somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটি কথাঃ অপেক্ষা ২ - রেদোয়ান মাসুদ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



“কিছু চোখ তোমার দিকে বাকা নজরে তাকাবে
কিছু হৃদয় তোমাকে আপন করে নিতে চাইবে
আর কিছু কন্ঠ তোমাকে মধুর সুরে ডাকবে।
তাই বলে তুমি সবার দিকে তাকাতে পারো না,
সবার হৃদয়ের সাথে হৃদয় মিলাতে পারো না
সবার কন্ঠে কন্ঠ দিতে পারো না।
তোমাকে এমন একজনকে বেছে নিতে হবে
যে তোমার চেহারা দেখে ভালোবাসে না
ভালোবাসে শুধু তোমার হৃদয় দেখে”।

ভালোবাসার রং কি? কেউ বলে লাল, কেউ বলে নীল, কেউ বলে কালো আবার কেউ বলে ধুসর। আবার আমরা যখন ভালোবাসা বা লাভ আঁকি তখন লাল রং ব্যবহার করি। তাহলে আসলেই কি ভালোবাসার রং আছে? মানে ভালোবাসার রং তাহলে লাল? আসলে বিষয়টা সেরকমও না। ভালোবাসার কোনো রং নেই। কারণ ভালোবাসা দেখা যায় না। এটা হৃদয়ের মধ্যে থাকে। আর এটাকে হৃদয় দিয়েই অনুভব করতে হয়। আর সত্যি সত্যিই যদি ভালোবাসার রং থাকতো তাহলে ভালোবাসার কোনো মূল্য থাকতো না। তাহলে রং দেখেই মানুষ ভালোবাসত। কারো হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের ভালোবাসা হতো না। আর তার নাম হয়তো ভালোবাসা না হয়ে অন্য কিছু হতে পারতো।

এখন প্রশ্ন হলো ভালোবাসার রং না থাকলে আমরা কীভাবে বুঝবো কোনটা আসল ভালোবাসা আর কোনটা নকল ভালোবাসা। হ্যা প্রশ্ন এখানেই, আর এজন্যেই ভালোবাসার কোনো রং নেই। আর এজ্যন্যই পৃথিবীতে ভালোবাসা শব্দটির এত মূল্য। হৃদয় থেকে হৃদয়ের বন্ধন। কিন্তু কার হৃদয়ে কি আছে তা আমরা জানি না। আর এ কারণেই বেশিরভাগ ভালোবাসা একসময় পচাবাসায় পরিনত হয়, মানে ভেঙ্গে যায়। আমরা সাধারণত ভালোবেসে বিয়ে হওয়াকে বলি ভালোবাসার সার্থকতা। আসলে কি বিষয়টা তাই? এখানে প্রশ্ন এসে যায় বিয়ের পরতো ভালোবাসার বিয়েই বেশি ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাহলে সেটাওতো ভালোবাসার সার্থকতা হলো না। আসলে ভালোবাসার সার্থকতা বিয়ে হওয়ার মধ্যেও নেই। তাহলে ভালোবাসার সার্থকতা কোথায়? ভালোবাসার সার্থকতা আসলে মনের মধ্যে। আবার সার্থকতা দিয়ে কখনও ভালোবাসা হয় না। আসলে ভালোবাসা হচ্ছে নিঃস্বার্থভাবে কাউকে ভালোবেসে যাওয়া।
যেমন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, আমি যে তাকে ভালোবাসি তা ওর রূপের জন্যও নয়, গুণের জন্যও নয়। ভালো না বেসে থাকতে পারি না বলে বাসি। আর হ্যা এটাই হচ্ছে ভালোবাসা। কবি হেলাল হাফিজ বলেছেন ভালোবাসা মিলনে মলিন হয়, বিরহে উজ্জ্বল। ভালোবেসে যখন বিয়ে হয়ে যায় তখন আমরা আসলে ভালোবাসার মূল্য বুঝি না। যখন আমরা কাউকে পেতে চাই কিন্তু পাই না, তখন বুঝি ভালোবাসাটা আসলে কি জিনিস। এর মূল্য কত।

একটু আগে বলেছিলাম ভালোবাসার কোনো রং নেই। বিষয়টা এরকমও নয়। ভালোবাসারও একটা রং আছে। কিন্তু আমরা কখন বুঝতে পারি ভালোবাসার রং আছে? যখন আমরা কাউকে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলি তখন বুঝি আসলে ভালোবাসার রং কি, কত প্রকার ও কি কি। হয়তো তখন অনেকে মেঘলা আকাশে তাকিয়ে ভালোবাসার রংকে মেঘের মতো কালো ভাবি, আবার খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে নীল ভাবি, চোখের জ্বলে ধুসর ভাবি, আবার কখনও হৃদয়ের রক্তক্ষরণে ভালোবাসাকে লাল ভাবি। তবে যে যাই ভাবি না কেন ভালোবাসার রং বিরহতেই বুঝা যায় মিলনে না।


