somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেখ হাসিনার দেশে ফেরা

২২ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনটি ছিল রবিবার। একাশি সালের সতেরোই মে। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি আপনাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ তাঁর পিতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তিনি স্বদেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন। তিনি, এই দেশের কোটি কোটি মানুষের মুক্তির শ্রেষ্ঠ মুখ—শেখ হাসিনা, যদি ৩৫ বছর আগে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন না করতেন তবে আজ আমরা কিছুতেই এই সমৃদ্ধির উত্তরণে এগিয়ে চলা বাংলাদেশকে পেতাম না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বিবিসি তার সংবাদভাষ্যে ’৮১ সালের ১২ জুন বলেছে—তাঁর পিতার নৃশংসতম মৃত্যুর পর বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন নিঃসন্দেহে একটি বড় ব্যাপার। এই সাহস সম্ভবত তিনি অর্জন করেছেন তাঁর পিতার কাছ থেকে।
কার্যত স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনা স্বকীয় প্রতিভাগুণে এই দেশ ও জাতির মহানায়কের আদর্শকে প্রবলভাবে পুরো জাতির মনে পুনরায় জাগিয়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধুমতি নদীর তীরবর্তী ঐতিহ্যবাহী জনপদ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সবুজ আচ্ছাদিত মধুমতি ও বাইগার নদীতীরে কেটেছে তাঁর উচ্ছল শৈশব। ১৯৫৪ সালে যখন তাঁর বয়স মাত্র সাত বছর তখন তিনি বাবার সঙ্গে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন। সেই বছরই যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬১ সালে শেখ হাসিনা বাবা-মার সঙ্গে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বসবাস শুরু করেন। এ সময় তাঁর সংগ্রামী পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তত্কালীন পাকিস্তানি শাসকরা গ্রেফতার করে। মায়ের স্নেহেই তিনি এসব প্রতিকূল পরিবেশে সততা, ত্যাগ এবং রাজনৈতিক দৃঢ়তা নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকেন। ১৯৬২ সালে তিনি ঢাকার আজিমপুর গার্লস স্কুলের ছাত্রী। এ সময় কুখ্যাত হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট দিলে সারাদেশ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। ১৯৬৬ সালে বেগম বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে শেখ হাসিনা সহ-সভাপতি পদে বিজয়ী হন। এ বছরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার ঘোষণা দেন। তিনি ছয় দফার পক্ষে রাজপথে সোচ্চার হন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ইতিহাসের নৃশংসতম নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায় বাঙালিদের উপর। অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের অন্তরীণ করে নিয়ে যাওয়া হয় ধানমন্ডির একটি বাড়িতে। সেই বাড়িতেই তিনি পরিবারের সবার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস অন্তরীণ ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা দামাল ছেলেরা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মুক্ত করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ তিনি স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে পশ্চিম জার্মানিতে যান। সঙ্গে নিয়ে যান তাঁর আদরের ছোট বোন শেখ রেহানাকে। একারণে পঁচাত্তরের কুখ্যাত ১৫ আগস্টে প্রাণে বেঁচে যান তাঁরা দুই বোন। পরবর্তীকালে সামরিক শাসনের যাঁতাকলে যখন দিগ্ভ্রান্ত আওয়ামী লীগের কোটি কোটি ভক্ত শুভান্যুধায়ী, তখন ১৯৮১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দলের কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধুকন্যা সামরিক শাসক জিয়ার অগণতান্ত্রিক স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এরপর শুরু হয় তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী রাজনৈতিক জীবন।
১৯৯০ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মিত্র দলগুলো সর্বাধিক ভোট পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়নি। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে দুই দশক পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শত বছরের ইতিহাসে এসময় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। শিল্পে আসে গতি। দারিদ্র্যসীমার নীচের মানুষদের বাঁচাতে নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ। পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাতিল হয় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। শুরু হয় উন্নয়নের নবতর ধারা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট নিকৃষ্ট-নৃশংস গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যা করার চেষ্টা করা হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে। অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বহু প্রতীক্ষিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে।
দেশ আজ কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদ্যুত্ উত্পাদন ১০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। শিক্ষায় এসেছে গতি। শেষ করেছেন জাতির জনকের হত্যা মামলা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বিচারের রায় বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বে আজ বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আজ ভাবলে গা শিউরে ওঠে—’৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে ফিরে না আসলে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ পাকিস্তানের মতোই একটি ব্যর্থ ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হতো।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই নেত্রী ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশে উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের মতো আলো ছড়াচ্ছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×