিছু দূর গিয়ে নদীর মুখোমুখি এবং সেই অভিজাত বেশেই নদীপাড় অর্থাৎ পাকাব্রিজ। নদী পেরিয়ে পথটি শহরের খোঁজে রাজধানীর খুঁজে আরও আরও বেশি অভিজাত হতে হতে নদী ঘেঁষে কিংবা না ঘেঁষেই ছুটল। আর সেই যেখানে মূল মানে পথের মোড় যেখানে পথটি তিনভাগে চলেছে তার যেটি মেঠোপথ; যেটি নদীর পাড় ঘেঁষে আগেই চলেছিল সেটি কিন্তু অভিজাতটির সাথে মেশেনি। রয়ে গেছে নদীর এপাড়ে। অভিজাত পথটি পাকাব্রীজ দিয়ে নদী পেরিয়ে ওপাড়ে। মেঠোপথটি দেখে অভিজাত পথটির বুক চিরে চলে যায় বাস-ট্রাক কত কত বড় বড় কি কি! আর তার বুকে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে চলে কিছু মানুষ। মাঝে মাঝে দুএকজন সাইকেল নিয়ে চলে। তাতে কিন্তু কোন সমস্যা নেই। কারণ মাঝে মাঝেই সূর্যের ঘুমে যাবার বা মরে যাবার বা চলে যাবার সময়ে অনেকেই আসে প্রিয়ামানুষের সাথে নদীর কাছে এবং তা এই মেঠোপথেই কিছু অদ্ভূত লোক হয়তো কবি-টবি তারাও আসে একা-উদাস নদীর পারে তাও এই মেঠো পথেই।
আর অভিজাত পথ তার সাথীদের নিয়ে ছুটছে বেদম-যাদের সাথে পাল্লা দিতে সময়ও হাঁপিয়ে উঠে বা হাঁপিয়ে মরে।