এখন প্রশ্ন হলো আমরা প্রকৃত ভালোবাসার মানুষকে কীভাবে খুঁজে নেবো অথবা কীভাবে বুঝব কে প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ আর কে প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ না? ঐ যে ভালোবাসার শুরুতে কোনো রং নেই তাই প্রকৃত মানুষ চেনা খুবই দুরহ ব্যাপার। আর যে পেয়েছে সেই প্রকৃত ভাগ্যবান। তারপরও বলব প্রকৃত ভালোবাসার মানুষ চেনা যায় কিন্তু আমরা তাদের কোনো মূল্য দেই না। ইদানিং ফেসবুকে কিছু ভালোবাসার ছবি প্রায়ই ভাইরাল হচ্ছে। যেমন কোনো এক ছেলের হাত পা নেই অথচ একজন হাত পা ওয়ালা সুন্দরী একটা মেয়ে তাকে বিয়ে করেছে। দুজনের মুখই উজ্জল, সুন্দর হাসি। কারণ তাদের ভালোবাসা মনের মধ্যে, বাইরে নয়। আমরাতো তাদের ছবি শেয়ার করে লিখি, ইশ কত ভালোবাসা তাদের মধ্যে! কিন্তু এটাও আমাদের একটা বাহ্যিক বহিঃপ্রকাশ। আসলে ঐ ছবি দেখে আমরা কিছু শিক্ষা নেই না জাস্ট সাময়িক সময়ের জন্য আবেগাফ্লুতো হই। একটু পরেই ভুলে যাই।

একজন প্রতিবন্ধী মেয়ে বা ছেলেকে বিয়ে করলেই যে আপনি প্রকৃত ভালোবাসা পাবেন বিষয়টা সেরকমও না। আসলে কারো মন যদি পরিস্কার হয় তাহলে আপনি কেবল প্রকৃত ভালোবাসা পাবেন। আর তার জন্য আপনার মনও পরিস্কার হতে হবে। শুধু আপনি প্রকৃত ভালোবাসা খুঁজবেন আর নিজে পরিস্কার হবেন না তাহলেও সেখানে প্রকৃত ভালোবাসা হবে না। প্রকৃত ভালোবাসা বা সুখ সেখানেই থাকে যেখানে দুজন মানুষই প্রকৃত।

চারিদিকে আসলে কালো মনের মানুষের ছড়াছড়ি হয়ে যাওয়ায় প্রকৃত মানুষ খুঁজতে গিয়ে আমরা বিভ্রান্ত হই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা প্রকৃত মানুষের কোনো মূল্য দেই না। আমাদের সমাজে সহজ সরল ভালো মানুষগুলোকে আমরা বলদ ভাবি। তাই প্রকৃতপক্ষে আমরা আসলে ভালোমানুষ খুঁজি না। যেমন হুমায়ুন আহমেদ বলছেন, ‘মানুষের জন্মই হইল অপাত্রে ভালোবাসা দান করার জন্য। যাদের কে ভালোবাসার কোন যোগ্যতা নাই তাদেরকেই মানুষ ভালোবাসে’। হ্যা এটাই সত্য। ভালো মানুষগুলো আসলে এত অভিনয় করতে পারে না। আর ভালোবাসা হওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা অভিনয় করতে হয়। আর এজন্যেই হয়তো বেশিরভাগ ভালোবাসা একসময় ডাস্টবিনে গিয়ে পরে। তারপরও বলব আবেগে পরে কেউ ভালোবাসবেন না। ভালোবাসাটা আসলে ‘ভালোবাসি’ বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। ভালোবাসা হওয়ার পরেই ভালোবাসার ক্রিয়া শুরু হয়। আর সেটা যদি টিকিয়ে রাখতে না পারেন তাহলে তাকে আর ভালোবাসা বলা যায় না। অনেকেই বলে থাকেন অনেক কষ্টে তাকে পেয়েছি কিন্তু দেখা যায় কয়েকদিন পরেই সে ভালোবাসা আবার ভেঙ্গে যায়। আসলে ভালোবাসা হওয়া যত সহজ কিন্তু ভালোবাসা টিকিয়ে রাখা এত সহজ না।

“অপেক্ষা” উপন্যাসটি আসলে তরণদের উদ্দেশ্যে লেখা। “অপেক্ষা ১” এ তরুণদের উদ্দেশ্যে সেই কথাগুলো বলে ফেলেছি। বলার আসলে শেষ নেই। আশাকরি “অপেক্ষা ১” পড়ে আপনারা সেই কথাগুলো রপ্ত করেছেন। আর যারা এখনও নিজদেরকে সামলে নিতে পারেন নি তাদের উদ্দেশ্যে আবারো বলব, ভালোবাসার পিছনে না ঘুরে বইয়ের পিছনে ঘুরুন। দেখবেন একসময় ভালোবাসা আপনাদের পিছনে ঘুরবে।

রেদোয়ান মাসুদ
১০ কার্তিক ১৪২৫
সেন্ট্রাল রোড,ধানমন্ডি-ঢাকা

উপন্যাস #অপেক্ষা ও #অপেক্ষা_২
#অনিন্দ্য_প্রকাশ, #প্যাভিলিয়ন_৩, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৫২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×